× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রায়হান হত্যা / সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পরই গ্রেপ্তার কনস্টেবল টিটু

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সিলেট সফরের পর পরই আলোচিত রায়হান হত্যার আসামি গ্রেপ্তার শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। দুপুরের পর পরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মুহিদুল ইসলাম এ হত্যায় জড়িত বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করেন। এর আগ পর্যন্ত সিলেট মহানগর পুলিশের লাইনে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় টিটু নজরবন্দি ছিল। ফলে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার প্রথম কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করলো পিবিআই। মামলার তদন্তকারী পিবিআই ইন্সপেক্টর মুহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন- কনস্টেবল টিটু সিলেটের পুলিশ লাইনে ছিল। তাকে দুপুরের পর পিবিআইয়ের তত্ত্বাবধানে আনা হয়। তাকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকালে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমানের আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ সময় কনস্টেবল টিটুর ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে- এখনো গ্রেপ্তার হয়নি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। তার কোনো খোঁজ পুলিশের কাছেও নেই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্ধ্যার দিকে জানিয়েছেন এসআই আকবরকে গ্রেপ্তারের খবর তার কাছেও নেই। তবে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন গতকাল রায়হানের মায়ের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানানোর পর বলেছেন- পলাতক থাকা এসআই আকবর গ্রেপ্তার হবেই। তিনি সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল দুপুরে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সিলেটের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি দ্রুত এসআই আকবরকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের তাগিদ দেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন- এসআই আকবর বিদেশে থাকলে তথ্য দেন, তাকে ফিরিয়ে আনা হবে। রায়হান খুনের ঘটনা সিলেটে ক্ষোভ বিরাজ করছে।  বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়- পুলিশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয় ঘটনার পর পরই এসআই আকবর পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এরইমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। আকবর পালিয়ে যাওয়ার পেছনে কারো হাত রয়েছে কী না সেটি তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুতরাং পুলিশ সোচ্চার রয়েছে বলে জানানো হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাজপথে বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানকেও ধাওয়া করে। ব্যবসায়ীরা ঘোষণা দিয়েছে- রায়হানের সব খুনি গ্রেপ্তার না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় নগরীর বিভিন্ন মার্কেট থেকে মিছিল সহকারে ব্যবসায়ীরা কোর্ট পয়েন্টে আসেন। সেখানে তারা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে ব্যবসায়ী নেতারাও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদসহ ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের একপর্যায়ে বন্দরবাজার এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলো পুলিশের একটি ভ্যান। সমাবেশের পেছনের দিক থেকে ওই ভ্যানে ইটপাটকেল ছুড়া হয়। তবে- এ সময় পুলিশের গাড়িটি দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে কেউ আহত হননি। ব্যবসায়ী নেতারা এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ১১ই অক্টোবর ভোরে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয় নগরীর নেহারীর বাসিন্দা যুবক রায়হানকে। পুলিশের নির্যাতনের কারণে ওই দিন সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রায়হান। ঘটনার ৯ দিনের মাথায় গতকাল সিলেট সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার আগে সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে রায়হানের মাকে সান্ত্বনা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রায়হানের মা জানিয়েছেন- ‘আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমাদের শঙ্কা। আকবর এখনো বাইরে। সে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং আকবর গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি ফিরে আসবে না। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আকবরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।’ এ সময় তিনি আরো জানান- ‘রায়হানের দাদা একজন পুলিশ ও বাবা একজন বিজিআর সদস্য ছিলেন। আমরা কখনো ভাবিনি পুলিশই এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে।’
রায়হানের বাড়িতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী: বেলা দেড়টার পর রায়হানের বাড়িতে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ সময় তার সঙ্গে স্ত্রী সেলিনা মোমেনসহ আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন। রায়হানের মায়ের সঙ্গে দেখা করেন মন্ত্রী। এ সময় রায়হানের মাকে আশ্বস্ত করে বলে- প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস আকবর এখনো দেশের বাইরে যায়নি। কারণ সীমান্তগুলোকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করে দিয়েছি। তবে আকবর বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। এর আগে সিলেটের রাজন হত্যার আসামিকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ড. মোমেন। এ সময় তিনি এসআই আকবরকে পুলিশের জন্য লজ্জার বিষয় উল্লেখ করে বলেন- এ রকম দুই একজন কুলাঙ্গারের কারণে পুলিশ বাহিনীও লজ্জিত। পুলিশের কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে না। সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। মন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় জড়িত সদস্যদের বাঁচাতে কোনো ধরনের অপচেষ্টা করেনি পুলিশ। আমাদের পুলিশ খুবই দক্ষ। অনেক বড় বড় অপরাধীদের গ্রেপ্তারে তারা সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনায় একজন ছাড়া বাকি সবাই নজরদারিতে আছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের সবাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান। ফলে রায়হানের সুষ্ঠু বিচার হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই ধরনের বাজে কাজ যেন সিলেটে আর কোথাও না ঘটে এরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলার সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, স্থানীয় কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান উপস্থিত ছিলেন। এদিকে- নিহত রায়হানের শিশুর পড়ালেখার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন দুই লাখ টাকা প্রদান করেছেন। রায়হানের মায়ের কাছে মন্ত্রী তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই টাকা দেন। এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর