× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চামড়া নিয়ে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

বাংলারজমিন

এবিএম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে
১২ আগস্ট ২০২০, বুধবার

বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য কাঁচা চামড়ার বাজার আজ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের পথে। ২০১৩ সালে হঠাৎ করে রপ্তানিমুখী চামড়া ব্যবসায় ধস নামে। এরপর থেকে এই শিল্পটির দিকে নজর নেই খোদ সরকার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কোনো মহলের। ব্যাপক সিন্ডিকেট, প্রতিবেশী দেশগুলোতে চামড়া পাচার, ব্যাংক লোনের অভাব, চরম নৈরাজ্যসহ নানা অজুহাতের মধ্যে দিয়ে বর্তমানে রপ্তানিমুখী এই চামড়া শিল্পটি নিষিদ্ধ পণ্য বিড়ি- সিগারেটের দামে এসে পৌঁছেছে। বর্তমান শিল্পটির অবস্থা এতটাই নাজুক যে, এক প্যাকেট বিড়ির দামে মিলছে একটি খাসি ও ভেড়ার চামড়া এবং এক প্যাকেট সিগারেটের দামে মিলছে গরু ও মহিষের চামড়া। অনেকে চামড়া বানের জ্বলে ভাসিয়ে দিয়েছে। সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার চিত্রও একই রকম। সরজমিনে দেশের সর্ববৃহৎ চামড়া বাজার পাকুটিয়ার হাট, বল্লা বাজার হাট, বটতলী কাঁচা চামড়ার হাটসহ ঘাটাইলের সব ক’টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী, ঋষি, ফড়িয়া, ছোট ও মাঝারি প্রকৃতির হাতে গোনা কয়েকটি ট্যানারির মালিক হাটে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় কিছু দালাল ও এজেন্টের মাধ্যমে চামড়ার দরদাম করাচ্ছেন ও বিড়ালের মতো কাঁটা বেছে বেছে বড় আকারের চামড়াগুলো নামমাত্র মূল্য দিয়ে ক্রয় করছেন।
ঢাকা, সাভার, হেমায়েতপুর, জামালপুর, শেরপুর, সরিষাবাড়ী, রৌমারী, রাজিবপুর, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌসুমি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা হাটের আগের দিন রাতেই  ট্রাক, ভটভটি, নছিমন, ভ্যানসহ ছোট-বড় যানবাহনে করে শত শত পিস চামড়া নিয়ে হাটে এসে জড়ো হয়েছেন বিক্রি করার উদ্দেশ্য। সারা হাটের জায়গাসহ টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপরে বসেছে বিশাল চামড়া বাজার। সারি সারি স্তূপাকারে চামড়া উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ চামড়া বাজার পাকুটিয়া (পাকিস্তানের) হাটে। ছোট, বড় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় হাট মুখরিত হয়ে উঠলেও সহজে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বল্লা বাজার থেকে কয়েকটি ট্যানারি মালিক ও সাব ট্যানারি এজেন্সির কয়েকজন ক্রেতা ব্যতীত বড় কোনো ট্যানারি মালিক হাটে আসেননি। যাও এসেছে তারা বড় বড় চামড়াগুলো উলট-পালট করে দেখছেন আর বিড়ালের মতো কাঁটা বেছে বেছে বড় চামড়াগুলোর দরদাম নিয়ে আলোচনা করছেন। একটু ছোট ও মাঝারি আকৃতির চামড়া পড়ে রয়েছে যেখানকার চামড়া সেখানেই। অন্যান্য বছর মাঝরাত থেকে চমড়া বেচাবিক্রি শুরু হলেও এ বছর বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও তেমন চামড়া বিক্রি করতে দেখা যায়নি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেয়ার পরও কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বেশ ক’জন ট্যানারি মালিক ও আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর গতবারের চেয়ে মাত্র পাঁচ শতাংশ চামড়া কম উঠেছে। ধারণা ছিল বন্যা ও করোনা মহামারিতে পশু কোরবানি কম হবে যার ফলে চাহিদা বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাছাড়া ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তর, ট্যানারি মালিকদের আর্থিক সংকট, আড়তদারদের সময়মতো পাওনা পরিশোধ করতে না পারা, চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও কাটিং খরচ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়া, শ্রমিক সংকট, বিশ্ব বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে যাওয়াসহ গত ২-৩ বছর আগের চামড়া গোডাউনে পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন তারা। অথচ সরকার এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন লবণ যুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫-৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ২৮-৩২ টাকা। খাসির চামড়া গত বছরের তুলনায় ১৮-২০ টাকা কমিয়ে এ বছর ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার পরও কেন এমন ছন্দপতন তার উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ সরকারকে দোষারোপ করছেন আবার অনেকেই সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করছেন। মানবজমিন-এর কাছে ক্রেতা, বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ তাদের নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন। ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী নন্দ দুলাল এসেছেন ৭৯০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে। তিনি বলেন, সেই ভোর থেকে এখন (বিকাল) পর্যন্ত চামড়া উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখিয়েছি প্রায় ৪৫-৫০ বার কিন্তু এখনো এক পিস চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। যে দাম বলছে তাতে চামড়া ঝিলানু, লবণ দেয়া, শ্রমিক খরচ, গাড়ি ভাড়া ও হাটের খাজনা মিলিয়ে গড়পড়তা অর্ধেক টাকাও উঠবে না। এই চামড়া যদি পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে লবণ, গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ দিতে হয় তাহলে বাড়ি-ভিটা বিক্রি করে ধার-দেনা পরিশোধ করতে হবে। সিরাজগঞ্জ থেকে ৬৫৭ পিস চামড়া নিয়ে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী হাবিব মিল্লাত। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় হাই কোয়ালিটির চামড়া নিয়ে এসেছিলাম। যে দাম বলছে (বড় ও মোটা চামড়ার দাম বলছে ৩৭৫ থেকে ৪৩০ টাকা) তাতে আমার প্রতি চামড়ার পড়তা আরো অনেক বেশি। এ বছর আমাকে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে। এ ব্যাপারে হাটে চামড়া ক্রয় করতে আসা কয়েকজন ট্যানারি মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা তথ্য দিতে অপারগতা ও অনীহা দেখান। তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা চালান। তবে মো. নাঈম বিশ্বাস (পোস্তা লালবাগ ট্যানারি) ও বাপ্পি মজুমদার (বি,এন,এস ট্যানারি), মো. লিয়াকত আলী (এ্যাপেক্স ট্যানারি) জানান- আমরা পরিস্থিতির স্বীকার। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা থাকার কারণে ও ব্রাজিল, চীন, ইন্ডিয়াসহ বেশ ক’টি দেশের চামড়া বাজার আমাদের দেশের তুলনায় কম দাম থাকায় তারা আমাদের দেশ থেকে চামড়া নিচ্ছে না। গোডাউনে ২-৩ বছর আগের চামড়া মজুদ আছে। সেগুলো বিক্রি করতে পারিনি। আবার নতুন করে বেশি দামে চামড়া কিনে পথে নামতে হবে। কোটি কোটি টাকা লসে আছি। আমাদের কিছু বলার নেই। সরকার আমাদের সহযোগিতা না করলে মাঠে মরতে হবে। বিষয়টি নিয়ে চামড়ার হাট মালিক সমিতির মো. আবির হোসেন সজীব ও মো. এমদাদুল হক খান ভুলু জানান, গত রোজার ঈদে যে পরিমাণ চামড়া আমদানি হয়েছিল এবার কোরবানির ঈদেও সে পরিমাণ চামড়া ওঠেনি। করোনা মহামারি ও বন্যার কারণে দেশের সর্ববৃহৎ চামড়া বাজারটি আজ বিলুপ্তির পথে। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে হাট ডেকে আনতে হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও এ বছর উঠবে না। সব মিলিয়ে আমরা খুবই বেকায়দায় আছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর