পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিকে নেতিবাচক কাজে ব্যবহারের বিপক্ষে ঢাকার অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। এ নিয়ে বাংলাদেশ রীতিমতো সোচ্চার, পৃথিবীতে এটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তবে মানুষের ভালো কাজে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি ঢাকা সর্বদা সমর্থন করে জানিয়ে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের গর্ব। এটি দেশের ইতিহাসের অংশ হিসেবে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটি বাংলাদেশের বড় অর্জন। পারমাণবিক শক্তি ভালো কাজে ব্যবহারে উদাহরণ রূপপুর প্রকল্প বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলেও আশা করেন মন্ত্রী মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। গত শুক্র ও শনিবার মহাপরিচালক সমমান এবং তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের নিয়ে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ঘুরে দেখেন মন্ত্রী।
একদিন বিরতি দিয়ে সোমবার এ নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে সেগুনবাগিচা। এতে জানানো হয়, পরিদর্শনকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং তার অধীন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। ভিয়েনা ও মস্কোর বাংলাদেশ মিশন প্রকল্পটির মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্র্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আই.এ.ই.এ) এবং অর্থায়নকারী রাশিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে। উল্লেখ্য, স্বায়ত্তশাসিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা আইএইএ বিশ্বে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করে একই সঙ্গে সামরিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার রোধে কাজ করে। সংস্থাটির প্রতিনিধিরা তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে নিয়মিতভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদÑ উভয় ফোরামেই রিপোর্ট করেন। আইএইএ’র কার্যক্রম অনেকটা বিশ্ব সম্প্রদায় তথা জাতিসংঘের কাছে দায়বদ্ধ। সংস্থাটির সদর দপ্তর অস্ট্রিয়ায় হলেও পূর্ব এবং পশ্চিমে এর দু’টি আঞ্চলিক দপ্তর রয়েছে। একটি কানাডার টরেন্টো এবং অন্যটি জাপানের টোকিওতে। এ ছাড়া নিউ ইয়র্ক এবং জেনেভাতে সংস্থাটির দু’টি মৈত্রী অফিস আছে। ভিয়েনা, সাইবার্সডোর্ফ এবং মোনাকোতে আইএইএ’র তিনটি ল্যাবরেটরিতে পরমাণু শক্তি বিষয়ে সংস্থাটির গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সহযোগিতায় এগিয়ে চলা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশি কূটনীতিক ও সম্ভাব্য রাষ্ট্রদূতদের সরজমিন ওই কেন্দ্র পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া পারমাণবিক শক্তিকে বাংলাদেশ যে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করছে তা বিশ্বদরবারে ভালোভাবে তুলে ধরার জন্যও কর্মকর্তাদের পরিদর্শনটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পরিদর্শনকালে প্রকল্পটির অগ্রগতিসহ সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করেন রাশিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক। মন্ত্রী তাদের ব্রিফিংয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। বিদ্যমান অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় যথাসময়ে প্রকল্পটি শেষ হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় মন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের পক্ষে তিনবার জাতিসংঘে ভেটো প্রদানসহ বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতা করে রাশিয়া। এসময় বাংলাদেশের জ্বালানি খাতসহ ব্লু-ইকোনমিতে রাশিয়ার বিনিয়োগ ও সহায়তা কামনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে রাশিয়ার উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে এবং সেদেশের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত প্রায় ১৬ হাজার জনবলের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজারই বাংলাদেশি। তারা বিদেশি কর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। রূপপুর থেকে ফেরার পথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে উত্তরা গণভবনে যাত্রা বিরতি করেন মন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, এ বাড়িকে উত্তরা গণভবনে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধু উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য ও স্মৃতিকে ধরে রেখেছেন।