× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সবাইকে অবাক করে পেছনের দরজা দিয়ে মা প্রবেশ করেন

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
১৯ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার

এটা আমার জন্য খুব বেশি অবাক করার মতো সুযোগ ছিল না। আমার বয়স যখন বারো ঠিক এই সময়টায় রৌদ্রোজ্জ্বল ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে আমরা চলে যাই। মিডল স্কুলে পড়াকালীন মাঝামাঝি সময়ে ফরাসি ভাষা অধ্যুষিত বিদেশি শহরে বাস শুরু হয় আমাদের। যে শহরটিকে ১২ ফিট বরফ ঢেকে রাখে। আমার মা আমাদের এ পরিস্থিতিকে এক ধরনের রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা বলে বুঝাতে চাইতেন। তিনি আমাদের শীতের কাপড় কিনে দিয়ে বলতেন উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস উপভোগ করতে। তবে এটা সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় ছিল মা যখন বললেন আমাদের একটি ভাষা শিখতে হবে। কাছেই ফরাসি ভাষার একটি স্কুল ছিল- নাম নটরডেম দেস নিস।
নটরডেম দেস নিসের অর্থ হলো- ‘আওয়ার লেডি অব দ্য স্নোস’।  
একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম। আমি ফরাসি শুনেছিলাম শুধুমাত্র ব্যালে নাচের ক্লাসে। ব্যালে ক্লাসে ববি ম্যাম চিৎকার করে বলতেন ‘ডেমি প্লি, অ্যান্ড আপ’। আমি মজা করে বলতাম আমি যেন হাঁসের মতো। নতুন স্কুলে সারাক্ষণ বলতে থাকতাম, কুই, কুই, কুই (কি? কি? কি?)।

মন্ট্রিলে আমরা এভাবেই বেড়ে ওঠছিলাম। একদিন মায়া এবং আমি আমাদের বাসার সামনে লনে বাচ্চাদের ফুটবল খেলতে দেয়া হয় না বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। খুশির খবর হলো আমাদের সে দাবি মেনে নেয়া হয়েছিল।  অবশেষে আমি আমার মাকে রাজি করাতে পেরেছিলাম একটি আর্ট স্কুলে আমাকে ভর্তি করাতে। যেখানে ইতিহাস আর গণিত পড়ার পাশাপাশি ভায়োলিন, ফরাসি বাঁশি এবং লোকজ ঢোল বাজাতে শিখবো ইতিহাস। এক বছর আমরা অভিনয় করেছিলাম ‘ফ্রি টু বি...ইউ অ্যান্ড মি’ নাটকে একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।   

এর মধ্যেই আমি হাইস্কুলে ভর্তি হই এবং নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে  নেই। মন্ট্রিলে বাস করলেও এখনো আমার পরিবার, বন্ধু এবং ফেলে আসা বসতিকে খুব মিস করি। এখানে বাস করলেও আমার সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে গ্রীষ্মকালের ছুটি এবং অন্যান্য হলিডেতে। বিশেষ করে ছুটিতে বাবা এবং মিসেস শেলটনের সঙ্গে যখন সময় কাটাই। বাবা এবং মিসেস শেলটনের সঙ্গে সময় কাটাবার মুহূর্তের কথাই সবচেয়ে বেশি মনে পরতো। দেশের জন্য এক ধরনের হোমসিক থাকবে এটা ভাবনার মধ্যেই ছিল। আমি কলেজে পড়ার জন্য দেশে ফিরবো এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহই ছিল না।  

আমি আমার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সময় আমার বাবা-মা দুজনকেই বলি আসতে। যদিও জানা ছিল তারা দুজনের কেউই কারও সঙ্গে কথা বলতো না। আমি চেয়েছিলাম দুজনই যেন আমার গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে। আমি মিলনায়তনের প্রথম সারিগুলোর একটিতে বসলাম এবং দর্শকদের দিকে তাকালাম কিন্তু কোথাও মাকে দেখতে পেলাম না। মাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলাম, তিনি কোথায়?’। তাহলে কী বাবা থাকার জন্য মা এখানে আসেননি। আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলে সকলকে অবাক করে দিয়ে পেছন দরোজা দিয়ে মা প্রবেশ করেন। যাকে সবসময় ল্যাবে কাজ করার সময় দেখেছি জিন্স এবং টেনিস স্যু পরে কাজ করতে; আজ তিনিই ঝলমলে লাল পোশাকে হিল পরে হাজির হয়েছেন। তিনি কোনো পরিস্থিতিতে কখনই নিজেকে অনুজ্জ্বলভাবে হাজির করেন নি।  
হাই স্কুলে পড়া অবস্থাতেই আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, কি করবো পরবর্তীতে? আমি সব সময় আমার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতাম। আমি সব সময় আমার বাবা-মাকে দেখেছি তাদের কাজ নিয়ে তারা স্বস্তিতে ছিলেন। আমার সঙ্গে একদল সফল নারীর দেখা হয়েছে। আন্ট মেরি, মিসেস উইলসন, মিসেস শেলটন এবং সর্বোপরি আমার মা। তাদের সরব উপস্থিতির প্রভাব তাদেরকে বরাবরই অন্যদেরকে পৃথক করেছে।

গাছের বীজ রোপণ করতে হয় জীবনের শুরুতেই। সঠিক সময় যদিও আমার জানা নেই। আমি একজন আইনজীবী হবো এমন লক্ষ্য ঠিক করি। আমার জীবনে যাদের নায়কের আসনে বসিয়েছি তাদের অনেকেই ছিলেন আইনজীবী। থারগড মার্শাল, চার্লস হ্যামিলটন হাসটন, কনসটেন্স বেকার মটলে ছিলেন নাগরিক অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের অন্যতম নায়ক। আমি সব সময় ন্যায্যতা পছন্দ করি এবং তার হাতিয়ার হিসেবে দেখতে পেয়েছি আইন। আইন ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। আমি চিন্তা করে দেখেছি আইন পেশায় যুক্ত হলে মানুষ আমাকে বিশ্বাস করবে। আঙ্কেল শেরম্যান এবং আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হেনরি ছিল আইনজীবী। পরিচিত বন্ধু বা প্রতিবেশীদের কেউ কোনো বিপদে পড়লেই দেখেছি হেনরি এবং শেরম্যানকে সকলেই ডাকাডাকি করতো। তারা জানতো কী করতে হবে। তারা জানতো এর সমাধান কি? আমিও তাই করতে চেয়েছি। আমি তাদের মতো হতে চেয়েছি, যেন সকলকে বিপদে সাহায্য করতে পারি।

সুতরাং, আমি যখন কলেজে ভর্তি হই তখন ঠিক সিদ্ধান্তই  নেই। সবচেয়ে ভালো কি তাই করার কথা চিন্তা করি। থারগোড মার্শেলের মাতৃশিক্ষার চেয়ে এটি ছিল উন্নততর।  
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি কতটা সুন্দর তার অনেক গল্প শুনেছি। বিশেষ করে হাওয়ার্ডে থাকা আন্ট ক্রিসের কাছ থেকে। সিভিল ওয়ারের দু’বছর পরে যাত্রা শুরু হওয়া হাওয়ার্ডের অনেক ব্যতিক্রমী কিছু শুরু করার সুনাম রয়েছে। যখন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সর্বত্র বন্ধ তখন তারা এখানে তা চালু করে। যখন দেশে আইন বিচ্ছিন্নতা এবং বৈষম্য বিদ্যমান সে সময় তারা এ কাজটি করে। এটি এমন এক সময় শুরু হলো যখন কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও পুরুষ নেতৃত্বে আসুক এমনটা কম মানুষই চেয়েছিল।  
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হাওয়ার্ডের শিক্ষার্থীরা নানাবিধ চর্চায় লালিত পালিত এবং সংশোধিত হয়ে আসছে। এবং সাফল্যের শীর্ষে ওঠার আত্মবিশ্বাস আয়ত্ত করতে পারছে। আমি তাদের একজন হতে চেয়েছিলাম। ১৯৮২ সালের শেষ সময় আমি কলেজের ইটন ডরমেটরিতে ওঠি।

আমার সবসময় মনে পড়ে ক্র্যামটন মিলনায়তনে অভিষেক অনুষ্ঠানের কথা। হল ঘরটি ছিল লোকে লোকারণ্য। আমি সবার পেছনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম এটাই বুঝি স্বর্গ। যেখানে শত শত মানুষ ছিল যারা আমার মতোই। তাদের অনেকেই ছিলেন হাওয়ার্ডের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আবার অনেকেই ছিলেন তাদের পরিবারের প্রথম পড়ুয়া। কেউ কেউ তাদের পুরো জীবন কৃষ্ণাঙ্গদের স্কুলেই কাটিয়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে সামান্য শিক্ষার্থী ছিল শ্বেতাঙ্গ বা তাদের প্রতিবেশী। কেউবা এসেছে গ্রাম থেকে কেউবা এসেছে শহর থেকে। কেউ কেউ এসেছে আফ্রিকার দেশ থেকে, কেউ কেউ ক্যারাবিয়ান অঞ্চল থেকে।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর