× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবায় আগ্রহের ‘স্বাস্থ্যবন্ধুু’

ষোলো আনা

রোকনুজ্জামান পিয়াস
১৪ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

প্রতি দিনই গ্রামে-গ্রামে ছুঁটছেন। বাইসাইকেলে করে যাচ্ছেন বাড়িতে বাড়িতে। সঙ্গে রয়েছে মাঝারি আকারের একটি বক্স। তার ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসার নানা সরঞ্জাম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ডায়াবেটিস পরীক্ষা, ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, রক্ত পরীক্ষা, মাতৃসেবা থেকে শুরু করে শিশু-নারী ও বৃদ্ধাদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া এই সেবাদাতারা বেসরককারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আগ্রহ’র ‘স্বাস্থ্যবন্ধু’।
নানাবিধ কার্যক্রমের পাশাপাশি সংস্থাটি এই প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। শুধু নিজে থেকেই নয়, জরুরি প্রয়োজনে ফোন করলেই বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যবন্ধুরা।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবন নিশ্চিত, সব বয়সের মানুষের কল্যাণ বৃদ্ধি, নির্ধারিত সময়ে গুণগত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অংশগ্রহণ, সামর্থ্য ও সঠিক ব্যবস্থাপনাসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়Ñ এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই আগ্রহের স্বাস্থ্যবন্ধু প্রকল্পের যাত্রা শুরু। এ প্রকল্পের অধীনে প্রতি ১০০ বাড়ি থেকে ৬ জন নারী নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে নারীদের স্বাস্থ্য, হাইজিন, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সম্পর্কে প্রতি সপ্তাহে সচেতনতামূলক মিটিং এবং মাসে দু’বার বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দিয়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবন্ধু প্রকল্প থেকে প্রায় ৯৮ হাজার গ্রামীণ জনগণ সেবা গ্রহণ করেছেন। প্রতিদিন প্রত্যেক স্বাস্থ্যবন্ধুর কাছ থেকে গড়ে ৪৫-৫০ জন মানুষ সেবা গ্রহণ করছেন। সেবা গ্রহীতাদের শতকরা ৯০ ভাগই নারী ও শিশু। প্রত্যেক স্বাস্থ্যবন্ধুই একজন প্রশিক্ষিত সেবাদানকারী (সিএইচসিপি), যারা প্রতিদিন (শুক্রবার ছাড়া) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্যবন্ধুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগব্যাধি ও রোগীর খোঁজ-খবর নেন এবং স্বাস্থ্য, হাইজিন, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা প্রদান করেন। তাদের কাছ থেকে গ্রামীণ জনগণ স্বল্পমূল্যে ২০ ধরনের ওষুধ এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন পণ্য গ্রহণ করেন।

এ ছাড়া মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, পুষ্টি শিক্ষা ও পুষ্টি পণ্য সরবরাহ, বিক্রি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কাউন্সেলিং, বয়স্ক ও কিশোর-কিশোরীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত ও রেফার করা, বিভিন্ন অসংক্রামিত রোগ শনাক্তকরণ ও উচ্চতর সেবাকেন্দ্রে রেফারেল (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ইত্যাদি), সীমিত নিরাময় সেবা ও সাধারণ আঘাত এবং জখমের ব্যবস্থাপনা, জরুরি ও জটিল রোগী চিহ্নিত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য উচ্চতর সেবাকেন্দ্রে রেফার করার মতো সেবাও দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্যবন্ধুরা।

আগ্রহের চেয়ারপারসন ডালিয়া রহমান বলেন, এখন সাভার এবং ধামরাই উপজেলায় স্বাস্থ্যবন্ধু কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও খুব শিগগির এটি দেশের অন্যান্য উপজেলাতেও সম্প্রসারণ করা হবে। পরবর্তীতে এই প্রকল্পে উপজেলা পর্যায়ে হেলথ সেন্টার এবং জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যেন সমাজের কোনো মানুষই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত আইসিডিডিআরবি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭০ শতাংশ মানুষ ফার্মেসি থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন।

চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র ১০ শতাংশ, সরকারি হাসপাতাল থেকে ৭ শতাংশ, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে ৫ শতাংশ, এনজিও ক্লিনিক থেকে ১ শতাংশ এবং অন্যান্য সেবা পরিকাঠামো থেকে ৭ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। গ্রামীণ জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মতো কিছু ব্যবস্থা কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও তা সবার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এজন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ভরসা হচ্ছে নিকটস্থ ফার্মেসিগুলো। আর ফার্মেসিগুলো অদক্ষ লোকজন দিয়ে পরিচালিত হওয়ায় ভুল ওষুধ সেবনের মাত্রা বেশি। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির অর্জন অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন আগ্রহের চেয়ারপারসন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর