× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

'উষ্ণ' ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) নভেম্বর ২১, ২০২০, শনিবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

ফাইজারের ভ্যাকসিন শতকরা ৯৫ শতাংশ কার্যকর হলেও এটি সংরক্ষণ করতে প্রয়োজন মেরু অঞ্চলের শীতকালীন সময়ের মতো তাপমাত্রা। এ জন্য যে অবকাঠামো ও পরিবহণ সুবিধা প্রয়োজন তা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশেই নেই। ফলে ভ্যাকসিন কার্যকর হলেও তার সুফল আমরা রাতারাতি পাব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা উষ্ণ আবহাওয়ায় সংরক্ষণ করা যাবে এমন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

এ নিয়ে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ কে. শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ফাইজারের সফলতা বিজ্ঞানের জয়। কিন্তু, ভারতের মতো ১৩০ কোটি জনতার দেশ তার ফলে উপকৃত হবে না। আমাদের জন্য টিকাটি একটি বৈজ্ঞানিক কৌতূহল মাত্র, তার বাইরে বাস্তবক্ষেত্রে এর তেমন কোনো গুরুত্ব নেই।


জার্মান লজিস্টিকস কোম্পানি ডিএইচএল জানায়, ফাইজার ও বায়োএনটেকের আবিষ্কৃত টিকা নূন্যতম মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিশ্চিত করে সরবরাহ করতে হবে। বিদ্যমান হিমচক্র ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এর ফলে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ টিকাটি পাবেন না। এই জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই হচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ। শুধু তাই নয় খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাতেই তা সরবরাহ করা সম্ভব নয়।  

কোভিড-১৯ একটি মহাব্যাধী এবং এর বিরুদ্ধে টিকা কর্মসূচির লড়াই চালাতে হবে বিশ্বের সকল প্রান্তে। অনেক দুর্গম স্থানে নুন্যতম বিদ্যুতের সংস্থান করাও সহজ হবে না। তাছাড়া, শুধু হিমচক্র নয়, প্রচলিত টিকা দেওয়া হয় সিরিঞ্জের মাধ্যমে। সংরক্ষণ করা হয় ভঙ্গুর কাঁচের ধারকে। আপাত দৃষ্টিতে সামান্য ঠেকলেও বিশ্বকে কোভিড-১৯ মুক্ত করার বিশাল চ্যালেঞ্জে এগুলো বাধা হয়ে উঠতেই পারে।  এসব বিষয় মাথায় রেখেই হিমচক্রের জটিলতা এড়াতে নতুন ধরনের টিকা তৈরির চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা ট্যাবলেট, পাউডার, মুখে দেওয়ার ড্রপ, ইনহেলারের মতো বাষ্পীয় ওষুধ ও নাকে দেওয়ার স্প্রে তৈরির চেষ্টা করছেন, যা প্রচলিত ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমেও দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দেওয়া যাবে।     

নাক, মুখ, ফুসফুস আর পাকস্থলীর অন্ত্রনালীতে থাকা মিউকাস মেমব্রেন কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তারা কোভিড-১৯ প্রতিষেধক সেবনযোগ্য ওষুধ তৈরি করতে চাইছেন। সাধারণত ,করোনাভাইরাসও শরীরের এই প্রত্যঙ্গগুলোতেই বাসা বাঁধে।

এব্যাপারে লন্ডনে অবস্থিত ইম্পেরিয়াল কলেজের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিস্টোফার চিউ বলেন, সেবনযোগ্য টিকা তৈরি করা গেলে, তা ইঞ্জেকশনের চাইতে ভালো ফল দেবে। কারণ, এগুলো সরাসরি সংক্রমণের উৎসে গিয়ে আঘাত হানবে এবং মিউকাস মেমব্রেনের টিস্যুকে জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রাখবে। টিকা ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার জন্যেও কিছুটা সময় লাগে। এক্ষেত্রে সেই সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি যোগ হবে সংক্রমণ পুরোপুরি সারিয়ে তোলার সম্ভাবনা।

মিউকাস কোষকে রোগ প্রতিরোধী করে তোলা গেলে- তা টিকাদানের সুবিধাও বাড়াবে। যেমন; এটি নাক বা মুখের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। তাই টিকা ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য যেমন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন হয়, এক্ষেত্রে তারও দরকার হবে না। চিউ মনে করেন, চিকিৎসকের নির্দেশ মাফিক সেবন করা যায় এমন ব্যবস্থা স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে টিকা বিতরণে অবিশ্বাস্য গতি আনবে। বর্তমানে চিউয়ের নেতৃত্বেই নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নেওয়া যায় এমন একটি প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা চলছে। এব্যাপারে উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া ফরাসি সংস্থা- মেদসাঁ সঁ ফ্রোঁতিয়ের ইম্যিউনোলজিস্ট বারবারা সাইত্তা একমত পোষণ করে বলেন, নির্দেশ মেনে একজন শিশুও সহজে ওষুধ সেবন করতে পারবে। নিঃসন্দেহে  এমন ব্যবস্থা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মীর প্রয়োজন কমাবে। তাছাড়া, ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য মাঠপর্যায়ে অনেক উপকরণ পাঠাতে হয়, যেগুলো বাড়তি খরচ ও ব্যবস্থাপনার চাপ যোগ করে। গবেষণাধীন ওষুধ তৈরি সফল হলে সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

সেবনযোগ্য এই প্রতিষেধকগুলো অনেক দেশে ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। যেমন বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউড অব সায়েন্সের গবেষকরা মনে করছেন, তাদের উষ্ণ ভ্যাকসিন 'পাউডার' অবস্থায় ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উষ্ণতাতে সক্রিয় থাকবে। আর দ্রবীভূত অবস্থায় ৭০ ডিগ্রী তাপমাত্রাতেও কাজ করবে। এই গবেষণাতেই জড়িত আছেন ডা. কে. শ্রীনাথ রেড্ডি। তিনি জানান, এপর্যন্ত আমরা গবেষণাগারে গিনিপিগের উপর এটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর্যায়ে আছি। সফল একটি ফর্মুলা তৈরি ও অনুমোদন পেতে এক বছর লাগতে পারে। কিন্তু, একবার সফলতা এলে তাপ সহনশীল টিকা পাউডারে পরিণত করে খুব সহজে সারাদেশে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর