ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিট। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভর্তির জন্য পাঁচটি থেকে কমিয়ে তিনটি ইউনিটে শিক্ষার্থী বাছাই করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যেটি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করার চিন্তা করা হচ্ছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিনস কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্তটি একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হয়ে সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেতে হবে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা ভর্তিচ্ছুদের চাইলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করাতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিনস কমিটি। এদিকে ডিনস কমিটির এ সিদ্ধান্ত যুক্তিসম্মত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনুষদ দু’টি। চারুকলা অনুষদের ডিন দাবি করেছেন, ‘চ’ ইউনিট বাদ দেয়ার বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনাই হয়নি।
তার অনুষদে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হলে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। স্বতন্ত্র ইউনিট না থাকলে অন্য নামে হবে। তবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। অন্যদিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিমও ভিন্নমত দিয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমি সভায় ছিলাম না। কিংবা দু’টি ইউনিট বাদ দেয়ার বিষয় আলোচনা হতে পারে, তাও আমি জানতাম না। তাই নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না। তবে আমি মনে করি বিষয়টি একটু চিন্তা ভাবনা করতে হবে। বিশেষ করে চারুকলা অনুষদে ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হবে। ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ভর্তি পরীক্ষা হবে। সেক্ষেত্রে ‘ঘ’ ও ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল হয়ে হবে ‘খ’ ইউনিটের সঙ্গে। এখান থেকে শিক্ষার্থী ভাগ হবে। বিজ্ঞান থেকে কেউ চাইলে কলা বা সামাজিক বিজ্ঞানে যেতে পারবে। আগামী বছর থেকে একই ন্যাচারের দু’টি পরীক্ষা হবে না। এ ব্যাপারে চারুকলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ডিনস কমিটির সভায় চারুকলা অনুষদ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। সেখানে কথা হয় ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিট নিয়ে। কারণ এ দু’টি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা একই। এখন ‘চ’ ইউনিটের বিষয়টা কীভাবে প্রচার হচ্ছে তা আমি জানি না। তিনি বলেন, ‘চ’ ইউনিট আগে যখন ইউনিট ছিল না তখনও আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিয়ে থাকতাম। কারণ চারুকলা অনুষদের বিষয়গুলো অন্য ইউনিটের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। তাই হয়তো এখনো ইউনিট থাকবে না, তবে আমরা ভর্তি পরীক্ষা নেবো। যেমনটি হচ্ছে আইবিএ এর ক্ষেত্রে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ইউনিট কমানোর ভাবনা থেকে সভায় ভিসি ‘ঘ’ ইউনিট বাদ দেয়ার প্রস্তাব তোলেন। যাতে সমর্থন দেন কলা ও আইন অনুষদের ডিনরা। কিন্তু এটি সমর্থন-অসমর্থনের কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটা স্বকীয়তা আছে। এই অনুষদের ১৬টি বিভাগ থেকে সরকারি ও বেসরকারি নানা সেক্টরে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন, ভালো করছেন। তিন শতাধিক শিক্ষক এই অনুষদে পাঠদান করেন। শিক্ষকরা নিজস্ব পরীক্ষা চান। আমার বক্তব্য, আমাদের অনুষদের জন্য স্বতন্ত্র ইউনিট হওয়া উচিত। তা না পারলে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ নামে ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট করতে হবে। একাডেমিক কাউন্সিলে অবশ্যই এটি নিয়ে আলোচনা হবে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা কোনো ইউনিট বাদ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের তিনটা ধারা (মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসা বিভাগ) মাথায় রেখে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কথা ভাবছি। সেক্ষেত্রে আমাদের ভর্তি পরীক্ষাও তিনটা ইউনিট হতে পারে। এক্ষেত্রে বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগও শিক্ষার্থীদের থাকবে। এদিকে ‘ঘ’ ও ‘চ’ ইউনিট সংশ্লিষ্ট ডিনদের ভিন্নমতের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, আমরা তো এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত করিনি। আলোচনা হচ্ছে, আলোচনা পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে।