করোনা আপডেট

ইতালি যেন নরক, মৃত্যুপুরী!

তোবিয়াস জোনস

২০২০-০৩-২১

এখন আর কেউ বলেন না ‘লা ডোলসে ভিটা’ (জীবনটা সুন্দর)। এ কথাটা তারা অল্প সময় আগেও বলতেন। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পুরো ইতালি যেন সব দিক দিয়ে পাল্টে গেছে। তাকে চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, ইতালি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখানে জনসংখ্যা ৬ কোটি। অন্যদিকে পুরো চীনে জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। সেই পুরো চীনের তুলনায় এই ইতালিতে করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন বেশি মানুষ। তাদের সংখ্যা ৪০৩২। করোনা মহামারীতে যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন তার তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগেরও বেশি মারা গেছেন ইতালিতে। এখানে এখন কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত।

কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে, স্কাই নিউজ এক নতুন ইতালির চিত্র ফুটিয়ে তোলে। এতে হতাশ হয়েছি। এতে ইতালিতে ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলা হয়। বারগামোতে অবস্থিত পাপা গিওভান্নি ২৩তম হাসপাতালে সৃষ্ট বিশৃংখল অবস্থার চিত্র প্রচার করা হয়। আমি পারমাতে অবস্থান করি। এখান থেকে ওই হাসপাতালটি ১০০ মাইল দূরে। ওই হাসপাতালে দেখানো হয় রোগীদেরকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ ‘বাবল হেলমেট’ পরিয়ে রাখা হয়েছে। তার ভিতরেই তারা শ্বাস-প্রশ্বাস চালাচ্ছেন। তাদের বুক উঠানামা করছে।

তারা বাতাসের জন্য, অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাস করছেন। ওয়েটিং রুমে বিছানায় ভরা। ওয়ার্ডগুলো ভরে গেছে। স্কাই নিউজের স্টুয়ার্ট রামসে বললেন, এখানকার মেডিকেল টিম যুদ্ধে লিপ্ত যেন। তারা লড়াই করছেন। যুদ্ধ করছেন। তবে তারা হেরে যাচ্ছেন।
এই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা বিষয়ক স্পেশালিস্ট ডা. লরেঞ্জো গ্রাজিওলি। তিনি বলেছেন, আমার জীবনে আমি কখনো এতটা হতাশার মধ্যে কাটাইনি। তীব্র কঠিন সময়ে আমি মাথা ঠান্ডা রাখি। কিন্তু এই মুহূর্তে যখন আপনি পড়বেন তখন, আপনার সেই ধৈর্য্য পর্যাপ্ত নয়।

এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিতে। তাই আমার বৃটিশ বন্ধুদের এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। বৃটেনেও একই অবস্থা হতে পারে। কারণ, বৃটেনের সংক্রমণ অনেকটাই ইতালির মতো। দুই রোববার আগে আমাদের সব কিছু পাল্টে গিয়েছে। আমরা শুনতে পেয়েছি দেশের এক চতুর্থাংশ কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা, জাদুঘর, জিম সব এক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। বিয়ে এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৯ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী গুসেপ্পি কন্টে ঘোষণা করেছেন, সারাদেশে এসব বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়েছে। সব কিছু বন্ধ হয়ে আছে।

ইতালির মানুষ সাধারণত আমুদে। তারা আনন্দ ফুর্তি করে সময় কাটাতে ভালবাসে। কিন্তু আকস্মিক সেই ইতালিতে নেমে এসেছে মৃত্যুর বীভিষিকা। সব কিছুতে পিনপতন নীরবতা। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে আছে। থেমে গেছে সব কিছু। রোম এবং মিলানের মতো শহরের সব পার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এত সব সত্ত্বেও এই মহামারী ইতালিকে ছাড়ছে না। কল্পবিজ্ঞানের কোনো দৈত্যের মতো তা যেন গ্রাস করছে। এই সপ্তাহে কয়েক শত কফিন সরিয়ে নিতে বারগামোতে ডেকে নেয়া হয় সেনাবাহিনীর একডজন  ট্রাক।

বারগামোর সমাধিতে লাশ সমাহিত করার কাজ চলছে দিনরাত ২৪ ঘন্টা। কিন্তু অনেক লাশ স্থান সংকুলানের অভাবে পুড়িয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। মৃত ব্যক্তিদের অনেক আত্মীয়-স্বজন আটকা পড়েছেন কোয়ারেন্টিনে। তারা তাদের মৃত স্বজনের মুখটাকে তাই শেষ বারের মতোও দেখতে বা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। এ সপ্তাহে লা রিপাবলিকা পত্রিকাকে একজন বলেছেন, মৃত কোনো স্বজনের প্রতি একটি চুম্বন পৌঁছে দেয়ার কথাও বলছে না লোকজন। কেউ একজন দরজার নিচ দিয়ে আমাদের কাছে একটি ছবি পৌঁছে দিয়ে অনুনয় করছেন আমরা যেন সেটা তাদের স্বজনের হাতে পৌঁছে দিই, যিনি এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে নেই। সাধারণ সময়ে ইতালির প্রতিটি পত্রিকা এমন মৃতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করে। এখন এমন শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয় সাত থেকে আটটি পৃষ্ঠাজুড়ে। এসব করা হচ্ছে ইকো ডি বারগামো অথবা দ্য গেজেট ডি পারমা’র মতো পত্রিকায়।

যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই আক্রান্তদের সেবা দিয়েছেন সামনে থেকে। শুধু পারমার ৫ জন যাজক মারা গেছেন। মোট মৃতদের মধ্যে শতকরা আট ভাগই স্বাস্থ্যকর্মী।

(ডেইলি মেইল থেকে সংক্ষেপিত)
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status