কাজী শফিকুল ইসলাম (৪৪)। হালুয়াঘাট উপজেলার ২নং জুগলী ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ, ভুয়া কাবিননামা বিক্রি, স্বামীর বিধবা ভাবীকে বউ সাজিয়ে পেনশনের টাকা উত্তোলনের জন্য ভুয়া নকল বিক্রি, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উল্লেখ করে ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবির বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন হালুয়াঘাট উপজেলার ২নং জুগলী ইউনিয়নের ছাতুগাঁও গ্রামের আতাহার আলীর কন্যা মোছা. তোহিদা খাতুন। সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০শে নভেম্বর ধোবাউড়া উপজেলার জিগাতলা গ্রামের মমরুজ আলী ফকিরের পুত্র রজব আলী ফকিরের সঙ্গে বিয়ে হয় তৌহিদার। স্বামী ধোবাউড়া উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী ছিলেন। তৌহিদার বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০২০ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি স্বামী মারা যান। আর সেই স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রীর দাবি তোলেন মৃত রজব আলী ফকিরের বিধবা ভাবী রৌশনারা খাতুন।
রৌশনারা আর রজব আলী ফকির সম্পর্কে দেবর-ভাবী। ভাবী দেবরের চাইতে ১৭ বছরের বড়। শুধুমাত্রই পেনশনের লোভে ভুয়া কাবিনের নকল সাজিয়ে এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আর এই অপকর্মের সহযোগিতা করেছেন ২নং জুগলী ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. শফিকুল ইসলাম (কাজী)। এই ঘটনার তদন্ত চলছে। হালুয়াঘাট উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা ইতিমধ্যে কাজী শফিকের বিরুদ্ধে এক দফা তদন্তের শুনানি করেছেন। তিনি বলেন, নিকাহ রেজিস্টারের ভলিউম দেখাতে পারেনি কাজী শফিক। এ জন্য সময় চেয়েছেন। সমপ্রতি সময়ে এই অপকর্ম ফাঁস হলে বের হয় আরো নানা অপকর্মের। দুর্নীতির দায়ে হালুয়াঘাট উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যানের পদ থেকে গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পল্লী বিদ্যুতের হালুয়াঘাট অঞ্চলের ডিরেক্টর রফিকুল আলম হিরো। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান কাজী শফিকের বিরুদ্ধে সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে ১৯শে অক্টোবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে প্রকাশ ঘটে ভুয়া কাজী, ভুয়া রেজিস্ট্রার দিয়ে অনেক বাল্যবিবাহ করিয়েছেন। বেশ কয়েকবার পুলিশেও সোপর্দ করা হয়েছে। পরে থানায় মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পায় তারা। চেয়ারম্যান বলেন, ভুয়া কাজী দিয়ে এখনো রাতের অন্ধকারে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করেন এমন অভিযোগ রয়েছে। তার একাধিক ভলিউম রয়েছে। অনেক বিয়ে তিনি করান যা মূল ভলিউমে এন্ট্রি করান না। ময়মনসিংহ জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কারণে কাজী সমিতি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নিকাহ রেজিস্ট্রার থেকেও বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি। বিধবা ভাবী রৌশনারার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরহাদ রব্বানী সুমনের লিখিত প্রতিবেদনে জানান, তৌহিদার স্বামী রজব আলী ফকিরের মৃত্যুর আগে কেউ জানতো না যে, রজব আলীর দ্বিতীয় বউ রয়েছে। মৃত্যুর পর ভুয়া কাবিননামা দাখিল করেছেন রৌশনারা। কাজী শফিকুল ইসলাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। হালুয়াঘাট উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আমি ইতিমধ্যে কাজী শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবির বলেন, আমরা কাজী শফিকুল ইসলামকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে তাকে নিকাহ রেজিস্ট্রার থেকে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে। তার স্থলে নতুন নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান জেলা রেজিস্ট্রার।