× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘আইইডিসিআর এর কাঁধে বন্দুক রেখে ডায়াগোনস্টিক প্রসেসটা আটকে গেছে’

ফেসবুক ডায়েরি

ড. কবিরুল বাশার
১৮ মার্চ ২০২০, বুধবার

করোনা ভাইরাস ২০১৯ সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় এর এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি হল রিয়েল টাইম পিসিআর। এমআরএনএ এক্সট্রাকশন করে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন করে কমপ্লিমেন্টারি ডিএনএ তৈরী করতে হবে থার্মাল সাইক্লারে। এরপর উহান করোনাভাইরাস ২০১৯ এর সুনির্দিষ্ট প্রাইমার ব্যবহার করে রিয়েল টাইম পিসিআর করে সফটওয়্যারে কার্ভ দেখে বিবেচনা হবে ভাইরাস সাস্পেক্টেড ভিকটিমে আছে কিনা। এই হল মোটা দাগে ডেফিনিটিভ ডায়গোনসিস এর বেসিক স্টেপস।

আইইডিসিআর ছাড়া আর কোথাও এই টেস্ট হচ্ছে না। এখানে বায়োসেফটির একটা ব্যাপার আছে। বায়োসেফটি ল্যাব লেভেল ৩ এর নিচে রিস্ক গ্রুপ ৩ ও ৪ এর জীবানু (করোনা ২০১৯ এর মধ্যে পড়ে, সার্স, মার্স, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি) যেগুলোকে কন্টেইন করা লাগবে, তাদের পরীক্ষা বা গবেষণা চালানো যাবে না। আমার জানামতে আইসিডিডিআর'বি তে একটা বিএসএল-৩ আছে। আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে কিনা জানি না।
বাকৃবি কিংবা বিরি তে থাকতে পারে।

প্রাইমার বাদে যেগুলো লাগবে, যেমন: এমআরএনএ এক্সট্র্যাকশন কিট, রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ, পিসিআর মাস্টারমিক্স এসবই আমাদের দেশে কমার্শিয়ালি আগে থেকেই এভেইলএবল। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। এই মেটেরিয়াল গুলো ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে অর্ডার বেসিসে শিপমেন্টের মাধ্যমে আসে। এখন ওদের নিজেদেরই ডিমাণ্ড অনেক হাই তাই এভেইলএবিলিটি নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।

মোটামুটি গোটা সাতেক ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এই নভেল করোনার জিনোম সিকোয়েন্স আবিস্কারের আর্টিকেল অন্তর্জালে রয়েছে। নেপাল থেকেও করা হয়েছে এক রোগির। জীনব্যাংকে আগের রক্ষিত সিকোয়েন্সের সাথে উহানের নভেল করোনা ৯৯.৯৯% এর বেশি মিলে গেছে। নেপালের স্যাম্পলে তারা গোটা পাঁচেক মিউটেশন পেয়েছে। জার্মানির ও ইটালির কিছু স্যাম্পলের ও সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। তারাও বিভিন্ন মিল-অমিল খুঁজে দেখছে অন্য বিভিন্ন ডাটার সাথে যে কোন সুনির্দিষ্ট মলিক্যুলার প্যাথোজেনেসিস আবিষ্কার করা যায় কিনা।

মন্ত্রী স্যার বলেছেন কীটের কোন কমতি হবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সারা দেশে রাইট নাও হাজার হাজার, লাখও হতে পারে, সাস্পেক্টেড কেস আছে যাদের পরীক্ষা করে দেখা খুব জরুরি দরকার। হটলাইনের ৪টা ফোন নাম্বারের কোনটাতেই গতকাল ৬ ঘণ্টা টানা চেষ্টা করেও পায়নি আমার এক আত্মীয়। আইইডিসিআর তো আরও দূরের রাস্তা।

এই বাস্তবতায় আমার পয়েন্ট খুব সিম্পল। অন্তত জরুরি ভিত্তিতে আট বিভাগে আটটা বিএসএল লেভেল ৩ ল্যাব সেট আপ করে হাজার খানেক করে টেস্ট করার মত কিট সরবরাহ করে আপাত দূরবস্থার কিছুটা নিরসন করা যায় কিনা। সরকারিভাবে করতে গেলে এবং ভর্তুকী না দিলে এক একটা টেস্ট করতে ৫-১০ হাজার টাকা গুনতে হতে পারে। আমার মনে হয় আমাদের দেশের মানুষের যে ফাইনান্সিয়াল অবস্থা তাতে অসংখ্য মানুষই তা করাতে এক পায়ে খাড়া থাকবে।

শত বা হাজার কোটি টাকা দামের বেসরকারি হাসপাতাল যেমনঃ এপোলো, ইউনাইটেড, স্কয়ার এরাই বা কেন এগিয়ে আসছে না? চ্যারিটি তো আশা করছি না। পয়সা নিয়েই টেস্ট করাবে। লজিস্টিক তো সেট আপ করুক। আমার বিশ্বাস সরকার বা বড় বড় বিজনেস গ্রুপগুলো যদি চায় তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এগুলো করা সম্ভব। হিউম্যান রিসোর্স যা আছে তা দিয়েই শুরু করা যাবে। সারা দেশে ৬-৭ টা ডায়াগোনস্টিক মলিক্যুলার ল্যাব এখনই আছে যদিও গণ্ডী সীমিত। এদের ফ্যাসিলিটেট করা ও একটা রাস্তা হতে পারে।

একদিন আগেও যদি একজন রোগী সুনির্দিষ্ট করে আলাদা করা যায়, তাতে হয়তো আরো শত হাজার লোককে সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচানো যায়। কিন্তু বর্তমানে শুধু আইইডিসিআর এর কাঁধে বন্দুক রেখে আমাদের টোট্যাল ডায়াগোনস্টিক প্রসেসটা আটকে গেছে। এভাবে আসলে হবে না। প্রতিটা ফিজিশিয়ান, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ-- সব হোঁচট খেয়ে থমকে আছে। ডেফিনিটিভ ডায়াগনোসিস না হলে সিম্পটোমেটিক চিকিৎসা আর কত। ইভেন সব লেভেলের হেলথ ফ্যাসিলিটি ইনাফ অক্সিজেন সিলিণ্ডার বা নেবুলাইজার আছে কিনা সেই ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টটাই কোন মিডিয়ায় এখনো দেখিনি।

(লেখক: অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। লেখাটি তার ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর