× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্মরণ / আতাউস সামাদ

এক্সক্লুসিভ

কাজী রওনাক হোসেন
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক আতাউস সামাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর। দেখতে দেখতে আটটি বছর পেরিয়ে গেল তাঁর প্রয়াণের। আতাউস সামাদ ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক এবং সাংবাদিকতার আদর্শ। স্যারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষেই পেয়েছিলাম। তিনি আমাদের সাম্প্রতিক বিশ্ব (Contemporary World) ও রিপোর্টিং পড়াতেন। পরবর্তীতে দৈনিক বাংলায় কর্মসূত্রে স্যারের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখা হতো। পদে পদে তাঁর কাছ থেকে শিখতাম ‘নিউজ সেন্স, ‘নোজ ফর নিউজ’ ইত্যাদি বিষয়গুলো। পারিবারিক কারণে স্যার আমাকে অনেক স্নেহ করতেন।
স্যারের পুরানা পল্টনের বাসাতেও বহুবার গিয়েছি এবং অনেক কিছু জেনেছি, শুনেছি, দেখেছি। স্যারের ছেলে শনঙ্কুর সঙ্গে ডালাসে দেখা হয়েছিল। স্যারের অনেক ইচ্ছে ছিল ছেলে ঢাকায় থাকুক। কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি।
শিক্ষক হিসেবে আতাউস সামাদ স্যার কেবল পুঁথিগত বিদ্যার ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন না। তিনি শিক্ষার্থীদের আদর্শ ও নীতি শিক্ষাও দিতেন। অর্থের প্রতি স্যারের মোহ কখনো ছিল বলে আমার জানা নেই। আদর্শ ও নীতির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অটল ও বলিষ্ঠ। সাংবাদিকতায় তিনি কখনো আপস করেননি। ৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যখন বাংলাদেশ উত্তাল, তখন বিবিসি থেকে তার কণ্ঠে রাজনৈতিক তৎপরতা বিশ্লেষণের খবর শোনার জন্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করতেন। কর্মক্ষেত্রে তাঁর বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতা ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও প্রখর। দূরদর্শী ছিল তাঁর ভাবনা-চিন্তা। বেশির ভাগ সাংবাদিকই কোনো মিটিং মিছিলে গেলে কাজটি হলেই চলে আসেন কিন্তু স্যারকে দেখেছি মিছিলের শেষ পর্যন্ত থাকতেন। মিছিল শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আসতেন। এ কারণে মিছিলের শুরুতে কোনো কিছু না ঘটলেও শেষ পর্যায়ে যখন পুলিশের লাঠিচার্জ বা অন্য কোনো গণ্ডগোল হতো, স্যার সেটা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে নিতেন। অনেকেই সেটা মিস করে। স্যার আমাদের দেশপ্রেমের কথা বলতেন। দুঃখ করতেন এই বলে যে, ‘এই দেশে দেশপ্রেমেরই বড় অভাব’। বাইরে থেকে স্যারকে যত গুরুগম্ভীর মনে হতো, বাস্তবে তিনি ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির। আমরা কেউ যখন তাঁর কাছে কোনো পরামর্শ বা কিছু বোঝার জন্য যেতাম, স্যার একটুও বিরক্ত হতেন না। তিনি সুন্দরভাবে সব বুঝিয়ে দিতেন। যেভাবে তিনি ক্লাসে অত্যন্ত সহজভাবে সব বোঝাতেন ঠিক সেভাবে। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর আদর্শ এখনো ধরে রেখেছে। ১৯৫৯ সালে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হওয়ার পর, এতো দীর্ঘ সময়ে তাঁকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার পথ থেকে কেউ একচুল সরাতে পারেনি। তাই সাংবাদিকতায় একুশে পদক পেলেও নিজের আমৃত্যু আঁকড়ে ধরে রাখা নিজের সততা ও আপসহীন মনোভাবের জন্য তাঁকে বিভিন্ন সময় নিষ্পেষণের শিকার হতে হয়েছে। সাংবাদিক হিসেবেই হোক, বা মানুষ হিসেবে, আতাউস সামাদ স্যারের মতো নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অনুশীলন এখন বড্ড প্রয়োজন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর