× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কে জানতো তিরিশ বছর পরে এই একই আসনে আমি সিনেটর নির্বাচিত হবো

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
২০ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার

হাওয়ার্ডের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই তাদের আড্ডার জন্য একটি জায়গা বেছে নিত। সে স্থানকে আমরা বলতাম ইয়ার্ড। ঘাসে আচ্ছাদিত এই জায়গাটি ছিল শহরের একটি ব্লকের সমান। যে কোনো একদিন আপনি যদি মাঝামাঝি দাঁড়ান আপনার ডানদিকে দেখবেন তরুণ নর্তকীরা নাচের মুদ্রা চর্চা করছে অথবা মিউজিশিয়ানরা তাদের বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে। আর যদি বামে তাকান তাহলে দেখবেন যারা বিজনেস স্কুলে অধ্যয়ন করে তারা ব্রিফকেস হাতে। আর যারা সাদা এপ্রোন পরে আছে তারা ল্যাব থেকে আসা মেডিকেলের শিক্ষার্থী। এখানে গ্রুপ করে শিক্ষার্থীরা হয়তো হাসাহাসি করছে বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছে। দ্য স্কুল নিউজপেপারের কলামনিস্ট হিলটপ অথবা ফুটবল টিমের তারকা কোনো খেলোয়াড়ও সেখানে আছে।
গণিত ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়তো গসপেল কোরাস গাইছে সমস্বরে।
এটাই হচ্ছে- হাওয়ার্ডের বৈশিষ্ট্য। শিক্ষার্থীদের যে কেউ বলবে, আমরাই পারি সবকিছু। আমরা তরুণ, আমরা কৃষ্ণাঙ্গ, আমরা বিধাতার উপহার এবং কোনো বাধাই আমাদের আটকাতে পারবে না। এই ক্যাম্পাসটা হলো এমন একটি জায়গা যেখানে অন্যের পছন্দের ভেতর আপনি আবব্ধ থাকবেন না। হাওয়ার্ড হলো- এমন একটি জায়গা যেখানে তুমি তোমার ইচ্ছামতো নিজেকে গড়তে পারো। এখানে ব্যর্থ হওয়ার কিছু নেই।

আমাদের বড় কিছু হওয়ার সক্ষমতা আছে শুধু এই কথাটুকুই বলা হতো না একইসঙ্গে আমাদেরকে বলা হতো সেই কার্যক্ষমতা  গ্রহণের চ্যালেঞ্জকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে। একটি প্রত্যাশা থাকতো যা আমরা আমাদের ভেতর চর্চা করতে পারি। আমাদের মেধা ব্যবহার করতে পারি নেতৃত্বের ভূমিকা নেয়ার জন্য এবং অন্য মানুষের জীবনে তার প্রভাব ফেলবে। এমনকি সেই নেতৃত্ব ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে।  
আমি এ অভ্যাসের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছিলাম। ফ্রেসম্যান বছরে প্রথম আমি কোনো পদের জন্য নির্বাচিত হই। এই ফ্রেসম্যান প্লাস হচ্ছে লিবারেল আর্টস স্টুডেন্টস কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটা ছিল আমার জীবনের প্রথমদিকের প্রচারণা। এর জন্য জার্সি গার্ল শেলি ইয়ং ছাড়া তেমন কোনো শক্তিশালী বিরোধিতার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়নি। সে ওকল্যান্ড থেকে আসা। আমি অর্থনীতি সমিতির পক্ষে সভাপতিত্ব করি এবং বিতর্ক টিমে অংশ নেই। হাওয়ার্ডে শতবর্ষেরও আগে নয়জন নারী প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন আমার প্রিয় ‘আলফা কাপা আলফা’। বিষয়টি যেন আমি ভুলতেই বসেছিলাম। এক শুক্রবার আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর পোশাকে ময়ূর পরিবেষ্টিত ইয়ার্ডে হাজির হই। ছুটির দিন আফ্রিকায় বর্ণবাদের প্রতিবাদে ন্যাশনাল মলে সামিল হই।

আমি যখন হাওয়ার্ডে তখন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশুনার বাইরে আমাকে নানান রকম কাজ করতে হতো। আমি সে সময় ফেডারেল ট্রেড কমিশনে পত্রিকার ক্লিপিংস বিভাগে কাজ করতাম। সকল পত্রিকা থেকে বাছাই করে কমিশনের ওপর কোনো খবর থাকলে তা কেটে ফাইলিং করে সিনিয়র স্টাফদের মধ্যে বিতরণ করতাম। আমি ন্যাশনাল আর্কাইভে গবেষণায়ও কাজ করেছি। এছাড়াও ইউএস ব্যুরো অব এনগ্রেবিং অ্যান্ড প্রিন্টিং বিভাগে একজন ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করেছি। আমাদেরকে ওয়াকিটকি নাম্বার দেয়া হলো এবং আইডি নম্বর দেয়া হলো। আমার আইডি নম্বর ছিল ‘টিজি-১০’। এটা এমন একটি কোড নাম্বার যা থেকে মনে হতো আমি সিক্রেট সার্ভিসের একজন এজেন্ট।

দুই তরুণ আইকনের কথা আমার কাছে জীবনের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান মনে হয়েছে। এক পরিশ্রমী গ্রীষ্মের সময় ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যালান ক্রানসটনের এখানে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাই। কে জানতো  তিরিশ বছর পরে এই একই আসনে আমি সিনেটর নির্বাচিত হবো। সেখানকার ম্যানেজার আমাকে যে ধন্যবাদপত্র দিয়েছিল সেই ছবি এখনও আমি সিনেটর হিসেবে যে চেয়ারে বসেছিলাম তার পেছনে আছে। আমি যখন ইন্টার্ন করার সময় সাবওয়েতে সাইকেল চালাতাম তখন নিজেকে বলতাম, তুমি তোমার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছো। গ্রীষ্মকালে আমি প্রতিদিনই ক্যাপিটাল বিলডিংয়ে কাজ করতে যেতে পছন্দ করতাম। এটা আমার কাছে পরিবর্তনের একটি কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে হতো। ইন্টার্ন হিসেবে এখানে কাজ করতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত অনুভব করতাম। আমি পথ চলতে গিয়ে এর চেয়েও মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম সুপ্রিম কোর্ট ভবনের দিকে।

হাওয়ার্ড শেষে আমি ওকল্যান্ডে ফিরে যোগ দিই ইউসি হেস্টিংস কলেজ অব দ্য ’ল-তে। আমি সেখানে আইন বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের সংগঠন ব্ল্যাক ’ল স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের (বিএলএসএ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই। এই সময় কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল দুঃসময়। তাদের কর্মসংস্থান ছিল না। আমি তা ভাঙার চেষ্টা করি। বিএলএসএ’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি সকল প্রধান ’ল ফার্মের প্রতিনিধিদের কাছে একটি জব ফেয়ার আয়োজনে তাদের অংশ নিতে অনুরোধ জানাই। একটি হোটেলে জব ফেয়ারটি আয়োজন করি।

আমি যখন বুঝতে পারি যে, আমি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে কাজ করতে যাচ্ছি খবরটি আমি বন্ধু এবং পরিবারের সকলের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আমি অবশ্য এতে অবিশ্বাস্যরকমের কিছু খুঁজে পাইনি। এটা ছিল আমার গবেষণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

আমেরিকার বড় রকমের অন্ধকার অধ্যায় রয়েছে অন্যায় প্রতিষ্টায় বিচারকের ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ে। আমি খুব ভালোভাবেই জানি তা করা হয়েছে সহজ-সরল সাধারণ মানুষদের সঙ্গে। তথ্য গোপনের বিচার করার জন্য। এতে বিবাদী কিছুটা স্বস্তি পায়। আর আইন প্রয়োগে বৈষম্যের বিষয়টিও ফুটে ওঠে। আমি বড় হয়েছি এসব ঘটনা শুনতে শুনতেই। আমি আমার সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়টি  বুঝতে পারতাম। কিন্তু যদিও ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা।

আমি দক্ষিণের সাহসী বিচারক কু ক্লক্স ক্লানের কথা জানি। আমি জানি দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক ও দূষিত দুর্নীতিবাজদের বিচার করেছেন এমন বিচারকদের সম্পর্কেও। আমি রবার্ট কেনেডির প্রভাব সম্পর্কেও জানি, যিনি ছিলেন ইউএস অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ১৯৬১ সালে ফ্রিডম রাইটারসকে সুরক্ষিত রাখার আদেশ দিয়েছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। এবং ইউএস মার্শালদের পাঠিয়েছিলেন জেমস ম্যারেডিসের সুরক্ষায়। যখন তিনি পরের বছরেই ওলে মিস-এ যোগ দেন।  
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর