× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নয় একে সাত এবং ধর্ষণের শাস্তি

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
১৪ অক্টোবর ২০২০, বুধবার

যেকোন কাজ করতে গেলে ভেবে চিন্তে পা ফেলতে হয়। জীবনে চলার পথে ভুল করা যাবে না। হিসেব কষে এগুতে হবে। একটি উদাহরণ দেয়া যাক- এক শিক্ষক তার ক্লাসে ব্লাকবোর্ডে নয়-এর নামতা লিখছেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে। তিনি লিখলেন, নয় একে সাত, নয় দুগুনে আঠার, তিন নয় সাঁতাশ, চার নয় ছত্রিশ, পাঁচ নয় পঁয়তাল্লিশ, ছয় নয় চুয়ান্ন, সাত নয় তেষট্টি, আট নয় বাহাত্তর, নয় নয় একাশি, নয় দশে নব্বই। শিক্ষক বোর্ডে লিখে পেছন ফিরে দেখলেন শিক্ষার্থীদের কেউ হাসছে। কেউ কানাঘুষা করছে।

এবার শিক্ষক শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বললেন, শোন- আমি ইচ্ছে করেই নামতায় ভুল করেছি।
কিন্তু এখানে দশটি নামতার একটি ভুল হয়েছে। বাকি নয়টি কিন্তু ঠিক আছে। এই একটি ভুলের জন্যই তোমরা কেউ হাসছো। কেউ কানাঘুষা করছো। তোমাদের বলতে চাই, জীবনে চলার পথটাও এরকম। তুমি চলার পথে হাজারটা ভাল কাজ ও ঠিক কাজ করার পাশাপাশি একটি ভুল করলে সব শেষ। এই একটি ভুল নিয়ে সবাই তোমার সমালোচনা করবে। কিন্তু এত যে ভাল কাজ করেছ তার কোন প্রশংসা পাবেনা। এই মুহুর্তে আমাকে নিয়ে তোমরা যা করছ। আমি নয়টি নামতা ঠিক করেছি এর জন্য কিন্তু তোমরা আমাকে ধন্যবাদ দাওনি। একটি ভুল তোমাদের মনে গেঁথে গেছে। আমাদের সমাজ সংসারও ঠিক তেমন। তাই জীবনে চলার পথে সবসময় ভেবেচিন্তে এগুবে।

সত্যিই আমরা কি ভেবেচিন্তে এগুচ্ছি? চারদিকে তাকালে দেখা যায় ভুল শুদ্ধ নয়, নিজের স্বার্থ ঠিক রেখে সামনে এগিয়ে যাই। কে কি বলল, সেদিকে তাকানোর ফুরসৎও নেই। সমাজে আরেকটি জিনিষ খুব বেশি দেখা যায়, নিজেকে মেলে ধরার প্রবণতা। নিজে যা পারবে তা-ও বড়াই করে বলে, যা না পারবে তা-ও বলে। এরা নিজেদের খুব চালাক ভাবে। মনে করে, আমি যা বলছি বা করছি কেউ বুঝছে না। সাধারণ মানুষ সব বোকা।

সমাজে আরেক শ্রেণির লোক আছে যাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কিন্তু জাহির করে গোটা দুনিয়াটাই তার। তাকে নিয়ে লোকে হাসে। এটা সে-ও বুঝে। কিন্তু না বুঝার ভান করে। মনে করে বলুক না যা বলার। তাতে আমার কি? আমিতো ভালই আছি। ওই মুচির কাহিনীর মতোই ঘটনা। এক মুচি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। অপর পাশ দিয়ে আসছেন আরেক ব্যক্তি। কোন কিছু নিয়ে দু’জনের মধ্যে হলো কথা কাটাকাটি। এক পর্যায়ে মুচির ওপর চড়াও হলো ওই ব্যক্তি। একের পর এক কিল, ঘুষি, থাপ্পড় দিচ্ছেন আর মুচি বেচারা বলছেন, ‘আরেকটা দিয়ে দ্যাখ। আরেকটা দিয়েই দ্যাখ।’

গ্রামে একটি প্রবাদ আছে, এক মণ দুধে এক ফোটা চনা মানে গরুর মুত্র পড়লে সবই শেষ। দুধ আর দুধ থাকে না। নষ্ট হয়ে যায়।

ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলছে। আজ সকালেও রাজধানীর শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা হয়েছে। ধর্ষণ, নিপীড়ন ও পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে এই পদযাত্রা। সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পর চারদিক থেকে ধর্ষণের খবরই আসতে থাকে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিধবাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলে। রাজপথে নেমে আসে ছাত্র জনতা। তাদের দাবি, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে হবে। সরকার আন্দোলনের মুখে দ্রুত তা মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারি করেন। এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তারপরও আন্দোলন কেন? তাহলে কি নয় একে সাত হয়েছে? কিছু না ভেবেই মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছিল? এখন আরও ভাবনা বেড়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর