× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শাল্লায় উন্নয়নের নামে ৯ কোটি টাকা জলে

বাংলারজমিন

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
১ নভেম্বর ২০২০, রবিবার

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ৩০টির মতো অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করে সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা জলে ফেলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনোটি হাওরে, কোনোটি গ্রামের পাশে তৈরি হয়েছে। সেতুগুলো তৈরি হওয়ার পর থেকে এখনো অ্যাপ্রোচ সড়ক করা হয়নি। কোনোটির নিচ দিয়ে বা পাশ দিয়ে ডুবন্ত সড়ক হয়েছে। বর্ষায় এই সেতুগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়। ট্রলার বা নৌকা সেতুর উপর দিয়ে উঠলে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কয়েকটি সেতু এখনো হাওরের পানিতে ডুবে আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনেরা বললেন, কার স্বার্থে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকার অপচয় করা হয়েছে, তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
যেখানে মাত্র ২ লাখ টাকার বরাদ্দ হলেই উন্নয়ন কাজ দেখানো যায়, সেখানে ৩৪ লাখ টাকা কেন জলে ফেলা হলো। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কর্তৃক গত প্রায় ১০ বছরে ৩০টির মতো গ্রামীণ যোগাযোগ সেতু হয়েছে। সরজমিন গিয়ে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সেতুগুলোর মধ্যে উপজেলার সুখলাইন গ্রামের পাশের ২টি, গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ১টি, আনন্দপুরে ১টি, হবিবপুরে ২টির মধ্যে ১টি, আগুয়াই-নোয়াহাটির ১টি, শাসখাইয়ে ১টি, মামুদনগরে ১টি, ইসাকপুরে ১টি, কাদিরপুরের সামনে ১টি, মার্কুলির খালে ১টি, গ্রাম শাল্লায় ১টি এবং রৌয়া গ্রামে ১টি, নিজগাঁওয়ের পাশে ১টি সেতু তৈরি হওয়ার পর থেকেই অ্যাপ্রোচবিহীন। অথচ এসব সেতু তৈরি করতে ৩০ থেকে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। উপজেলার মনোয়া গ্রামের আনিসুল হক চৌধুরী মুন বললেন, ‘উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের পাশে একটি ছোট কালভার্ট হলে হতো। কিন্তু করা হয়েছে সেতু। এই সেতু ৫ বছর হয় কোনো কাজে আসছে না। বরঞ্চ বর্ষায় নৌকা চলাচলে বিপদ হয়। শাল্লা গ্রামের পশ্চিম দিকে করা সেতুর পাশ দিয়ে ডুবন্ত সড়ক হয়েছে। এই সেতু এখন অকারণে দাঁড়িয়ে আছে। রূপসা গ্রামের পাশের আরেক সেতু ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। নেই অ্যাপ্রোচ সড়ক। ২ বছর আগে উপজেলা সদরের পাশে সুখলাইন গ্রামে ২টি সেতু করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকেই ‘সরকারের মাল গঙ্গামে ঢাল’ সবার নজরে পড়ে।’ মামুদনগর গ্রামের বিশিষ্ট কৃষক হাবিবুর রহমান হাবিব  বললেন, ‘এক শ্রেণির টাউট ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সরকারের এই টাকার অপচয় ও লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন শাল্লা প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে যা খুশি তা করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে যাবে না। তিনি জানান, মামুদনগর খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় বাঁধ আছে। তারপর কেন বাঁধের পাশে   ৩৩ লাখ টাকার একটি অকেজো সেতু নির্মাণ করা হলো। এ নিয়ে এলাকার মানুষজন বলছেন সরকারের টাকার তো মা-বাপ নাই। এই জন্যই এ অবস্থা। শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী বললেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কেন এই সেতুগুলো করা হয়েছে, কেউ জানে না। অনেক স্থানে ২ লাখ টাকা খরচ করলে মাটির সড়ক করা যায়। করা হয়েছে ৩৩ লাখ টাকার সেতু। পানি নিষ্কাশনের জন্য সেতু করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমনও সেতু আছে, ওই পথ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনই নেই। বর্ষায় এগুলো মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়। ট্রলার বা নৌকার তলায় লেগে ফেটে যায় বা ডুবে যায়। এসব সেতু না করে এই টাকা দিয়ে হাওর থেকে ধান ঘরে আনার সড়ক করলে মানুষের উপকারে আসতো। এই টাকার অপচয় কেন হয়েছে, কারা করেছে- তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি। শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরকার মো. ফজলুল করিম বললেন, শাল্লায় আমি সদ্য যোগদান করার পর দেখতে পেয়েছি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ৩০টির মতো সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই, এটা সত্য। বর্ষায় এগুলো বিপদ হয়ে দাঁড়ায় এটাও ঠিক। তবে এগুলো মানুষের চাহিদা পূরণের জন্যই মনে হয় করা হয়েছিল। শাল্লার সিংহভাগ এলাকা বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। যখন সেতু করা হয়েছিল, তখন হয়তো বা সড়ক ছিল। পানির তীব্রতায় বা ঢেউয়ে সড়ক হয়তো ভেসে গেছে। এখন দাঁড়িয়ে আছে কেবল সেতু। আমরা দেখেছি, গত ১০ বছরে ১৬ থেকে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে হওয়া ৩০ সেতুর অনেকটিতে একেবারেই অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। কোনোটিতে অ্যাপ্রোচ থাকলেও চলার উপযোগী নেই। সেতুগুলোর ২ পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে এই কাজ হবে। বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করবো আমরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর