শিবচরে এক পরিবারের ৪ জনই বাকপ্রতিবন্ধী। যারা উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল নদীরপাড় এলাকায় বসবাস করেন। এই বাকপ্রতিবন্ধীদের কেউ নৌকা চালিয়ে কেউ বা আবার মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। সাজাহান ফকির (সাজা) ও ময়ূরী বেগমের সংসারের ৭ সন্তানের ৪ জনই বাকপ্রতিবন্ধী। তাদের ৪ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের মধ্যে ৩ ছেলে, ১ মেয়েই বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না। তাদের এই প্রতিবন্ধিত্ব জীবন জন্মগতই বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা-মা। তবে এই ৪ বাকপ্রতিবন্ধীর ১ জন ৬ বছর আগে থেকে ভাতা পান, ২ জন তিন মাস ধরে পান।
তবে অন্যজন এখনো প্রতিবন্ধী ভাতা পায়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
সরজমিন আড়িয়াল খাঁ নদীর উৎরাইল খেয়া ঘাটে বাকপ্রতিবন্ধী দুলাল মাঝির নৌকা পার হওয়ার সময় স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাদের পরিবারের ৪ জনই বাকপ্রতিবন্ধী। নৌকা থেকে নেমে দুলালকে তোমাদের বাড়িতে যাব বললে নিরুত্তর হাঁটতে থাকে এই বাক প্রতিবন্ধী যুবক। বাড়ির কাছাকাছি যেতে না যেতেই গিয়ে দেখা গেল সেখানে প্রতিবন্ধী আরেক ভাই দাঁড়িয়ে আছে। এরপর তাদের সাথে নিয়ে তাদের বাড়ি গেলে জানা যায় সকলের পরিচয়।
বাকপ্রতিবন্ধী চার ভাই বোন বাড়ি গিয়ে কথা হয় তাদের বাবা সাহজাহান ওরফে সাজা ফকিরের সাথে। তিনি বলেন, তাদের বড় ছেলে বাক প্রতিবন্ধী বাচ্চু (৩৪) গ্র্রামে মাটি কাটার কাজ করেন। মেঝো ছেলে নয়ন ফকির (৩২) সেও মাটি কাটার কাজ করেন। তবে তিনি কোন ভাতা পান না এবং তার সেঝো ছেলে দুলাল (৩০) সে আড়িয়াল খাঁ নদীতে খেয়া চালান। আর তার মেয়ে ভাগ্য বেগম (২১) এরা চার ভাই বোন সকলেই জন্ম থেকে বাক প্রতিবন্ধী। তবে অন্য ২ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্য ছেলে আকাশ (২৫) সে এলাকায় ট্রাক চালক আর দুই মেয়ে নুপুর (২৮) তাকে পার্শ্ববর্তী সদরপুর উপজেলায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে এছাড়া আরেক মেয়ে বাতাশী (২৩) বর্তমানে তালকপ্রাপ্ত। বাড়ি গিয়ে তাদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলার সময় কাছে আসতে শুরু করে এই চার ভাই বোন।নিজেদের পরিচয় দিতে বললে, তারা কথা না বলতে পারলেও নিজের ভাষায় আমাদেরকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন তারা। তাদের সকলের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল এরা চার জনই প্রতিবন্ধী। ৪ ভাইবোনদের অপ্রকৃতিস্থ বোবা চেহারায় স্পষ্টতই ভেসে উঠছিল প্রতিবন্ধিত্বের চাপ। মুখে কথা নেই, হাসি নেই। নিষ্প্রাণ মুখচ্ছবি দেখলে বোঝা যায়, কষ্টের তাড়নায় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না তারা। এক অভিশপ্ত জীবন নিয়েই তাদের বেঁচে থাকা। প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জীবন নিয়ে চিন্তিত মা ময়ূরী বেগম বলেন, ‘তার সাত ছেলে মেয়ের মধ্য ৪ জনই বোবা। আর একটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে শুধু কথা বলতে পারে। কথা বলা মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন। একটা মেয়ের স্বামীর সাথে ঘর করছে, আর একটা বাড়িতে তালাকপ্রাপ্ত। সে এখানেই থাকে। ৯/১০ জনের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। হয়তো তাদেরকে নিয়ে কোনো রকম চইল্যা যাইতাছি। তবে ওদের নিয়ে চিন্তায় আছি।