দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল শহীদ শেখ আবু নাসের। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার গরিব-অসহায় হাজারো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন বিশেষায়িত এই হাসপাতালে। এ হাসপাতালে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও কমছে চিকিৎসকের সংখ্যা। এতে যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের তেমনি চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর চাপ সামলাতে। বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠালেও কোনো ফলাফল আসেনি বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ৯৫টি চিকিৎসকের পদের বিপরীতে শূন্যই রয়েছে ৬৬টি পদ। চিফ কনসালটেন্টের ৫টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৪টি, সিনিয়র কনসালটেন্টের ১২টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৯টি পদ। জুনিয়র কনসালটেন্টের ১৫টি পদের বিপরীতে ১৪টি পদই শূন্য রয়েছে।
এছাড়াও আরপি, আরএস, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন/সমমান (ইএমও/আইএমও) এর ৬২ টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৩৮টি পদ। শূন্য রয়েছে সেবা তত্ত্বাবধায়কের একটি পদও।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৬-৭শ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এই বিশাল চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তকব্যরত চিকিৎসকরা। ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় কম সময় দিয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীরা।
এ বিষয়ে বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চিঠি চালাচালি করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে জানালেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র গোস্বামী। তিনি বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য মেডিকেল অফিসার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। সে পদেই আমাদের সংকট সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ২৪ জন মেডিকেল অফিসার থাকলেও তাদের মধ্য থেকে ৯ জনের প্রমোশন হয়েছে। এ কারণে তারাও হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এতে হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪-১৫ জনে। এই স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব না বলে জানালেন তিনি। তিনি আরও বলেন নার্সিং স্টাফের পদে কোন শূন্যতা না থাকলেও আরও কয়েকটি পদ বাড়াতে পারলে অনেক ভালো হতো। এ সকল বিষয় নিয়ে বিশেষ করে চিকিৎসকদের শূন্য পদ পূরণের জন্য ও নতুন চিকিৎসক নিয়োগের জন্য গত মাসেই ২ বার চিঠি পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। কিন্তু তারও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এসএম মোর্শেদ বলেন, এই হাসপাতালের বর্তমান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মেডিকেল অফিসার, কনসালটেন্ট, প্রফেসরদের সমন্বয়ে। সেক্ষেত্রে একটি বড় সংকট দেখা যাচ্ছে মেডিকেল অফিসারদের। কর্মরত মেডিকেল অফিসারদের মধ্যে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ও প্রমোশনের কারণে অনেকে বাইরে চলে যাচ্ছেন। তাই সামনে আরও বড় সংকট সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। উপ-পরিচালক বলেন- যদি নির্ধারিত মেডিকেল অফিসার হাসপাতালে থাকতেন তাহলে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে আলাদা আলাদা চিকিৎসকদের দায়িত্ব দেয়া যেত। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় তাদের কাজের পরিধি বেড়ে গেছে। একজন মেডিকেল অফিসারের অনেকগুলো কাজ এখন সামলাতে হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুতই এ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. এসএম মোর্শেদ।