× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ছড়াচ্ছে আইসের কারবার, হোতারা অধরা

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার

সীমান্ত দিয়ে দেদারছে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই আইসের বড় চালান জব্দ করছেন। বিদায়ী বছরে সারা দেশে আইসের ২২টি চালান ধরা পড়েছে। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯টি এবং ১টি চালান পিরোজপুরে ধরা পড়েছে। বেশিরভাগ চালানই জব্দ করেছে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নতুন বছরেও বিজিবি প্রায় ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকার আইসের আরেকটি বড় চালান জব্দ করেছে। এছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে আইস। চালান জব্দ হলেও হোতারা অধরা থেকে যাচ্ছেন।
কারণ অনেক অভিযানে আইস জব্দ হলেও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার হলেও এরা মূলত বাহক। টাকার বিনিময়ে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চালান বহন করে। ধরা পড়লে তাদের জেল-জরিমানা খাটতে হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তেমন কোনো লাভ হয়না। তারা জানে না এসব চালান কোথা থেকে এসেছে। কারা নিয়ে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি-বিদেশি কিছু চক্র কৌশলে বাংলাদেশে ইয়াবার বড় বাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে ওই চক্রগুলোই ব্যয়বহুল ও ভয়ঙ্কর মাদক আইসের বাজার তৈরি করতে সক্রিয়। বিভিন্ন সময় তারা অল্পস্বল্প আইস বিভিন্নভাবে দেশে প্রবেশ করিয়ে আইসসেবী তৈরি করেছে। যারা সেবন করেছে তারা এটিতে তাৎক্ষণিক ভালো অনুভূতি পেয়ে বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়েছে। এতে করে দ্রুত আইসসেবী তৈরি হয়েছে। এক সময় বাসাবাড়ি ছাড়িয়ে বিভিন্ন পার্টিতেও স্থান পায় বিলাসী এই মাদক। বাজারে আইসের চাহিদা তৈরি হওয়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকেই নৌপথে অহরহ চালান আনা হচ্ছে। চালান প্রবেশের ক্ষেত্রে দুই দেশের চক্র কাজ করে।
সূত্রগুলো বলছে, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকে দেশে আসা আইস  মজুত করা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। নাফ নদ ও টেকনাফের  সমুদ্র সীমানার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে আসছে আইস। গন্ধ ও নির্দিষ্ট কোনো আকার না থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইসের উপস্থিতি সহজেই টের পাচ্ছেন না। কারণ আইস অনেকটা মিছরি বা ফিটকিরির মতো। এছাড়া আইসের চালান এমনভাবে আনা হয় যা দেখে সহজেই অনুমান করা কঠিন। এক সময় আফ্রিকার দেশে আইস তৈরি হতো। বিভিন্ন দেশ ঘুরে বাংলাদেশে আসতো। পরে থাইল্যান্ড থেকেও আসতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আসা আইসের সবকটি চালানই মিয়ানমার থেকে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে মাত্র পাঁচ ভাগ। অথচ আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। তাই এটি ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ভয়ঙ্কর এই মাদক সেবনকারীর শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী বেশকিছু গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে আইস একটি ভয়ঙ্কর মাদক। স্বচ্ছ কাচের মতো এই মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতি বিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন এটি সেবন করলে কিডনি, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ ওজন হারানো, বিষন্নতা ও স্ট্রোকের  মতো বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিষন্নতা বৃদ্ধির কারণে সেবনকারীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে পারে। সেবনের ৯ মাসের মধ্যে সেবনকারীর নার্ভ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডি এলাকার কিছু পার্টিতে আইস ব্যবহার হয়। পার্টিতে গ্রুপ বেঁধে সবাই আইস সেবন করে। এসব পার্টিতে চাইলেই যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে না।  গোপণীয়তা রক্ষা করা হয়। দেশে আইসের বিস্তার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় সরকারি সংস্থাগুলো আইস নিয়ে যথেষ্ট তৎপরতা শুরু করতে পারছে না। কারণ মাদকটি ব্যয়বহুল হওয়াতে এর সঙ্গে জড়িতরা খুব সতর্কতার সঙ্গে পাচার, বিক্রি ও সেবন করছে। ইয়াবার মতো যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছেনা। এতে করে খুব সহজেই এর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালীপাড়া এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতের ঝাউ বাগানের একটি গাছের নিচ থেকে দুই কেজির বেশি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা আইসের মূল্য ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ঘটনায় কোনো পাচারকারী বা তার সহযোগীকে আটক কিংবা শনাক্ত করা যায়নি। এই চালান পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অন্যান্য মাদকের পাশপাশি র‌্যাব আইসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। র‌্যাবের অভিযানে অনেক বড় চালানও ধরা পড়েছে। আমাদের তদন্তে বেশকিছু নাম পাওয়া গেছে। যারা দেশে আইস কেনা-বেচার জন্য বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আমরা তাদেরকে ধরার চেষ্টা করছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর