× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শ্রীমঙ্গলে ফের বেদখল রেলওয়ের শতকোটি টাকার জমি

বাংলারজমিন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ সড়কে ফের আবারো রেলের জমি দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দখল করা জমিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লাগিয়ে বাঁশ, কাঠ ও টিন ব্যবহার করে দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৭শে নভেম্বর অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর রেলের প্রায় ২ দশমিক ৮৭ একর শতকোটি টাকা দামের জমি উদ্ধার করেছিল রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ। ওই অভিযানে পাকা ভবন থেকে শুরু করে সকল ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। গত রোববার সরজমিন দেখা গেছে, আগের অভিযানে উচ্ছেদ হওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ তাদের দোকানের সাইনবোর্ড লাগিয়ে বাঁশ, কাঠ, টিন ব্যবহার করে দোকানঘর তৈরি করছে। ফার্নিচারের দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মালামাল। খালি জায়গাগুলোতে আবারো গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন সব দোকান।  মেসার্স মির্জা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মির্জা কামাল হোসেন বলেন, ‘শওকত মিয়া নামে সেন্ট্রাল রোডের এক পিয়াজের আড়তদারের কাছ থেকে দুই বছর আগে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। এরপর জমিতে মাটিভরাট করা, পাকাঘর বানানোসহ ৩৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন তো আমরা ছাউনি দিয়ে ইট ফেলে  জায়গা দখল করে রেখেছি।’ আমাদের ইচ্ছা হলো, সরকার যদি লিজ দেন, তাহলে আমরা লিজ নেয়ার দাবিদার।
তিনি জানান-‘কয়েক দিন আগে রেলের সার্ভেয়ার এসে যারা যারা সাইনবোর্ড দিয়ে দোকানপাট বসিয়েছে, তাদের তালিকা করে নেন। জিআরপি থানার ওসি বলেছেন- নতুন দখলদারদের ওপর নাকি মামলা হয়েছে। কই এর পরে তো আর কেউ আসেনি’। হাতিল ফার্নিচারের লোকমান হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন শাওন বলেন- ‘আমরা এখানে ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। নোটিশ না দিয়ে রেলওয়ে আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করে। উচ্ছেদের দিন মাল সরানোর সময়টুকু পর্যন্ত দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র মাইকিং করা হয়েছে। কোন জায়গা উচ্ছেদ করা হবে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে আমরা এই জমিতে এতদিন ধরে দখলে আছি। যদি রেল লিজ দেয় তাহলে আমাদের দিতে হবে’। আনাস ফার্নিচার দোকানের স্বত্বাধিকারী  আবুল খায়ের বলেন- ‘আমরা এখানে দুই বছর আগে ৮ লাখ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেছিলাম। এখন অস্থায়ীভাবে ছাপড়া বেঁধে আছি। রেলওয়ে যদি লিজ দেয়, তাহলে আমরা লিজ নেব। এই আশায় বসে আছি’। আনোয়ারা ট্রেডার্স, খান ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড ওয়ার্কস, হোসেন ট্রেডার্স অ্যান্ড মোটরসসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেছেন- সবাই তো আগের দখলকৃত জায়গায় নিজেদের ঘর তুলছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাই আমাদের পুরনো দোকানের জায়গায় নতুন করে ঘর তুলছি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে চাইলে সে সময় উঠে যাবো। কিন্তু এখন যদি দখল করে না রাখি পরে এই জায়গা আরেকজন দখল করে নেবে।
এদিকে গত ১৫ই জানুয়ারি ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী/কার্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া মো. জুয়েল হোসাইন বাদী হয়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন। এতে মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
এরা হলেন- মো. আলী, পিতা মাসুক মিয়া, আবদুল হাই, পিতা আবদুল মান্নান, নোয়াব মিয়া, পিতা অজ্ঞাত, মো. খালিছ খান, পিতা মৃত তোতি খান, মিলন মিয়া, পিতা অজ্ঞাত, মো. লোকমান হোসেন, পিতা মৃত হাজী সিকান্দার, মো. শাহ আলম, পিতা মো. সিরাজ খান, আবদুল মোমিত, পিতা অজ্ঞাত, আবদুল মোমিন পিতা মৃত আসলাম মিয়া, মো. আবুল খায়ের, পিতা মৃত আবদুল জনি, মো. ইমরান হোসেন, পিতা মৃত মো. হোসেন মিয়া, মো. রিপন, পিতা মৃত আলী, মো. শাহজাহান মিয়া, পিতা অজ্ঞাত, মো. হাফিয মিয়া, পিতা অজ্ঞাত (মুক্তিযোদ্ধার অফিস)।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন-‘সরকারি রেলওয়ের জায়গা উচ্ছেদ করার পর আবার তারা অনধিকার প্রবেশ করে ঘর দরজা নির্মাণ করার চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগে লিখিত এজাহার দাখিল করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ইনভেস্টিগেশন করেছি। এর সত্যতাও পেয়েছি। রেলের জমি যে দখল করেছে, সেটি আমরা ভিডিও করে রেখেছি।  শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান- রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করার কাজটা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। এখন নতুন করে বেদখল হচ্ছে। এ বিষয়টি রেল মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে আমরা মহা মূল্যবান এ জায়গাটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে এনেছিলাম। এখন কাউকে এই জায়গা লিজ (ইজারা) দেয়া হয়নি। শুনেছি আবারো দখল হচ্ছে। আমি আমিনের (সার্ভেয়ার) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি কীভাবে এই জায়গা আবার দখল হচ্ছে। তাকে বলা হয়েছে, দখলদারদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করার জন্য।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর