× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বনাথের নিজের গল্প

ষোলো আনা

রাহাত মাহমুদ খান
৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার

আমি ছোটবেলা থেকে চোখে ঝাঁপসা দেখতাম। যখন আমার বয়স ৬-৭ বছর। তখন থেকে আর কিছুই দেখতে পাই না। তখন চিন্তা আসলো কি করবো? দৃষ্টিশক্তি ছাড়া কি হবে আমাকে দিয়ে? দীর্ঘদিন হতাশার মধ্যে কাটানোর পর সিদ্ধান্ত নেই আত্মহত্যা করবো। অনেকদিন ভাবার পর আমার ভগ্নিপতির মাধ্যমে জানতে পারি লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলায় অন্ধ স্কুল নামে পরিচিত একটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল আছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুলের বিষয়টা তখন অকল্পনীয় ছিল। পরে সেই স্কুলে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়ালেখা করতে পারে সেটা অনেকের কাছে হাস্যকর ছিল।

আশপাশের অনেকেই কটাক্ষ করে বলতে লাগলো যে, কানারা কি পড়ালেখা করতে পারে? আবার কেউ আমার দিনমজুর বাবা মাকে বলতে লাগলেন যে, তোর ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে কি হবে? যেহেতু সে অন্ধ শেষ পর্যন্ত তাকে ভিক্ষা করতে হবে।
প্রতিজ্ঞা করলাম প্রয়োজনে আত্মহত্যা করবো তবুও ভিক্ষা করবো না। তারপর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি হই। ধাপে ধাপে সফলতার সঙ্গে প্রাথমিক, মাধ্যমিকে জিপিএ-৪.৮১ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।

স্বপ্ন ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যে টাকা দরকার তা আমার দিনমজুর বাবার কাছে ছিল না। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-কর্জ করে কিছু টাকা দিলেন বাবা। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু ভর্তি হওয়ার টাকা ছিল না। সিদ্ধান্ত নিই একটা টিনের ঘর ছিল, যা বৃত্তির টাকা দিয়ে করেছি সেটা বিক্রি করে দিবো। কিছুদিন পর পাশের এলাকার একজনের মাধ্যমে বিভিন্ন শর্তে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে চবিতে ভর্তি হই। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে কিছু টাকা পেতাম সেগুলো দিয়ে অনার্স শেষ করি। এখন একটা এনজিওতে কাজ করি। ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে সমাজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। এভাবেই নিজের জীবনে গল্প বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বিশ্বনাথ রায়। তার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে। ৪ ভাই ২ বোনের তিনি দ্বিতীয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর