× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চিকিৎসক জোনায়েতের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ!

শেষের পাতা

মারুফ কিবরিয়া
২৩ নভেম্বর ২০২০, সোমবার

একজন চিকিৎসক তিনি। হাসপাতালে রোগী দেখবেন- এটাই তার ডিউটি। কিন্তু দিনের পর দিন হাসপাতালে অনুপস্থিত। রয়েছে আরো নানা অভিযোগ। নারীর প্রতি আসক্ত এ চিকিৎসকের লালসা থেকে রেহায় পাননি নার্স- এমনকি রোগীও। প্রেমের অভিনয় কিংবা সখ্যতা গড়ে তুলেন নানা কৌশলে। এরপরই লিপ্ত হন অনৈতিক সম্পর্কে। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেছেন আরো দুটি।
নারীর পেছনে টাকা ওড়াতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা ঋণী হয়েছেন। ঋণের টাকা উদ্ধারে ব্যাংক কর্মকর্তারাও বার বার বাসায় হানা দিচ্ছেন। এমন বহু অভিযোগে অভিযুক্ত এই চিকিৎসকের নাম ডা. জোনায়েত বাতেন রুবেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার।  

বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া জোনায়েত স্ত্রী সন্তানের কাছ থেকেও এখন দূরে। স্বামীর এই কার্যকলাপ বার বার প্রকাশ করতে চেয়েও পরিবারের কথা ভেবে পারেননি স্ত্রী মোরশেদা আহমেদ মৃদুল। ২০ বছরের সংসার রক্ষা করতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন তিনি। সম্প্রতি মানবজমিনের কাছে স্বামী জোনায়েতের নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরেন মৃদুল। বলেন, ২০০০ সালের ২১শে ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের প্রথম কয় বছর তাকে ভালোই দেখেছি। কিন্তু তারপর থেকেই জোনায়েতের চলাফেরায় সন্দেহ হয়। হাসপাতালে রাতের ডিউটির কথা বলে প্রায়ই বাইরে রাত কাটাতো। কিন্তু হাসপাতালে জোনায়েতের সহকর্মীদের কাছ থেকে খোঁজ নিলে জানতে পারি সে ডিউটিতে নেই। এমন একদিন নয়, কয়েকদিন হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাস করলেই উল্টো ক্ষেপে উঠতো। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। ওই সময় ছোট ছোট দুটো বাচ্চার কথা ভেবে ডিভোর্সের হুমকি দিলে ভয় পেয়ে যেতাম। ভেবেছিলাম সন্তানরা বড় হলে জোনায়েত সঠিক পথে ফিরে আসবে। কিন্তু আসেনি। পরনারী ছাড়া তার কিছুতেই চলে না।

ডা. জোনায়েতের স্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে আমি কিছুতেই সংসার করে শান্তিতে নেই। বারবার আমার গায়ে হাত তোলা হয়েছে। আমার শ্বশুর শাশুড়িকে বিষয়টি একাধিকবার জানানোর পরও তারা ফয়সালা করতে পারেননি। বরং তাদের সামাজিক স্ট্যাটাসের কথা ভেবে ছেলে জোনায়েতের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে বাধা দেন।

২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান ডা. জোনায়েত। তখন থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নারীর সঙ্গ পেতে যা যা করার সব কৌশলই অবলম্বন করেন জোনায়েত। হাসপাতালেও খুব একটা সময় দেন না। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনুপস্থিতির বিষয়টি কাটিয়ে নিতে পারেন। মোরশেদা আহমেদ মৃদুলের বয়ানের সূত্র ধরে হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা যায়, জোনায়েতের নারী আসক্তির কথা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক হাসপাতাল কর্মী জানান, হাসপাতালের নার্সদেরও ছাড় দেন না জোনায়েত। কারো সঙ্গে কৌশলে প্রেমের ফাঁদ তৈরি করেন, আবার কারো সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেক সময় রোগী হিসেবে কেউ তার কাছে এলে তাকেও ছাড় দেন না।  

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কোনোভাবে একজন নারীর সঙ্গে সমঝোতা করতে পারলেই তাকে নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের হোটেল ও রিসোর্টে নিয়ে যান। কখনো কক্সবাজারের অভিসারে চলে যান জোনায়েত। কয়েক বছর আগে বিএসএমএমইউর এক নার্সকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যান তিনি। ওই নার্সের সঙ্গে দীর্ঘদিন অনৈতিক সম্পর্ক ছিল তার। ২০১১ সালের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন জোনায়েত। অনুসন্ধানের সূত্র ধরে পাওয়া যায় ওই নারীকে। তিনি বলেন, আমি পিজি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে বুকে ব্যথা নিয়ে যাই। তখন ডা. জোনায়তের সঙ্গে পরিচয়। তখন তিনি আমার নম্বর রাখেন। এরপর থেকে আমাকে বাইরে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে তার ফাঁদে আমি পড়ে যাই। তখনও আমি জানতাম না তার স্ত্রী সন্তান আছে। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতো। আমারও ভুল হয়েছিলো। ৫ বছর একটানা সম্পর্ক চালানোর পর আমি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেই। ২০১৭ সালে আমাকে বিয়ে করেন জোনায়েত। বিয়ের পর জানতে পারি আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তখন আমি তাকে ডিভোর্সও দিতে বলি। বিয়ের প্রথম দুই বছর আমার কাছে আসা যাওয়া করতো। খবর নিতো। ২০১৯ সাল থেকে আমার ভরণ-পোষণের খরচ দেয় না। এই বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। দিনে রাতে ফোন নম্বর বদল করে। আমি কতবার তাকে খুঁজেছি। কিন্তু কোনো খোঁজ নাই। হাসপাতালেও খবর নিয়ে জানতে পারি সে ঠিকমতো যায় না। বিয়ের পর শুনি তার আরো অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। ওই নারীর বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে জোনায়েতের সঙ্গে তার কিছু অন্তরঙ্গ ছবি। পাওয়া যায় তাদের বিয়ের কাবিননামাও। এতে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৩১শে জানুয়ারি ওই নারীকে বিয়ে করেন জোনায়েত। তিন লাখ টাকা দেনমোহর ধরা হয় ওই কাবিনামায়।  

ডা. জোনায়েতের কীর্তি আরো দীর্ঘ। এই চিকিৎসকের বাড়ি দোহারের নবাবগঞ্জে। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলে তিনি। স্থানীয় রাজনীতিতেও ব্যাপক প্রভাবশালী জোনায়েতের পরিবার। নবাবগঞ্জে পিকেবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। সেখানকার গভর্নিং বডির সভাপতিও জোনায়েত। জানা যায়, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষিকার সঙ্গেও তিনি সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই শিক্ষিকা আবার এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী। দীর্ঘদিন পরকীয়ার পর জোনায়েত গত বছর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তার প্রথম স্ত্রী মৃদুলের তথ্যমতে বর্তমানে জোনায়েত তৃতীয় স্ত্রী নিয়ে হাতিরপুল এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। এদিকে গত বছর প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে আসায় নবাবগঞ্জ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই শিক্ষিকার বিষয়ে পিকেবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনো শিক্ষকই মুখ খোলেন না। অবশ্য কলেজের অধ্যক্ষ শাহ আজিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে এই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে ছিল। তবে অনেকদিন ধরেই তার কোনো খোঁজ নেই। আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গেছে। এখন  কোথায় আছে জানি না। জোনায়েতের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। তবে এলাকায় অনেকে বলে। সেটাই জানি। ডা. জোনায়েতের স্ত্রী মৃদুল জানান, তার এসব কার্যকলাপের বিষয়ে বিএসএমএমইউর পরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন মানবজিনকে বলেন, আমি শুনেছি এ অভিযোগের বিষয়ে। এখনো পরিষ্কার নয়।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জোনায়েতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার অফিসিয়াল ভিজিটিং কার্ডে থাকা দুটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হাসপাতালে গিয়েও মেলেনি তার দেখা।  

একাধিকবার খোঁজ না মেলায় জোনায়েতের কর্মস্থল বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হাসপাতালে জোনায়েতের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডা. জোনায়েত অনেকদিন ধরে উপস্থিত নেই। আমরা বিষয়টি ভিসি মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

অপরদিকে স্বামীর বেপরোয়া জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে গত জুলাই মাসে জোনায়েত বাতেনের বিরুদ্ধে যৌতুক ও বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করেন প্রথম স্ত্রী মোরশেদা। ঢাকা দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা ওই দুই মামলার নম্বর যথাক্রমে ১৩৩/২০ ও ১৫৯/২০।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর