× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাইক্কাবিল ও কিছু কথা...

মত-মতান্তর

ক্যাপ্টেন (মার্চেন্ট মেরিন) দেওয়ান জি আহমদ
২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার

প্রথমেই মানবজমিনকে ধন্যবাদ জানাই অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সংবাদটি ছাপিয়েছেন এই জন্য। দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানবজমিন সব সময়েই কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করে। বাইক্কা বিল শুধু আমাদের শ্রীমঙ্গল অথবা বৃহত্তর সিলেট নয়, এটি সারা বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাছ, দেশীয় ও অতিথী পাখির আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত অভয়াশ্রম। আমেরিকার এ আই ডির অর্থায়নে একশত হেক্টরের এই প্রজেক্টটিতে আমাদের দেশের বিলুপ্তপ্রায় মিঠা পানির মাছের বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতি সুস্বাদু ‘গনিয়া মাছ’ যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল তা এই অভয়ারণ্যের বদৌলতে আমাদের নদী, বিল ও হাওরগুলোতে এখন প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। প্রজেক্টের শুরু থেকেই কিছু অসাধু লোক মাছ, পাখি বেআইনিভাবে মেরে ফেলছে, কেউবা এর জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাইক্কাবিল সুষ্ঠু ভাবে সংরক্ষণের জন্য ‘বড় গাঙ্গিনা পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি’ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বিভিন্ন পেশার লোক নিয়ে গঠিত হয়। এতে সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি পরিচালনা কমিটি নির্বাচন করা হয়।
সভাপতি, সচিব সহ পরিচালনা কমিটি নিঃস্বার্থভাবে অতি পরিশ্রম করে বাইক্কাবিলটি সংরক্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাইক্কাবিলের উত্তর ও পূর্বদিকে খালের মতো স্রোতহীন একটি নদী যা বিলকে সুরক্ষা দিয়ে আছে তা বর্ষায় বাইক্কাবিলের সাথে একাকার হয়ে যায়। এটিই বড় গাঙ্গিনা নামে পরিচিত। এ খালটি এক সময় চিতলমাছের উৎকৃষ্ট প্রজনন ক্ষেত্র ছিল। শত শত বড় বড় চিতলমাছ যখন খেলা করত তা ছিল উপভোগ করার মত এক দৃশ্য। এই গাঙ্গিনার পাড় দিয়েই চলে গেছে একটি রাস্তা যা বরুণা গ্রামের ঘাটের বাজার হয়ে দশ কিলোমিটার দূরে ঢাকা- মৌলভীবাজার মহাসড়কের কালাপুর নামক স্থানে মিলিত হয়েছে। বর্তমানে পুরো রাস্তাটিই পাকা। এতে বাইক্কাবিল দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আশেপাশে কোন দোকানাদি না থাকায় বিশেষ করে কোন খাবারের দোকান না থাকায় তা কিছু দুষ্টু লোকের অশুভ নজরে পড়েছে। সে থেকেই আলী ইমাম নামের এক লোক তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে বাইক্কাবিলের অবজারভেশন টাওয়ারে যাওয়ার রাস্তার মুখে ভ্রমণকারীদের সিএনজি বা অন্যকোন মোটরযান পার্ক করার জায়গাটির বেআইনি দখল নেয়ার চেষ্টা। এই স্থানটি হাবিবপুর মৌজায় ১০১ ও ৪৪৫ নম্বর দাগে বাংলাদেশ সরকারের খাস মালিকানাধীন ১নম্বর এস এ খতিয়ানের বড় গাঙ্গিনা নামক খালের ১৩.৫০ একরের অংশ। এর সাথেই লাগোয়া এস এ ও বি এস ১০২ দাগের ২৯ একরের একটি প্লট যা আলী ইমাম স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে খরিদ করে আবার বিভিন্ন লোকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এ দাগে আলী ইমামের কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই। স্থানীয় কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোকদের সহযোগিতায় আলী ইমাম এখানে একটি অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করতে চাইলে ‘বড় গাঙ্গিনা পানি ব্যবস্তাপনা সমিতির সভাপতি সহ কমিটির সদস্যরা শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নজরে আনলে তৎক্ষণাৎ তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে শ্রীমঙ্গল এ সি লেন্ড সাহেবকে পদক্ষেপ নিতে বলেন। এ সি লেন্ড সাহেব সরেজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করে ই ইমামকে কাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্যে পুঁতে রাখা খুটিগুলো অনতিবিলম্বে উঠিয়ে নিতে বলেন। যদিও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রেখেছে কিন্তু খুঁটিগুলো আলী ইমাম উঠিয়ে নেয়নি ।
আলী ইমাম এ স্থানটি থেকে আরেকটু দক্ষিণে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ১ নম্বর খতিয়ানের এস এ ১০৪৯ দাগের ৪ চার একর খাস জমি দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে নিজের নামে করে নিয়েছে। তা জানতে পেরে মৌলভীবাজার জেলার ডি সি সাহেব জেলার সরকারি কৌশলী বিজ্ঞ আইনজীবী এডভোকেট আবুল কালাম জিলা সাহেবকে রেকর্ড সংশোধনের জন্য আলী ইমামের বিরুদ্ধে লেন্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করার অনুমতি দেন। সে মতে আলী ইমামের বিরুদ্ধে লেন্ড সার্ভে মামলা নং ৩২৫/২০১৬ রুজু হয়। আলী ইমাম মামলার প্রতি তোয়াক্কা না করে এ বছর ঐ খাস ভূমিতে পুকুর খনন করে। এখানে বড় গাঙ্গিনা পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি কতৃক রোপনকৃত অসংখ্য ১২/১৪ বছর বয়সী হিজল গাছ কেটে ফেলে। এতে বাইক্কাবিলের সৌন্দর্য অনেকটা খর্ব হয়ে গিয়েছে। এটি আলী ইমামের একটি ফৌজদারি অপরাধ। শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তাৎক্ষণি ভাবে আলী ইমামের এহেন দস্যুতার বিরুদ্ধে নালিশ করা হলেও দুঃখজনক ভাবে ইউ এন ও সাহেব কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। এ ছাড়া আমি নিজেও মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবর ২০/২/২০২০ ইং তারিখে আলী ইমাম কতৃক সরকারি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাস জমির রকম (প্রোফাইল) নষ্ট করে পুকুর খননের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলাম। দুঃখজনক ভাবে করোনা সমস্যা দেখা দিলে আর অগ্রসর হওয়া যায়নি । আলী ইমাম মূল্যবান শত শত গাছ কেটে ও খাস জমির রকম পরিবর্তন করে পুকুর খনন করে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া দরকার। ইতি মধ্যে আলী ইমাম যাতে এই জায়গায় না যেতে পারে তার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সরকারি কৌশলী টি এস ৬২/২০২০ রুজু করলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা দেওয়ানি কোর্ট তার উপর কেন নিষেধাজ্ঞা জারি হবে না মর্মে আলী ইমামের উপর কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন । আলী ইমাম ও তার স্থানীয় সাঙ্গপাঙ্গদের এখনই দমন না করলে আমাদের দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ এ অভয়ারণ্যের সমূহ ক্ষতি করে ফেলবে । এটা জনসাধারণের দাবি ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর