করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রামে এবার জশনে জুলুস না হওয়ার কথা। এ নিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে আয়োজক সংস্থা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দিতে পাকিস্তানের ছিরিকোট দরবার থেকে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ) আসছেন না। ফলে চট্টগ্রামে এবার জশনে জুলুস হচ্ছে না। তবে গাউছিয়া কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা নির্দেশনা মেনে সীমিত পরিসরে হলেও জশনে জুলুস করা হবে। হয়েছেও তাই। সীমিত পরিসরেও নয়। জুলুসে অংশ নিয়েছে লাখো নবী প্রেমি।
যা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রদক্ষিণ করেছে নগরী।
গাউছিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, মিলাদুন্নবীর দিন যে জুলুস বের হয় সেটি অর্ধশত বছরের ঐতিহ্য। তাই শুক্রবার সকাল সোয়া ৮টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে জুলুস বের করা হয়। জুলুসটি নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর হয়ে প্রধান সড়ক ধরে দুই নম্বর গেট, জিইসির মোড়, ওয়াসা পর্যন্ত যায়। এরপর একই সড়ক দিয়ে আবার সোয়া ৯টায় জুলুস জামেয়া মাঠে ফিরে আসে। প্রতিবছর নাতে রাসুল ও নারায়ে তকবির ধ্বনিতে এই জুলুস বের হলেও এবার ছিল ব্যতিক্রম। জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা মুলত ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
জুলুসটি ম্যাক্রণের দুই গালে জুতা মার তালে তালে-এই স্লোগানে মুখরিত ছিল। জুলুস থেকে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটেরও ডাক দেওয়া হয়। পাকিস্তানের ছিরিকোট দরবার থেকে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ) না আসায় জুলুসে নেতৃত্ব দেন আনজুমানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, জামেয়ার অধ্যক্ষ মুফতি অছিউর রহমান আলকাদেরি প্রমুখ। এছাড়া জশনে জুলুসে আসা হাজার হাজার নবী প্রেমি নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, জিইসির মোড়, নিউমার্কেট মোড়, আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড় এলাকায় ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভ ও বিশ্ব নবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শণের প্রতিবাদে মানবন্ধন কর্মসুচি পালন করে। এদিকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে ফ্রান্স সরকারের অর্থায়নে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ এলাকায় এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজত মহাসচিব শায়খুল হাদিস আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ফ্রান্স সরকার কর্তৃক মহানবীর অবমাননা সহ্য করার মতো নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন হযরত রাসূলূল্লাহ সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশ করে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছে। এ জন্য ফ্রান্সকে বিশ্ব মুসলিমের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারিভাবে ফ্রান্সের সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করুন। কূটনৈতিক সমপর্ক বর্জন করুন। জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব এনে এর প্রতিবাদ জানান। তিনি ওআইসি, আরব লীগসহ মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আলী ওসমান, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা হাফেজ তৈয়ব, মাওলানা কারী ফজলুল করিম জিহাদী, মাওলানা জিয়াউল হোসাইন, মুফতি হাসান মুরাদাবাদী, মাওলানা জালালউদ্দিন,মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা আনোয়ার হোসেন রববানী, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা সায়েম উল্লাহ, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী প্রমুখ।