ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক, বরেণ্য লেখক-কলামিস্ট আসিফ নজরুল করোনায় আক্রান্ত হবার খবরে প্রবাসে বহু মানুষ উদ্বিগ্ন। আজ দুপুরে লন্ডনের সেভেন কিং মসজিদে তার দ্রুত সুস্থতার জন্য মোনাজাত করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘শনিবার থেকে জ্বর ছিল। গতকাল সোমবার টেস্ট করে জানলাম, আমার করোনা পজিটিভ। আমার জন্য দোয়া করবেন। ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাব।’
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী অনেক সচেতন মানুষ মনে করেন, আসিফ নজরুল হচ্ছেন জাতির জাগ্রত বিবেক। তিনি বিভিন্ন সময়ে কঠিন সত্য কথা বলে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলের কাছে তিনি বার বার বিরাগভাজন হয়েছেন। তিনি অনায়াসে শাসক আর শোষকদের নির্মম সত্য বলে দিতে পারেন।
তিনি হচ্ছেন, সত্য বলে বেড়ানো এক ফেরিওয়ালা।
আসিফ নজরুল দলবাজদের কথা স্মরণ করে হয়ত ভাবেন, আপনাদের মনের মত কথা বলতে পারব না বলে খুবই দুঃখিত। আদর্শ রাজনীতির বিপরীতে তৈলাক্ত রাজনীতি বিকশিত হওয়ায় তিনি অনেকের চক্ষুশুল। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত হয়ে উঠার সকল গুণ থাকলেও শুধুমাত্র সত্য বলার কারণে তিনি অনেকের কাছে অপাক্তেয়। তার মত সৎ ও নির্ভীক লেখক দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনেন। তার লেখা পড়ে মনে হয়, আসলেই সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।
আসিফ নজরুল সময়ের কথা বলেন, অতীতের সাথে বর্তমানের যোগসূত্র স্থাপন করেন এবং ভবিষ্যত করণীয় বিষয়ে পথ দেখান। গণমানুষের বঞ্চনা ও চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার, রাজনীতিক ও সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম যে একে অপরের পরিপূরক তা আসিফ নজরুলের লেখায় অনুধাবন করা যায়। এতে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের গঠনমূলক সমালোচনা, গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনমত গঠনের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় ইতিবাচক অবদান রাখে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ‘জাতির বিবেক’ বলে খ্যাত আসিফ নজরুল সম্পর্কে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে একটি চমৎকার মন্তব্য করেছিলেন লর্ড অ্যাভিবুরি। তখন তিনি ব্রিটেনের অলপার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রফেসর আসিফ নজরুলদের মত লোক আছে বলেই আমরা বাংলাদেশের বিচার ও মানবাধিকার সম্পর্কীয় সঠিক অবস্থা জানতে পারি। আরো এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেছিলেন, সেখানকার মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী এতই পক্ষপাতদুষ্ট যে, তাদের বক্তব্য থেকে সত্যের কাছাকাছি আসা সম্ভব হয়না।
একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ প্রসঙ্গে লর্ড অ্যাভিবুরি একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই বিবৃতিতে তার সাথে আরো ৯ জন মানবিাধিকার ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সে বক্তব্যের ব্যাখা জানতে চাইলে প্রসঙ্গক্রমে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।
সেদিন বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে যুক্তরাজ্যের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পার্লামেন্টের প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে স্বাক্ষর করেছিলেন রক্ষণশীল দলের পিটার বটমলি ও বব ব্লাকম্যান, লিবারেল ডেমক্রেটস দলের জুলিয়ান হাপারট ও বব রাসেল, লেবার পার্টির জন ম্যাকডোনেল ও লিজ ম্যাকইনস, সোশাল ডেমক্রেটিক দলের মার্ক ডারকান, রেসপেক্ট দলের জর্জ গ্যালাওয়ে, ডেমক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির জিম শ্যানন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমপি মাইক হ্যানকক।
তাদের এ উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছিল ‘আরলি ডে মোশন’। এতে তারা বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিশেষ করে জোর দেয়া হয় গুম হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের প্রসঙ্গ। ২৩ মার্চ পার্লামেন্টের বিবৃতিতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অবসান ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) একটি মন্তব্য তুলে ধরে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে বার বার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠছে।
এ প্রসঙ্গ আমার আজকের বিষয় নয়। সুলেখক আফিস আসিফ নজরুল প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও বিশ্বব্যাপী মানবতা প্রতিষ্ঠায় এক সাহসী কণ্ঠস্বর লর্ড এরিক অ্যাভাবুরির মন্তব্য ও বোধোদয়টি উদ্দেশ্য।