× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বলেছেন, এই প্রকল্পে তার এবং তার পরিবারের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গতকাল রাজধানীর হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে তার পরিবার ও স্বজনদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরে আমার ক্রয়সূত্রে কোনো জমি নেই। পৈতৃক সূত্রে থাকতে পারে। আমার কাছে থাকা তথ্য-প্রমাণ থেকে বলতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই জায়গায় আমার বা পরিবারের কারও জমি নেই। রাজনৈতিক কোনো সহকর্মীর জমি থাকতে পারে। তবে অন্য কেউ দুর্নীতি করেছে কিনা, তা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও জানান তিনি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জমির মূল্য নির্ধারণ জমির মালিকের করার সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসনই উভয় প্রাক্কলন তৈরি করেছে।
স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। উক্ত আইন অনুযায়ী ৪ ধারার নোটিশ জারির পূর্ববর্তী ১২ মাসে সম্পাদিত সকল দলিল বিবেচনায় নিয়ে গড় মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী প্রথম প্রাক্কলন দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ৪ ধারার নোটিশ জারির পূর্ববর্তী ১২ মাসের সম্পাদিত সকল দলিলের গড় মূল্যের পরিবর্তে ১৮২টি দলিলের মধ্যে ১৩৯টি দলিল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ৪৩টি দলিলের সর্বনিম্ন মূল্যের গড় মূল্যকে বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় প্রাক্কলনটি প্রস্তুত করা হয়, যার মূল্য দাঁড়ায় ১৯৩ কোটি টাকা। আইনে ৪ ধারার নোটিশ জারির পূর্ববর্তী ১২ মাসের গড় মূল্যের ভিত্তিতে বাজার মূল্য নির্ধারণের বিধান থাকা সত্ত্বেও ৪ ধারার নোটিশ জারির পূর্ববর্তী ৩ বছরের গড় মূল্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়, যা আইনসিদ্ধ নয়। জেলা প্রশাসন কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির প্রথম প্রাক্কলনকৃত মূল্য ৫৫৩ কোটি টাকা যা জমির মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার কারণে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক দ্বিতীয় পর্যায়ে গঠিত কমিটির প্রাক্কলনকৃত মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা যা বাজার মূল্য বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বলা হচ্ছে পূর্ববর্তী প্রাক্কলনে বাজার মূল্যের ২০ গুণ বেশি দাম ধরা হয়েছিল। ১৯৩ কোটি টাকার ২০ গুণ গণিতের কোন নিয়মে ৫৫৩ কোটি টাকা হয় তাও বোধগম্য নয়।
ডা. দীপু মনি বলেন, চাঁদপুর জেলার কোথাও ক্রয়সূত্রে কোনো জমির মালিকানা নেই। অর্থাৎ আমি কখনোই চাঁদপুরে কোনো জমি ক্রয় করিনি। আমার পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো জমি উক্ত অধিগ্রহণ এলাকায় নেই। কাজেই জমির মূল্য থেকে তাদের লাভবান হওয়ার বা অনৈতিক কোনো সুবিধা গ্রহণেরও কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না।
ডা. দীপু মনি বলেন, আমার বড় ভাই চিকিৎসক ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে নদীর পাড়ে হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর বহু পূর্ব থেকেই অল্প অল্প করে জমি ক্রয় করেছিলেন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা ২টি স্থানের মধ্যে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের স্থানটি চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে তিনি রেজিস্ট্রার্ড দলিলমূলে ক্রয়কৃত সকল জমি হস্তান্তর করে দেন। কারণ তার ক্রয়কৃত জমি অধিগ্রহণ করা হলে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন যা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো জায়গায় কোনো উল্লেখযোগ্য স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের পূর্বেই বহু মানুষ উক্ত স্থানে বা তার আশেপাশে জমি কিনে থাকেন বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেন। তা কখনো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য, কখনো বড় বা ভালো কোনো স্থাপনার কাছে থাকার জন্য। চাঁদপুরের কেউ একইভাবে লক্ষ্মীপুরে জমি কিনে থাকতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণের নিমিত্তে নির্ধারিত জায়গায় কে বা কারা জমি ক্রয় করেছেন বা করছেন তা আমার জানবার কথা না। শুধুমাত্র আমার বড় ভাইয়ের হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের জন্য ক্রয়কৃত এবং অধিগ্রহণের পূর্বেই হস্তান্তরকৃত জমির বিষয়ে আমি অবহিত ছিলাম। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দ্বিতীয় দফায় আরও ২২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব সংবলিত নথি আমার কাছে উপস্থাপিত হলে, আমি সে প্রস্তাব নাকচ করে দেই। নথিতে লিখে দেই, চাঁদপুর নদী ভাঙনকবলিত এলাকা হওয়ায় সেখানে জমি অপ্রতুল। এ ছাড়া একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৬২ একর জমি, যা ইতিমধ্যে অধিগ্রহণের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে, তাই যথেষ্ট।
এ ছাড়াও অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নিমিত্তে অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত স্থানটি অনুপযুক্ত এবং ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্ধারণের জন্য যে বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেয়া হয় তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বেশি দূরে না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে আশেপাশের জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন ভালো থাকে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় যেন কোনো হাইওয়ে সড়কের পাশে না হয়, তার অন্যতম কারণ প্রায়শ দেখা যায় কোনো ছাত্র অসন্তোষ দেখা দিলে ছাত্ররা হাইওয়ে অবরোধ করে দেয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটায়। এসব দিক বিবেচনা করে লক্ষ্মীপুরের জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়। কারণ লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন শহর থেকে মাত্র ৩ কি.মি. দূরে এবং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সঙ্গে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, লক্ষ্মীপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। নির্ধারিত স্থানটি স্থায়ী বাঁধ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ভেতরে অবস্থিত। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পর গত দশ বছরের অধিককালে সেখানে কোনো ধরনের ভাঙনের ঘটনা ঘটেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিবেদনেও এখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যায় মর্মে মত দেয়া হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর