× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সরজমিন /রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্যরকম জীবন

ষোলো আনা


১৪ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার
ছবি: জীবন আহমেদ

গুচ্ছাকারে ছোট ছোট ছাউনি ঘেরা অসংখ্য সারিবদ্ধ কুঠরি। দেখে সবাই বুঝবে এরাই বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্বাস্তু গোষ্ঠী রোহিঙ্গা। যাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছে মিয়ানমার। বাস চলতে থাকে আর গুচ্ছাকারে ছাউনির ঘরগুলোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। লেদা টাওয়ার, আলীখালী ক্যাম্প, টেকনাফ। উঁচু নিচু সব জায়গায় শুধু আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ঘোষিত অঘোষিত শিবির। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখেই যাচ্ছি। এরাই কি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা!

২৫নং আলীখালী ক্যাম্পের ১১নং ব্লকে আই.ও.এম অফিসে যেতেই দেখি ইতিমধ্যে অনেক শরণার্থীরা এসে জমা হয়েছেন।
একেকজন এসেছেন একেক সমস্যা নিয়ে। কেউ বিচার নিয়ে, কেউ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, কেউবা এসেছেন ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নিতে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিসর এতটা বিস্তর যে, প্রতিটা ক্যাম্প আবার ২০-৩০টি ব্লকে বিভক্ত করা। আর যেই ক্যাম্পগুলো পরিসরে আরো ব্যাপক সেখানে ব্লক এবং পরিবারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। পাহাড়ের ঢালে গায়ে গা লেগে সারি সারি ঘর। বাঁশের বেড়া, উপরে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এত অল্প জায়গায় এত মানুষের থাকার বাসা। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।

রোহিঙ্গারা যখন প্রথম আসা শুরু করে তখন অবস্থা ছিল করুণ। পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা দুর্দশা গ্রাস করেছিল তাদের। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদেরকে আর কতদিন বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে রাখবে? কূটনৈতিক তৎপরতা প্রথম থেকেই বাংলাদেশ বেশ উদ্যোগের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও তেমন ইতিবাচক ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ভারত বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে তেমনটি নয়।

আরেকটি দেশ যা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, চীন। রোহিঙ্গা সংকটের প্রথম থেকেই চীন মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে আসছে। এমনকি জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ বিলে চীন ভেটো প্রদান করেছে।

কিন্তু চীন কেন রোহিঙ্গা ইস্যু আরাকানের পক্ষে অবস্থান করছে? এর মূল উদ্দেশ্য কি? এখানে চীনের প্রধান স্বার্থ দুটি। এর একটি হলো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে তাদের চিরাচরিত পররাষ্ট্রনীতি - যার পাশাপাশি চীন চায় যে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও অন্য কোনো দেশ হস্তক্ষেপ না করুক। আর অপরটি হচ্ছে, তাদের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ- যার মূল কথা: তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও তেল-গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মালাক্কা প্রণালী ছাড়াও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে আরেকটি স্থলপথ অক্ষুণ্ণ রাখা।
এখন সমস্যা সমাধানের দায় সবটাই যেন বাংলাদেশের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক শক্তির খেলা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র করণীয় কূটনৈতিক যুক্তিবাদী বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বহু বছর ধরে কূটনীতিক ভাবে বাংলাদেশ চেষ্টা করলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। মিয়ানমারের জাতিগত নিধনযজ্ঞ আর বর্বর মানবতাবিরোধী অপরাধ বিশ্বের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আমরা কারো সঙ্গে শত্রুতা চাই না। আমরা চাই ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীর নিরাপদ নির্বিঘœ পুনর্বাসন। যেখানে তারা অন্য নাগরিকের মতোই বাঁচার অধিকার পাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চীন-ভারত সাহায্য না করলেও অনেক রাষ্ট্রই এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে এসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।

এই হাস্যোজ্জ্বলহীন মানুষগুলো অন্যের ঘাড়ে বসে জীবন চালাতে চায় না। ক্যাম্পগুলোতে দেখলাম এক অন্যরকম জীবন। যে জীবনের সঙ্গে কোনো পরিচয়ই ছিল না। মানুষের প্রতি মানুষের এই অন্যায় দেখে যেমন মনের ভেতরে ক্ষোভ ফেটে পড়ে, আবার বাংলাদেশ এই অসহায় মানুষদের প্রতি যে সৌহার্দ্য দেখিয়েছে, সেই উদাহরণও বিরল।

লেখক: সাইফুল ইসলাম শাকিল, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর