× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দাম বাড়িয়ে ৩৫ করলো সরকার / আড়তে আলু নেই

এক্সক্লুসিভ

স্টাফ রিপোর্টার
২১ অক্টোবর ২০২০, বুধবার

খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে আরো ৫ টাকা বাড়ালো সরকার। এর আগে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। যদিও এখন পর্যন্ত আলুর দাম কমাননি ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় আরো ৫ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হলো। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আলুর দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়। অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে  ৩৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে এবং কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ এর ধারা ৪ (ঝ) অনুযায়ী এই দাম নির্ধারণ করা হয়। এই নির্ধারিত মূল্যে কোল্ড স্টোরেজ, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাসহ ত্রিপক্ষই যেন আলু বিক্রয় করেন সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের আলুর দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি জানান, প্রতিকেজি আলুর খুচরা দাম নতুন করে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল কৃষক যাতে এবছর ভালো দাম পায়। কিন্তু দাম বাড়াতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। এ বছর আলুর ব্যবহার অনেক হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকেও আলু আমদানি করার চেষ্টা চলছে। ইরানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাজার নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। এজন্য আমরা পুনর্বিবেচনা করছি। খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম বাড়াতে হবে।  আমাদের আলু চাষের এলাকা কমেছে, উৎপাদনও কিছু কম হয়েছে। এরমধ্যে কোভিড মহামারি এলো। দাম বাড়াতে গিয়ে এমন একটা বিপর্যয়কর অবস্থা হবে ভাবিনি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, রিকশাওয়ালা-ভ্যানওয়ালা, শ্রমিক তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। এতো দাম চিন্তাই করা যায় না। ৫০ টাকা কিংবা এরও বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার ত্রাণের মধ্যে আলু দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরও আলু দিতে বলেছিলাম। এ জন্য আলুর ব্যবহারটা বেশি হয়েছে। এ ছাড়া গত ৫ মাস ধরে টানা বৃষ্টিতে শাক-সবজি অনেক পচে গেছে, মানুষ আলুর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তা না হলে কোনোক্রমেই আলুর দাম এতো বেশি হওয়ার কথা নয়। আশা করি, নতুন আলু এলে দাম কমে যাবে। এবার আলু অনেক হবে। আলুতে আমাদের ঘাটতি থাকার কোনো কারণ নেই। আমাদের পর্যাপ্ত আলু হয়। আশা করি ভবিষ্যতে এই সমস্যা হবে না। আমরা এখনো চিন্তা করছি আলু কীভাবে রপ্তানি করা যায়। এই বিপর্যয়ের জন্য আমরা খুবই দুঃখিত।
গত ৭ই অক্টোবর প্রতি কেজি আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু এ দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। ওই চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় ১.৯ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭.৯ লাখ টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে প্রায় ৩১.৯১ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই। অধিদপ্তরের হিসেবে, এ মৌসুমে একজন চাষির প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। আর মৌসুমে যখন হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে তখন প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৪ টাকা। প্রতি কেজি আলু হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩.৩৬ টাকা, বাছাই খরচ ০.৪৬ টাকা ও ওয়েট লস ০.৮৮ টাকা, মূলধন সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। এক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রিমূল্যের ওপর ২-৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে হিমাগারের আলুর দাম ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আলু সংরক্ষণকারীর লাভ হয় কেজিপ্রতি ২ টাকা। অন্যদিকে আড়তদারি, খাজনা ও লেবার বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। সেক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে দাম পড়ে ২৩.৭৬ টাকা। এর সঙ্গে মুনাফা ধরে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভোক্তা পর্যায়ে সেটা ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় অধিদপ্তর। কড়ায়-গ-ায় হিসাব করে সরকারের এমন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার পরও কেন আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে নাÑ এমন প্রশ্ন সাধারণ ভোক্তাদের। তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা সরকারের কোনো নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করছে না। কিন্তু সরকার চাইলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে অদৃশ্য কারণে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর