বিনোদন
ব্যাপক হারে ইউটিউবে ঝুঁকছেন নির্মাতা-দর্শকরা
এন আই বুলবুল
২০১৮-০২-১৮
কোন পথে টিভি নাটক! দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে দর্শক নাটক কতটা দেখছেন? নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী ও দর্শক সবার মধ্যে এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। একটা সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া নাটক দেখার বিকল্প কোনো চ্যানেল ছিল না। সেই সময় ‘সংশপ্তক’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘রূপনগর’, ‘আজ রবিবার’, ও ‘জোনাকি জ্বলে’সহ অনেক ধারাবাহিকের জন্য সারা দেশের দর্শকদের কাছে বাংলাদেশ টেলিভিশন খুবই জনপ্রিয় ছিল। বিটিভি তার দর্শকদের বিনোদন চাহিদা পূরণ করেছে সুন্দরভাবেই। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এই সময়ে আমাদের টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বিশের অধিক। এরমধ্যে প্রায় পনেরোটি চ্যানেল বিনোদনের জন্য। এসব চ্যানেলে প্রতিদিন একাধিক ধারাবাহিক ও একক নাটক প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এসব নাটকের মধ্য দিয়ে চ্যানেলগুলো দর্শকের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে- সেই প্রশ্নটি থেকে যায়। অধিকাংশ নাটকই গতানুগতিক ধারার বলে অনেকে মন্তব্য করেন। গেল কয়েক বছর ধরে শোনা যায়, নাটক প্রচারের সময় অধিক বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় দর্শক টিভি নাটক দেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে ভারতের চ্যানেল স্টার জলসা, জিটিভি, স্টার প্লাসের প্রতি দর্শকের অতিমাত্রায় আগ্রহের কারণেও দেশি টিভি চ্যানেলগুলো দর্শক হারাচ্ছে। এটির বাইরে দেশীয় নাটকে এখন নিয়মিত যে দর্শক রয়েছেন তারা টিভিতে নাটক দেখতে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন? সেসব দর্শক টিভিতে নাকি ইউটিউবে এখন নাটক দেখছেন এই প্রশ্নটিও সর্বত্র। এই পশ্নের উত্তরে অনেকেই বলছেন দর্শক এখন ইউটিউবে নাটক বেশি দেখছেন। দর্শকের বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইউটিউব। দর্শক আজকাল নাটকের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু ইউটিউবে দেখছেন বলে জানা যায়। এদিকে নির্মাতাদের অনেকেই এখন টিভি’র চেয়ে ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বেশিমাত্রায়। আগামী কয়েক বছরে টিভি নাটকের দর্শকেরা পুরোপুরি ইউটিউব নির্ভর হয়ে পড়বেন বলেও অভিমত প্রকাশ করেন নাট্যাঙ্গনের ব্যক্তিরা । চ্যানেলগুলোতে দর্শক সংবাদ কিংবা টকশোর মতো অনুষ্ঠানই শুধু দেখবে। ইউটিউব প্রসঙ্গে নির্মাতা শিহাব শাহীন বলেন, ইউটিউব আমাদের বিনোদনের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই সময়ে দর্শক ইউটিউবে নাটক বেশি দেখছেন। নাটকে ভিউয়ার্স দেখলে সেটি সহজেই বোঝা যায়। আমি এটিকে পজিটিভভাবেই দেখছি। কারণ টিভিতে নাটক প্রচারের সময় বিজ্ঞাপন ও সংবাদ প্রচারের কারণে দর্শক বিরক্ত হয়ে ওঠেন। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তখন আর নাটক দেখা হয় না। টিভি চ্যানেলগুলোকে দর্শক ধরে রাখতে হলে অবশ্যই তাদের কিছু বিষয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে। এরমধ্যে বিজ্ঞাপনের মাত্রা কমাতে হবে। নাটকের মানের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিতে হবে। গতানুগতিক একই ধারার নাটক দর্শক বারবার দেখতে অভ্যস্থ নন। এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও কথা বলেন। তিনি বলেন, ইউটিউবে ভিউয়ার্স না দেখলে আমাদের জানা হতো না দর্শক দেশীয় নাটক কতটা পছন্দ করেন। ইউটিউবে প্রতিটি নাটকে লাখ লাখ ভিউয়ার্স রয়েছে। সত্যি বলতে দর্শক আমাদের নাটক দেখতে চায়। কিন্তু আমরা দর্শকের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছি বলে আমি মনে করি। ইউটিউবের কল্যাণে দর্শক নিজের সুবিধামতো তার পছন্দের নাটক দেখতে পাচ্ছেন। এটি সবার জন্য পজিটিভ। কারণ টিভিতে নাটক প্রচারের সময় অনেকেই ব্যস্ততার কারণে তা দেখার সুযোগ পান না। আবার যারা দেখেন তাদের কেউ কেউ বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা ও বিভিন্ন কারণে একটি নাটক পুরো দেখা থেকে বাদ পড়েন। সময়ের নতুন মাধ্যম ইউটিউব। আমাদের দর্শকদের সাধুবাদ জানাতে হবে এই মাধ্যমটির মাধ্যমে তার দেশীয় নাটক দেখছেন তাই। নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, দর্শক সব সময় নতুনত্ব খোঁজে। অবসর সময়টুকু বিনোদনের জন্য ব্যয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিনোদনের জন্য দর্শকের কাছে ইউটিউব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে নিজের পছন্দের নাটক দেখতে পাচ্ছে। এ ছাড়া টিভি চ্যানেলে আজকাল নাটক প্রচারের জন্য তোষামদি করতে হয় বলেও জানা যায়। সেই কারণে এসব ভোগান্তি থেকে বাঁচতে নবীন নির্মাতারা ইউটিউবকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।