মার্চ থেকে দেশের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ ছিল। সব শেষ গেল মাসে টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফরও স্থগিত হয়। তাই বিসিবি মাঠে ক্রিকেট ফেরাতে তিন দল নিয়ে আয়োজন করে প্রেসিডেন্টস কাপ ওয়ানডে টুর্নামেন্টের। অবশ্য এর আগে দুই মাস ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলনের সুযোগ দিয়েছিল তারা। শুধু তাই নয় লঙ্কা সফরের জন্য ২৭ জন ক্রিকেটার নিয়ে ক্যাম্পও শুরু করেছিল। সেখানে লম্বা সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রস্তুত করেছে। কিন্তু বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে তাদের সেই অনুশীলনের প্রভাব একটুও দেখা যাচ্ছে না। আসরে ৬ ম্যাচে একমাত্র সেঞ্চুরি মুশফিকের।
৯৮ রানের এক ইনিংস খেলেছেন তরুণ আফিফ হোসেন। দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকাররা যেন দাঁড়াতেই পারছেন না। টপ অর্ডারে সুযোগ পাওয়া তরুণরাও অনুজ্জ্বল। মোটা দাগে চিন্তা করলে এই টুর্নামেন্টে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই প্রকট। প্রশ্ন হচ্ছে করোনায় দীর্ঘ বিরতিই কি কারণ! এ বিষয়ে বিসিবির সাবেক গেম ডেভলপম্যান্ট ম্যানেজার ও বর্তমান বিকেএসপির উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘আমি মনে করি না করোনা বিরতি ব্যাটিং ব্যর্থতার অজুহাত হতে পারে। যেমন ব্যাটিং হচ্ছে তা চিন্তার কারণ। আমি মনে করি দ্রুত ব্যাটসম্যানদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা উচিত।’
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারায় মাহমুদুল্লাহ একাদশ। ১৯৪ রানের লক্ষ্যে জবাব দিতে নেমে শান্ত একাদশ জিতে যায়। তবে শুরুতেই ৬৫ রানে হারায় ৪ উইকেট। পরের ম্যাচে তামিম একাদশ ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায়। জবাবে মাহমুদুল্লাহর দল জয় পেলেও শুরুতেই ৩৯ রানে হারায় ৪ উইকেট। এরপর আরো ৪ ম্যাচে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ধারাবাহিক। ওয়ানডে অধিনায়ক ও দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের সংগ্রহ ৪ ম্যাচে সাকুল্যে ৪৪ রান। জাতীয় দলের ভরসা লিটন দাস ৪৩, সৌম্য সরকার ৪৫ রান করেছেন চার ইনিংস ব্যাট করে। আসরে পরাজয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মিডল অর্ডার ও লেজের ব্যাটম্যানরা। ৪ ম্যাচে মুশফিকুর রহীম ব্যাট হাতে শীর্ষ রান সংগ্রহকারী। তারপরই অবস্থান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। লেজের দিকে ব্যাট করা ইরফান শুক্কুর ১২৮ রান করে আছেন তৃতীয় স্থানে। আর ১০০’র বেশি রান করাদের মধ্যে আছেন আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদি হাসান। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে আসরে সবচেয়ে ব্যর্থ টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। আবার অন্যদিকে সফল বোলাররা। বিশেষ করে আসর জুড়ে পেসারদের দাপট। এ বিষয়ে তামিম, সাকিব, লিটন, সৌম্যদের কোচ নাজমুল আবেদিন ফাাহিম বলেন, ‘হ্যাঁ এটা হতে পারে বোলাররা বিশ্রাম পেয়ে দারুণ ফিট। কিন্ত এমন নয় তারা এই বন্ধের সময়টাতে অনেক বেশি উন্নতি করেছে। আমি বলবো ব্যাটসম্যানরাই ব্যর্থ। তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। কী হতো তা বলা যায় না! তবে এমন ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা সফরে গেলে বড় বিপর্যয়ই হতে পারতো দলের।’
বারবার কথা হচ্ছে ব্যর্থতার কারণ ম্যাচ ফিটনেস। কারণ দীর্ঘ দিন পর মাঠে মানিয়ে নেয়া বেশি কঠিন। কিন্ত তামিম, ইমরুল, সাব্বির, এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ মিঠুনরা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তাদের জন্য মানিয়ে নেয়া তো কঠিন কিছু না! নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘এটি সত্যি যে লম্বা সময় বিরতির পর মাঠে ফিরে একটু মানিয়ে নেয়া কঠিন। কিন্তু তামিম, মাহমুদুল্লাহরা এতটা অভিজ্ঞ যে তাদের এত সময় লাগার কথা নয়।’ এমন ব্যর্থতার চিত্র দেখে টাইগার ভক্তদের মধ্যে প্রশ্ন তাহলে এত নামি-দামি বিদেশি কোচরা কি করছেন? এ বিষয়ে ফাহিম বলেন, ‘আমি আসলে বাইরে থেকে কোচদের ভূমিকার কথা বলতে পারবো না। তবে আমি মনে করি তাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে ক্রিকেটারদের জাগিয়ে তুলতে। ব্যাটম্যানদের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এমন নয় যে আমাদের ক্রিকেটাররা ভালো খেলে না। কিন্তু তাদের মানসিক ভাবে শক্ত করার, তাদের বুষ্টআপ করার দায়িত্বটা তো কোচদের। এখন তারাই ঠিক করবে এখান থেকে কিভাবে দলকে বের করে আনবে।’