× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডের মেয়াদ ও খরচ আর কত বাড়বে?

এক্সক্লুসিভ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
২০ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড বাস্তবায়ন প্রকল্পে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু সেই থেকে এ পর্যন্ত তিনবার মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় তিনগুণ করার পরও তিনটি ফিডার রোডের একটিরও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি এখনো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আরো বাড়তে পারে। তা করার জন্য ইতিমধ্যে আরো কিছু কাজ সংযুক্ত করে আউটার রিং রোড ফেজ-২ নামে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসেরের মুখেও একই কথা। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে মে পর্যন্ত প্রায় দুই মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল।
তখন দু’টি কিস্তির টাকাও ছাড় হয়নি। এরপরও মূল সড়কের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। বাঁধে ব্লক ডামিপং, ওয়াক ওয়ে এবং প্রতিরোধ দেয়ালের বাকি কাজ চলমান। এ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যয়ও বাড়বে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রকল্পটির মেয়াদ ও খরচ আর কত বাড়বে। প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত শেষ হবে ততই মঙ্গল। কারণ সড়কটিতে যান চলাচলে বড় রকমের সুফল পাওয়া যাবে। তাই দ্রুত বাকি কাজ শেষ করে সড়ক চালু করলে সবার জন্য ভালো হয়। সূত্র মতে, উপকূলীয় বাঁধ শক্তিশালী করা, নগরীর যানজট কমানো, আবাসন-বাণিজ্য ও পর্যটন উৎসাহিত করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সড়কটির নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সিডিএ। এটি কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের সঙ্গেও যুক্ত হবে।
২০১৩ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জুলাইয়ে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সে সময় সংশোধিত ব্যয় নির্ধারিত হয় এক হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। মোট ৯০ একর জমি অধিগ্রহণে খরচ ধরা হয় ৪৯৩ কোটি টাকা। মাটি ভরাট কাজে ব্যয় ছিল ১০৬ কোটি টাকা। বাঁধ এলাকায় বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয় ৩৩২ কোটি টাকা। তখন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন।
এরপর ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বেড়ে হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। মৌজা দর বদল হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে হয় ৭৫৫ কোটি টাকা। মাটি ভরাটের খরচ বেড়ে হয় ৩৪৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের জুন। শুরুতে ঢেউ প্রতিরোধক দেয়াল না থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৩০ কোটি টাকা। মোট প্রকল্প ব্যয়ের সরকার দিচ্ছে এক হাজার ৭২০ কোটি টাকা ও জাইকা দিচ্ছে ৭০৬ কোটি টাকা। এরপরও আর এক দফা সময় বাড়িয়ে করা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। তবে এই সময়েও কাজ শেষ হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, শুরুতে নগরীর সঙ্গে সড়কটির সংযোগ স্থাপনে স্টিল মিল নারিকেলতলা-বেড়িবাঁধ (ফিডার রোড-১), বড়পোল-আনন্দবাজার-বেড়িবাঁধ (ফিডার রোড-২) এবং সাগরিকা-স্টেডিয়াম-বেড়িবাঁধ (ফিডার রোড-৩) নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ফিডার রোড-১ এর কাজ এখনো শুরু হয়নি। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। ফিডার-৩ এর কাজ চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই শেষ হবে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় ফিডার রোড-২ বাদ দেয়া হয়। ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিম্ন আদালতে মামলা থাকায় ৮০ শতাংশই পরিশোধ সম্ভব হয়নি। তবে ফেজ-২ তে এই ফিডার রোডটি করা হবে। পাশাপাশি রিং রোড এখন যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এক্সপানশন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের সভায় এই প্রস্তাবনা দিয়েছে। টানেল চালু হলে গাড়ি ৩০-৪০ শতাংশ বাড়বে। তাই এটা দরকার।
সরজমিন দেখা যায়, পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা রাসমনি ঘাট পর্যন্ত পুরো রোডের কাজ প্রায় শেষ। তবে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজও শেষ। এখন বাকি আছে সড়কের ধারে ব্লক বসানোর কাজ। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ বাকি থাকার কথা বললেও সমুদ্র উপকূলের এ সড়কে সৌন্দর্যের কোনো ঘাটতি নেই খোলামেলা পরিবেশের।
নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (বন্দর) তারেক আহম্মেদ বলেন, ফিডার রোড না থাকায় বন্দর ও বিভিন্ন কনটেইনার টার্মিনাল থেকে পতেঙ্গা হয়ে আউটার রিং রোডে উঠতে হয় পণ্যবাহী ভারী যানবাহনকে। পাশাপাশি নগরীতে প্রবেশের জন্য টোল রোড ধরে ফৌজদারহাট হয়ে ঘুরে আসতে হয়। দক্ষিণ কাট্টলীর খেজুরতলা ঘাট এলাকায় টোল রোডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আউটার রিং রোড। এখান থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোল রোডে গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে সড়কটির সুফল পুরোপুরি মিলছে না।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) একটি সমীক্ষা করে নগরীর যোগাযোগ অবকাঠামো বাড়াতে আউটার রিং রোড নির্মাণের উপর গুরুত্ব দেয়। মাস্টারপ্ল্যানেও এটির উল্লেখ ছিল। চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধের উপর সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক নির্মাণে বাঁধ এলাকায় প্রায় ২০ হাজার গাছ কাটা হয়। ষাটের দশকে নির্মিত চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগের বাঁধের উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। প্রকল্পের অধীনে বাঁধটি আরো ১০ ফুট উঁচু করা হয়েছে। বাঁধের নিচের অংশ ৩০০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। আর উপরের সড়কের প্রশস্ততা ৮০ থেকে ৮৪ ফুট। যা আগে ছিল ১৬ থেকে ২৪ ফুট।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর