ফেনীর ছাগলনাইয়ায় যৌতুকের জন্য কুলছুমা আক্তার নামে এক দরিদ্র গৃহবধূর ওপর শারীরিক নির্যাতন করেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ সতর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে নির্যাতিতা গৃহবধুর দায়ের করা মামলায় স্বামী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাইফুল গ্রেপ্তারের পর থেকে মামলা তুলে নিতে শ্বশুর বাড়ির লোকজন কুলছুমার বাবার বাড়ির লোকজনদের নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে।
নির্যাতিতা গৃহবধূ কুলছুমা আক্তার জানান, ৫ বছর পূর্বে ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ সতর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য তার ওর নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে পৌর আদালত ও থানায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলে কয়েক দফায় সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পুনরায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন গৃহবধূ কুলছুমার ওপর নির্যাতন চালাতো।
গত ৭ই অক্টোবর এক সন্তানের জননী কুলছুমাকে ফের যৌতুকের জন্য চাপ দেন স্বামী সাইফুল ইসলাম। সিএনজি চালিত অটোরিকশা কেনার জন্য কুলছুমার বাবার বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তিনি। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কুলছুমা তার বাবার বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকা এনে দিতে অপারোগতা প্রকাশ করলে মধ্যরাতে নির্যাতন চালায় স্বামী সাইফুল ইসলাম, শাশুড়ি শিরিনা আক্তার ও মহিউদ্দিন নামে শ্বশুর বাড়ির একজন।
তারা কুলছুমাকে বেধড়ক মারধর করে রাতে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে গুরুত্বর আহত কুলছুমা স্থানীয়দের সহযোগিতায় মধ্যরাতে তার বাবার বাড়ি যশপুর গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে চলে যায়।
বাবার বাড়ির লোকজন রাতেই কুলছুমাকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিদন ৮ই অক্টোবর সকালে কুলছুমাকে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে ওইদিন রাতে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় একদিন পর হাসপাতাল ছেড়ে কুলছুমা তার বাবার বাড়িতে চলে যান।
ছাগলনাইয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, নির্যাতিতা বাদি হয়ে গত ৮ই অক্টোবর স্বামী সাইফুল ইসলাম, শ্বাশুড়ি শিরিনা আক্তার ও মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার প্রধান আসামী স্বামী সাইফুল ইসলামে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
নির্যাতিত কুলছুমার বাবা কফিল উদ্দিন খোন্দকার জানান, দিনমজুরের কাজ করে তিনি পরিবার চালান। এর মধ্যে ধারদেনা করে গুরুত্বর আহত মেয়ের চিকিৎসা চালাচ্ছেন। তবে মেয়ের চিকিৎসার জন্য আরো অর্থের প্রয়োজন। যা তার পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গ্রেপ্তার থাকায় মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন মামলা প্রত্যহার করতে তাদের হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।