× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আলম তালুকদার: একজন আপাদমস্তক লেখকের স্মৃতি

মত-মতান্তর

ড. শরীফ আস্-সাবের
১০ জুলাই ২০২০, শুক্রবার

আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার বন্ধু, সরকারী চাকুরীতে আমার এক সময়ের ব্যাচম্যাট, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব, কবি আলম তালুকদার বিনা নোটিশে চলে গেছেন কোন এক না ফেরার রাজ্যে। করোনা আক্রান্ত কবি আলম তালুকদার (৬৪) বুধবার বিকাল ২.২০ এ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। জীবনে আমার দেখা সবচাইতে প্রাণবন্ত এই মানুষটি এইভাবে চলে যাওয়ায় দেশের সাহিত্যাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

কবি আলম তালুকদারের সঙ্গে আমার সবশেষ দেখা এ বছরের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী বাংলা একাডেমীর কবি শামসুর রাহমান হলে আমার কবিতার বই ‘বিবর্ণ বর্ণমালা’র প্রকাশনা উৎসবে। সেদিন হাস্যরস, ছড়া আর ছন্দের যাদুতে ভরা তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছিল।

সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হলো। শুরুতেই গরমে অতিষ্ঠ, গেঞ্জিপরা আলম তালুকদার স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে করোনার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলেন। তারপর, তাঁর সঙ্গে ভালো কথা, মন্দ কথার সঙ্গে হলো কবিতা, ছড়া আর জোকসের মিশাল দিয়ে জমপেশ ভার্চুয়াল আড্ডা।
করোনা চলে গেলে আবার হবে দেখা, আবার বসবে মেলা, তাই ছিলো আমাদের শেষ কথা। আর সেই করোনাই কেড়ে নিলো আমার বন্ধুর প্রাণ।

আলম তালুকদার একজন বহুমুখী প্রতিভার নাম। আপাদমস্তকে তিনি ছিলেন একজন গুণী লেখক। শিশুসাহিত্যিক হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও তাঁর সাচ্ছন্দ্য বিচরণ ছিল সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায়। কি না লিখেছেন তিনি, কবিতা, গান, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, কৌতুক, সব কিছুতেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।

কবি আলম তালুকদার ১৯৫৬ সালের ১লা জানুয়ারি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তার শৈশব কেটেছে গ্রামে। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আগে তিনি জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন।

তাঁর প্রথম বই ‘ঘুম তাড়ানো ছড়া’ প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তারপর আর পছন ফিরে তাকাননি। লিখেছেন দেদারসে। প্রকাশ করেছেন অসংখ্য বই আর লেখালেখি ছডিয়ে ছিটিয়ে দিয়েছেন পত্র পত্রিকায়, দেশে বিদেশে।

যতটা অবদান ততটা স্বীকৃতি অবশ্য মেলেনি এই পাঠকনন্দিত লেখকের। তবে জাতীয় পর্যায়ে সরকারি স্বীকৃতি না পেলেও পেয়েছেন হল-পালক অ্যাওয়ার্ড ১৯৯৬, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার ১৪০৫, জসীম উদদীন পুরস্কার ২০০১, কবি কাদির নওয়াজ পুরস্কার ২০০৪, স্বাধীনতা সংসদ পুরস্কার ২০০৬ এবং শিল্পাচার্য জয়নুল পুরস্কার ২০০৮।

তিনি ছিলেন এক দিলখোলা, সদাহাস্য, সাদা মনের নিরহংকার মানুষ। সবাইকে খুব সহজে আপন করে নিতে পারতেন আলম তালুকদার। তাঁর মধ্যে ছিল না কোন ভনিতা, ঈর্ষা, কিংবা স্বার্থপরতা।

এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে আমার হঠাৎ চলে যাওয়া এই খালেস দোস্ত তালুকদারকে আমার কষ্টের কথা মন খুলে আমাদের আড্ডার ভাষায় বলি:

কি কইরা ভুলি যে তোমারে
কি কইরা যে মনরে বুঝাই -
তোমার লগে আর হইবো না দেখা,
আড্ডায়, পিকনিকে, বইয়ের মেলায়,
হইবো না ছড়া আর কবিতার বাহারী বাহাস।

তোমার হাতের পান খামু না তো আর,
হইবো না খিস্তি খিউর ।
এইভাবে যায় কি কেউ? এ কেমন যাওয়া?
ডাকাইত্যা করোনার কালে -
ফাঁকি দিয়া গেলা চইলা আতকা এমন!
ঢাকার শহর বুঝি শুনশান
খালি হইয়া গেলো!

দোয়া করি, বিমূর্ত কবিতার মত ভালো থাকুন কবি আলম তালুকদার, ওপারে, মেঘ আর তারাদের সাথে। আর কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুল প্রার্থণা করি তাঁর শান্তি ও মঙ্গলের জন্য। বিদায়, বন্ধু। ভালোবাসা অপার।

ড. শরীফ আস্-সাবের
প্রাক্তন আমলা, সাংবাদিক ও লেখক। বর্তমানে মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর