× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পিয়াজের ঝাঁজ: নয়ন জল বিশ্বযুদ্ধ

মত-মতান্তর

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই অনেকে বলেছিলেন পরবর্তীটা হয়তো হবে যুদ্ধাস্ত্রের আবরণে মগজ ঘর্ম নয়ন জল বিশ্বযুদ্ধ। এই বিশ্বযুদ্ধটা হতে পারে অথ আগ্রাসন কৌশলসহ এথনিক খাদ্য কালচার, ঘনবসতি দেশের বাণিজ্য চাহিদাকে ভিত্তি করে। কোন পণ্যের মূল্য ১০ গুণ বেড়ে গেলেও এর চাহিদা কমে না, তার নাম হতে পারে স্বাদ- নেশা মনলা ওরফে পিয়াজ-মরিচ। কৌশলী চানক্য ব্যবসায়ীরা সে সুযোগটাই নিয়ে থাকে। এ উপমহাদেশে যা ঘটে চলেছে।

ঐতিহাসিক তথ্য বলা যায়, ১৯৯৪ প্লেগ রোগ পরবর্তীকালে পিয়াজের মূল্য বেড়ে যাওযার পরিস্থিতিতে (যেমন পিয়াজ, আদা+) সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি টাকার মসলা-পিয়াজ উৎপাদন ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল (নেত্রকোণার ’হাসি চাই না, পৃষ্ঠা ৯০; বাংলাবাজার পত্রিকা ১লা নভেম্বর ১৯৯৪), প্রকল্প শেষে যার হিসাবটা পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। আমদানি বাড়িয়ে, শুল্ক মাফ দিয়ে ও ঋণ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ মেনেজমেন্টের এ ধরনের সস্তা পদ্ধতি এখনো জনপ্রিয়তা হারায় নাই। তার বড় প্রমাণ গত বছরের পিয়াজ নিয়ে রপ্তানিকারক দেশের বাঁকা চোখের হাসি দিয়ে পিয়াজের মেগা বাণিজ্য এবং বর্তমান বছরের আশু জনবিধ্বংসী পিয়াজ কা-।

পিয়াজ বাংলাদেশের জন্য একটি আর্থ-রাজনৈতিক গণচাহিদা উপযোগী পণ্য।
যে পণ্য দেশেও উৎপাদন করা যায় আবার দূরে-কাছে বা সরাসরি সীমান্ত পার করেও আনা যায়, সেসব পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার মর্যাদাই আলাদা। পিয়াজ বাংলাদেশের জন্য এমনি একটি গণপছন্দের পণ্য। তাই বলছিলাম ভিন দেশের ধরা ছোঁয়ার বাইরের পিয়াজ রপ্তানি কা- নিয়ে মাতামাতি করে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। পিয়াজ বিষয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব করণীয়ে ফাঁকি থাকলে তার দোষ-দ্বায় আমাদেরই নিতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, রপ্তানি বন্ধের ঘোষণাদানকারী দেশকে পুনরায় রপ্তানি চালু করার জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই রপ্তানি চালু হলে আমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু কথা হলো- কাউকে পত্র লিখতে হলে একটি সূত্র বা রেফারেন্স লাগে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি সেই রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানি বন্ধের সরকারি পত্র সূত্রটি পেয়েছেন? নাকি ’মাহবুবা রহমানের সেই পল্লীগীতি- ’সে যেন করলো রে আমায় কি যেন কি দিয়া, আমি কইতে না’রি সইতে না’রি গো’। বিষয়টির বাকি ব্যাখ্যা যার যার।

পিয়াজ নিয়ে নিজেদের ফাঁকি বিষয়ে যদি বলি, বিগত বছরের সার্বজনীন দূর্নামী পিয়াজ কা-ের পরও পিয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকর উদ্যানতাত্বিক প্রযুক্তি ও বাণিজ্য শৃংখলাবিধি প্রতিপালন করার দৃশ্যত: তেমন কোন উদ্যোগ নজরে আসে নাই। শীতকালীন রবি ফসলের জন্য দেয়া প্রণোদনার অতি সামান্য অংশই গেছে পিয়াজের চাষীর ভাগে। বাণিজ্য মন্ত্রী হয়তো তখনই ঠিক করে রেখেছিলেন যে উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা করা আহাম্মকি। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বেশি বেশি আমদানি করলেই সাবাস পাওয়া যাবে। তাই সমস্যা পুরোপুরি সৃষ্টি হওয়ার আগেই তিনি বল্লেন, এবার আর আগের মত ভুল করবো না, আগে-ভাগেই বা¤পার পরিমাণ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেব। বাম্পার আমদানি সুপার বাম্পার লাভ। কোথা থেকে কি ভাবে আনবেন? বলেন নাই।

দেশের পিয়াজ উৎপাদন বন্ধ করে মন্ত্রীমহোদয়ের এই বাম্পার লাভজনক আমদানি ঘোষণা কি এদেশের কৃষি ও কৃষকের তথা দেশীয় স্বার্থের পক্ষে গেল? কৃষি ডাইরি ২০২০ অনুসারে দেশে অথচ দেশে গ্রীষ্মকালীনসহ প্রায় ২.৬ লাখ হেক্টর জমিতে এখনই ৩০-৩২ লাখ টন পিয়াজ উৎপাদন সম্ভব, ফলে আমদানির কোন প্রয়োজনই হবে না। এতসব সফলতার পরও দেশে কাক্সিক্ষত পিয়াজ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব না দিয়ে বাম্পার আমদানির চিন্তা কিছুতেই সুস্থ বুদ্ধির ইঙ্গিত দেয় না।

বিগত ২ দশকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনসটিটিউট বা বারি কৃষি গবেষণা দ্বারা ৭টি উচ্চ ফলনশীল পিয়াজের নতুন মধ্যে জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ৩টি গ্রীষ্মকালীন জাত এবং একটি উচ্চ ফলন শীল পাতা পিয়াজের জাত। গ্রীষ্মকালীন বারি পিয়াজ-৫। বর্ষা শেষে তোলা যায় ফলন প্রায় ২২টন/হে.। এর চেয়ে আর কি সুবিধা চাই? আরো জনপ্রিয় সুস্বাদু ঝাঁজ সম্পন্ন দেশীয় জাতের মধ্যে রয়েছে ফরিদপুরী, সালতা, তাহিরপুরী, সুখসাগর, লালতীর, হাইব্রিড, সালাদ, সবজি পিয়াজ ইত্যাদি।

সরকার মনে রাখতে পারেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করলে দোষ হতে পারে একটা যে মাল শর্ট, কিন্তু ঢালাও আমদানি করেও যদি মূল্য নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে দোষ হবে এক বস্তা। আর জনসাধারণ যদি খাবার পরিমিতি নিয়ন্ত্রণ করেন তবে তা হবে সোনায় সহযোগিতা।

এ ছাড়া পিয়াজের সার, বালাই দমন, সংরক্ষণ সংক্রান্ত বহু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা হোক সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য করণীয় হলো-

১. নিজের ঘরে পিয়াজ স্টক না করা,

২. ছাঁদে পাতা ও মুড়ি কাটা পিয়াজ লাগানো,

৩. পিয়াজ অতিখাওয়া থেকে বিরত থাকা

৪. পিয়াজ ঢালাও আমদানির শুল্ক সুবিধা না দেয়া,
৫. উপজেলায় আগাম পাতা পিয়াজ ও বারি পিয়াজ-৫ লাগানো শুরু করা এবং আতংক সৃষ্টি নিরুৎসাহিত করা।

করোনাক্রান্ত দেশ বিশেষ থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ডিগ্রেডেড পিয়াজ আমদানি করা ও রান্না না করে সরাসরি খাওয়া ও সালাদ পিয়াজ নীরব ঘাতকও হতে পারে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর