× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইতিহাস কি শুধু দিস্তা দিস্তা কাগজ?

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
২৫ অক্টোবর ২০২০, রবিবার

রাতের পরে দিন আসে/ দুখের পরে সুখ/ হাসির পর কান্না আসে/ কান্নার পর হাসি। আসলে জীবন মানেই হাসি কান্না। জীবন মানেই সুখ দুখ। পৃথিবী সৃষ্টির পর এ রীতিতেই চলছে সব। আর এ কারণেই দেখা যায় প্রবল প্রতাপশালী পরিবারের প্রভাবও এক সময় থমকে দাঁড়ায়। জমিদার পরিবারও একদিন হয়ে পড়ে নিঃস্ব। এক প্রজন্ম কিংবা দুই প্রজন্ম কোনরকমে প্রভাব ধরে রাখতে পারে। এরপর অর্থবিত্ত আর বৈভবের প্রভাবের সঙ্গে শক্তির প্রভাবও কমে যায়।
একদিন দেখা যায়, যে ব্যক্তির কথায় গোটা গ্রাম চলতো, যার কথায় গ্রামের পশুপাখি পর্যন্ত নড়তো, সেই ব্যক্তি হয়ে পড়েন অসহায়। সম্পদ নেই, তার প্রভাবও নেই। আসলে পৃথিবীতে সম্পদ রয়েছে একই পরিমাণ। এমন তো নয়, পৃথিবীর আকার বছরে বছরে বাড়ছে। আর নতুন নতুন জায়গায় নতুন অধিপতিরা দায়িত্ব নিচ্ছে। তা নয় বলেই একই সম্পদ হাত বদল হচ্ছে। একেক জায়গা একেক সময় একেক জনের হচ্ছে। তারা ওই জমি কিংবা অর্থের কিছুটা সময়ের জন্য মালিক হন।

গ্রামে গ্রামে একটি প্রবাদ বয়স্কদের মুখে মুখে শোনা যায়- অঘাট ঘাট হবে। অমানুষ মানুষ হবে। মানুষ অমানুষ হবে। অপথ পথ হবে। মুরব্বিদের মুখের এসব শোনা কথা বাস্তবে মিলে যাচ্ছে। বিশ ত্রিশ বছর আগে যারা সমাজে নেতৃত্ব দিতেন, তারা আজ কাবু। আর ওইসব নেতাদের যারা তোষামদি করতেন তারা আজ সমাজের অধিপতি। অর্থবিত্তের মালিক। না, তারা কারও দয়ায় অর্থবিত্তের মালিক হননি। তারা তাদের শ্রম আর মেধা দিয়ে এগিয়ে গেছেন। কিন্তু মূল নেতারা নিজেদের নিয়ে অহঙ্কার করতেন। নিজেদের রাজা ভাবতেন। এ ভাবনা নিয়েই তারা এগিয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এটা ধরে রাখতে পারেননি। এখন যারা অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন তাদের মাঝেও অহঙ্কার বোধ চলে আসছে। তাই হয়তো মুরব্বিরা বলে গেছেন, অহঙ্কার পতনের কারণ।

পাঠ্যপুস্তকে এ কথা মুখস্থ করেও অহঙ্কার থেকে নিজেকে কয়জন পারে সরাতে? প্রবাদ প্রবচনে তো এ কথা সবার মুখে মুখে। তারপরও অহঙ্কারই যেন কারও কারও অলঙ্কার। যারা অহঙ্কারকে দূরে ঠেলে এগিয়ে যেতে পেরেছেন তারা তাদের মর্যাদা ধরে রাখতে পেরেছেন। তবে এর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কথা হলো-মানুষ সবই বোঝে, জানে। তারপরও কেন যে একই ভুল করেন তা ভেবে পাই না। কথায় আছে ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। কিন্তু এ কথা কÕজন মানে। মানে না বলেই বার বার ভুলপথে ধাবিত হচ্ছে সবাই।

মূল কথা, ক্ষমতা ধরে রাখার সক্ষমতা কয়জনের আছে? গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ীতে গিয়ে অনেক কাহিনী শোনা যায়। রাজা যেখানে বসে বিচার করতেন সে জায়গায় গিয়ে যে কেউ অবাক হবেন। সে সময়ই কত সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল রাজদরবার। আজ রাজা নেই। রাজার বংশধরও কেউ নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন রাজবাড়ী দেখা যায়। যেসব কালের সাক্ষি হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রাজা নেই, রাজপুত্তুর নেই, বংশধরও নেই। যেন এক বিরান ভূমি এসব রাজবাড়ী। সম্রাট শাহজাহান তাজমহল না বানালে কÕজন মনে রাখতো তার কথা। পাঠ্যপুস্তকে মুঘল আমল, নবাবি আমলের কথা সামান্যই লেখা আছে। সেসব লেখা পড়েও মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবেন না। হাজার মাইল দূর থেকে এসে ইংরেজ বৃটিশরা বাংলা বিহার ওড়িশার অধিপতি বলে নিজেকে গর্বিত মনে করতেন যে নবাব সেই নবাব সিরাজ-উদ দৌলাকে পরাস্ত করেন। হত্যা করেন। এ করুণ ইতিহাস নিয়ে চলচ্চিত্র হয়েছে। মঞ্চ নাটক হয়েছে। হয়েছে উপন্যাসও। মানুষ গোগ্রাসে এসব উপন্যাস গিলেছে, মঞ্চ নাটক দেখে মীরজাফরকে জুতা পর্যন্ত মেরেছে। তারপরও যুগে যুগে মীরজাফররা সমাজে টিকে আছে। তারা তাদের কাজ ঠিকই করে যাচ্ছে। কিন্তু নবাবরা তা বোঝেন না। বুঝতে চেষ্টাও করেন না। এ কারণেই নবাবদের পরিণতি হয় ভয়াবহ। যা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেয়। ইতিহাস থেকে মানুষকে শিক্ষা নেয়ার জন্যই তৈরি হয় ইতিহাস। কিন্তু মানুষ কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়? না। এ ইতিহাস শুধু কয়েক দিস্তা কাগজেই থাকে বন্দি। মনীষীরা বলে গেছেন, ইতিহাসের ভয়াবহ দিক হলো ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর