শেষ মুহূর্তে এসে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে এক হাত নিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। গতকাল এক অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়েও নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন সিইসি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে যে অভিযোগ তা অভিযোগ আকারেই থেকে গেছে। অভিযোগের তদন্ত আদালতের নির্দেশনা ছাড়া হয় না। দিনের ভোট রাতে হওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আমি কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারি না। কারণ, আমি তো দেখি নাই। আপনিও দেখেননি যে রাতে ভোট হয়েছে। তদন্ত হলে বেরিয়ে আসতো, বেরিয়ে এলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেতো।
সারা দেশের নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যেতে পারতো। রাজনৈতিক দলগুলো কেন আদালতে অভিযোগ দেয়নি সেটা তাদের বিষয়। এ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ?রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘আরএফইডি টক উইথ কে এম নূরুল হুদা’ অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনেন সিইসি। আগের কমিশনে কাজের সূত্রে বদিউল আলম মজুমদার এ দুর্নীতি করেছেন বলেও জানান তিনি। বক্তব্যে সিইসি বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর বদিউল আলম মজুমদার আগের কমিশনের মতো বর্তমান কমিশনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা সতর্ক করায় তার সঙ্গে কাজ করেননি তিনি। আর এজন্যই বদিউল আলম মজুমদার বিভিন্ন অভিযোগ করে যাচ্ছেন।
মাহবুব তালুকদারের প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের চিকিৎসার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এ ছাড়া তিনি কমিশনে কোনো মিটিং থাকলে তা নিয়ে আগে থেকেই খুত ধরতে থাকেন। গণমাধ্যম ‘খাবে’ এমন কথা বলতে থাকেন।
সম্প্রতি এটিএম শামসুল হুদা বর্তমান ইসির সমালোচনা করে বলেন, সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন করতে পারতো। তাদের ‘পারফরমেন্স সন্তোষজনক নয়’। তারা বিভিন্ন বিষয়ে ‘বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন’।
ওই প্রসঙ্গ টেনে কে এম নূরুল হুদা বলেন, কয়েকদিন আগে এটিএম শামসুল হুদা সাহেব সবক দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের অনেক কাজ করার কথা ছিল, করতে পারিনি, বিতর্ক সৃষ্টি করেছি। একজন সিইসি হিসেবে তার কথা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
ইসি ইজ ওয়ান অব দ্য মোস্ট কমপ্লেক্স ইনস্টিটিউশন। এরমধ্যে একজন বাহবা নিয়ে যাবেন বা স্বীকৃতি নিয়ে যেতে পারে- এটা সম্ভব না। তার পক্ষে সম্ভব; আমিত্ব বোধ থেকে বলতে পারেন। ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সিইসির দায়িত্ব পালন করা এটিএম শামসুল হুদা ‘বিরাজনীতির পরিবেশে সাংবিধানিক ব্যত্যয়’ ঘটিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন কে এম নূরুল হুদা।
তিনি বলেন, ইসির দায়িত্ব ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। তিনি নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পরে। এ সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তখন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, সেনা সমর্থিত সরকার ছিল; ইমার্জেন্সির কারণে এটা করেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে করা সম্ভব না।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিককে (সুজন) প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের কাজ দেয়ার সমালোচনা করে কে এম নূরুল হুদা বলেন, বিরাজনীতির পরিবেশের মধ্যে তিনি (এটিএম শামসুল হুদা) এটা করেছেন। তিনি বদিউল আলম মজুমদারের নিয়োগ কীভাবে দিয়েছেন? লাখ লাখ টাকা কীভাবে দিলেন? এ রকম অনেক কিছু করা যায়। ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে এখান থেকে গেছে, এটা সম্ভব না, ক্যান্ট বি। অনেক সমালোচনার আছে।
বদিউল আলমকে উদ্দেশ্য করে নূরুল হুদা বলেন, তখন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ইমার্জেন্সি সরকার, সেনাশাসিত একটা অবস্থা। ওই অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক না। কাউকে কাজ দিলে আমাকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে, যোগ্যতা আছে কিনা, যে কাজের জন্য বলছেন এজন্য আপনার প্রয়োজন নেই। তখন ছিল যে অবস্থা সেই কমিশন কীভাবে করছেন, এখানে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের মতো ‘জটিল’ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কারও ‘বাহবা পাওয়ার সুযোগ নেই’ বলে মনে করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। ২০১৭-২০২২ সময়ে ইসির দায়িত্ব পালনে কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন।
সব অভিযোগ বানোয়াট- বদিউল আলম মজুমদার: ওদিকে সিইসি’র অভিযোগের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা আমার সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তা নির্ভেজাল মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা গত জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি যে, ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। প্রায় ১০০ কেন্দ্রে বিএনপি শূন্য ভোট পেয়েছে। আওয়ামী লীগও শূন্য ভোট পেয়েছে দুটি সেন্টারে। আওয়ামী লীগ শতভাগ ভোট পেয়েছে প্রায় ৬০০ কেন্দ্রে। এ ধরনের ফলাফল অসম্ভব। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে নির্বাচনী ফলাফল যা দেখানো হয়েছে তা বানোয়াট। আমার দুর্নীতির প্রমাণ যদি থাকে তাহলে তা প্রকাশ করুক। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বানোয়াট। তিনি বলেন, বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে সততা ও সত্যতার কোনো সম্পর্ক নেই। এসব দেখে কবিগুরুর দুই বিঘা জমির সেই বিখ্যাত লাইনের কথাই মনে পড়ে-তুমি মহারাজ সাধু হলে আমি চোর বটে।
সিইসি’র বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করছেন তালুকদার: ওদিকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে কি আসছে? এবং এর প্রতিক্রিয়া কি হচ্ছে? এরপর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন তিনি।
nasir uddin
২৯ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ২:১৮Nurul Huda is blind during day time. So he holds election at night.