× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গোয়ালঘরে মা

এক্সক্লুসিভ

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার

হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল বড়বাড়ির অশীতিপর বৃদ্ধা শমলা বিবি। চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে তার। চার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা রয়েছেন স্বামীর সংসারে। চার ছেলেই মোটামুটি সচ্ছল। রয়েছেন স্বামীও। কিন্তু স্বামী নবী হোসেন আরেক স্ত্রী গ্রহণ করায় খোঁজ নেন না শমলা বিবি’র। ৯০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার নামে দুই শতক জায়গা ছিল। সেটিও লিখে দিয়েছেন ছোট দুই ছেলে হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের নামে।
এরপর থেকে ছেলেরাও আর তার কোন খোঁজ নেয় না। স্বামী-সন্তান থেকেও যেন এখন কেউ নেই শমলা বিবি’র। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ছেলেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি সুন্দর ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু মায়ের স্থান হয়নি তাদের সঙ্গে। অগত্যা পরিত্যক্ত মালামালের মতো তারও ঠাঁই হয়েছে বাড়ির গোয়ালঘরে। গোয়াল ঘরের এক কোণে মাথা গুঁজে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে শমলা বিবি’র। গত দুই বছর ধরে গোয়ালঘরে গরুর পাশাপাশি নোংরা পরিবেশের মধ্যে একটি ভাঙা চৌকিতে শুয়ে দিন পার করছেন এই সর্বংসহা নারী। সেই গোয়ালঘরে জ্বলে না কোন বৈদ্যুতিক বাতি। এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মতোই দিন-রাত অন্ধকারের মধ্যে গোয়ালঘরে কাটে তার দিন। গোয়াল ঘরের গোমূত্রের গর্ত, আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশে মশার অসহনীয় উৎপাতকে সঙ্গী করে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই নিয়তি হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন এই জনমদুখী মা।

শমলা বিবি’র এই অসহায়ত্ব পীড়া দেয় ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা মেয়ে নূরজাহান বেগমকে। ভাই হেলাল উদ্দিনকে তার বৈদ্যুতিক মিটার থেকে মায়ের থাকার ঘর গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে বলেন। কিন্তু মাস শেষে তার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করতে হবে বলে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় হেলাল। মায়ের দুর্ভোগ আর দুর্দশা সইতে না পেরে স্বামী মানিক মিয়াকে হোসেনপুর থানায় অভিযোগ দিতে পাঠান নূরজাহান।

শনিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিক মিয়া অভিযোগ নিয়ে হোসেনপুর থানায় গেলে বিষয়টি জানতে পারেন হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী। অভিযোগ দেখে হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী সেই মাকে দেখতে হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিসার ফোর্সসহ বিকালেই ছুটে যান উপজেলার শাহেদল বড়বাড়িতে।

হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার   মো. সোনাহর আলীকে শমলা বিবি জানান, দুই বছর ধরে তিনি গোয়ালঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। সারাদিন গোয়াল ঘরে একবারও কেউ তার খোঁজ নিতে আসে না। এই বয়সটাই যেন তার কাছে এক বিরাট অভিশাপ।

এ সময় হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যকে ডেকে আনেন। দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে শমলা বিবিকে ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিনের ঘরে তুলে দেন তারা। শমলা বিবি’র ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় ছেলে ইমান উদ্দিনের ব্যবসায়ী ছেলে ওমর ফারুক। এছাড়া চার ছেলে গিয়াস উদ্দিন, ইমান উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন দশ দিনের মধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন।

এ ব্যাপারে হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী বলেন, শমলা বিবি’র চার ছেলে নতুন ঘর নির্মাণ করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে সেই অঙ্গীকার তারা কতোটা রাখেন সেটি বলা যাচ্ছে না। এই কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা এই দুখিনী মায়ের থাকার জন্য একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়া ছাড়াও এই মায়ের থাকার জন্য যাবতীয় বেডিং এর জিনিসপত্রের ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর