× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইইউ’র জিএসপি সুবিধা / মানবাধিকার সুরক্ষার তাগিদ

প্রথম পাতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৬ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশকে দেয়া বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার শর্ত হিসেবে শ্রমিক অধিকারের পাশাপাশি সার্বিক মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে ঢাকাকে চাপ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ নিয়ে বেশ ক’মাস ধরে দেন-দরবার চলছে। ইইউ’র জিএসপি সুবিধার মৌলিক শর্ত হচ্ছে- মানবাধিকার। জিএসপি সংক্রান্ত কনভেনশনের প্রথম প্যারাগ্রাফে এ সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বলা হয়েছে, জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত বিশ্বের উন্নয়নশীল ৯৩ রাষ্ট্রের মধ্যে কেউ যদি মানবাধিকারের মৌলিক শর্ত বা শ্রম অধিকারের আদর্শকে ভয়াবহভাবে লঙ্ঘন করে এবং এটি যদি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই ওই দেশের সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ঢাকার প্রতি ইইউ’র এমন হুঁশিয়ারি বা সতর্কতা না থাকলেও জিএসপি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক যাবতীয় কমিউনিকেশন এবং আলোচনায় মানবাধিকার সমুন্নত রাখার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। ইইউ’র সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, জিএসপি’র আলোচনায় বরাবরই মানবাধিকার সমুন্নত রাখার তাগিদ থাকে। কিন্তু এবারের তাগিদগুলো বেশ জোরালোভাবে আসছে বলেই মনে হচ্ছে, যা অনেকটা চাপের মতোই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার ইংরেজি ভাষ্য ছিল এমন- ‘ইইউ হ্যাজ এমফাসাইজড অন হিউম্যান রাইটস অ্যাজ এ কন্ডিশন ফর প্রিফারেনশিয়াল মার্কেট অ্যাকসেস।’ অবশ্য এ নিয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটর ঢাকার ডেটলাইনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে মানবাধিকারকে ইইউ’র নতুন শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়ার দাবি করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে- সরকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ২০২৩ সালের পর বাংলাদেশের ইবিএ সুবিধা বহাল থাকবে কি-না, তা শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষার ওপর নির্ভর করবে। ইইউ জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউর (ইউপিআর) সুপারিশ করা মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে টাইমবাউন্ড কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে। ২৯শে অক্টোবরে স্বাক্ষর করা চিঠিটি ঢাকার ইইউ দূতাবাস থেকে গত ৩রা নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন  মোমেন, শ্রম সচিব কেএম আব্দুস সালাম ও বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিনের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ইইউ’র ডিরেক্টরেট অব  ট্রেড এর পরিচালক ইউয়া সাইনাউইক, ডিরেক্টরেট অব এমপ্লয়মেন্টের পরিচালক জর্ডি কিউরেন গটর এবং ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস-এশিয়া প্যাসিফিকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপাওলিনি। চিঠিতে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতে জিএসপি সুবিধা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন কাজ করে এবং ২০২৩ সালের পরে অগ্রাধিকার মঞ্জুর করার শর্তসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশ মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের মানের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে তবে তা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’ চিঠিকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে আরো বলা হয়, ইইউতে শুল্কমুক্ত রপ্তানিতে বাংলাদেশের সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য, জোরালো এবং ফলাফল-ভিত্তিক এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) এনগেইজমেন্ট প্রক্রিয়া প্রয়োজন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে শুধু অস্ত্র বাদে সব পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ যদি ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতও হয়, তাতেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতি ১০ বছর পর পর ইবিএ কর্মসূচি পর্যালোচনা করে থাকে। চলতি ইবিএ’র মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হবে। পরবর্তী স্কিম নিয়ে এখন ইইউ কাজ করছে। ইইউ’র চিঠি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের একটি বক্তব্যও সংযুক্ত ছিল সাউথ এশিয়ান মনিটরের রিপোর্টে। কোড আনকোর্ড বক্তব্যটি এমন ‘বিষয়গুলো আমরা সময়মতো হ্যান্ডেল করবো। এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’ প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বাস্তবায়নের জন্য তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে চিঠি দিয়েছিল ইউএন হিউম্যান রাইটস কমিশন। কমিশনের ইউপিআর-এ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার, নাগরিকদের সভা-সমাবেশ করার অধিকারসহ রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ৩২ ধারা বাতিল করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করাসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনাগ্রহ রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সাউথ এশিয়ান মনিটরের রিপোর্টে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবারই প্রথম মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউপিআর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পরিকল্পনা চেয়েছে। এর আগে ইইউ কখনো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাণিজ্য সুবিধার সঙ্গে মানবাধিকারের ইস্যুকে যুক্ত করেনি। মানবাধিকার সুরক্ষার সঙ্গে  বেশকিছু মন্ত্রণালয় ও আইন সম্পৃক্ত। ইইউ’র শর্তারোপের পর সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনসহ কর্মপরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইউপিআর বাস্তবায়ন বিষয়ে ঢাকায় একটি কর্মশালাও করবে ইইউ। বাণিজ্য সুবিধার সঙ্গে প্রথমবারের মতো মানবাধিকার ইস্যুকে যুক্ত করার জন্য কিছু সাংবাদিক ও এনজিওকে দায়ী করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে ১৯৩টি দেশ আছে। সব দেশেই কিছু অকাম-কুকাম হচ্ছে। কিন্তু ওইসব  দেশ নিয়ে কেউ কথা বলে না। এর কারণ হচ্ছে, ওইসব দেশের মানুষ এগুলো নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকে না।’  তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু সাংবাদিক এবং এনজিও সারাক্ষণ এসব নিয়ে মাথা ঘামায়। মাথা ঘামায়, কারণ তারা এজন্য বিদেশ থেকে অর্থ পায়। এসব নিয়ে তারা বিদেশিদের কাছে বারবার ধরনা দেয়, তাদেরকে ত্যক্ত করে। এ কারণেই বিদেশিরা এসব নিয়ে কথা বলে। আমরা যতো কম লাফালাফি করবো, ততোই মঙ্গল।’ এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার এবং বাকস্বাধীনতা সবই একের সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত এবং বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুকে এই অধিকারগুলোর প্রেক্ষিতেই উপস্থাপন করে আসছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক  লেবার সম্মেলনে মানবাধিকারসহ যে ইস্যুগুলো আলোচিত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার ইস্যুর কথা তারা কখনো  তোলেনি। ‘যেহেতু বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে তাই মানবাধিকার ইস্যুগুলো ধীরে ধীরে সামনে আসছে। আমরা আশা করি জিএসপি সুবিধা চলমান রাখার জন্য সরকার নিশ্চয়ই এই ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি মোটেও অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ, বিশেষত জিএসপি সুবিধার সমপ্রসারণের সম্ভাবনা, শ্রমের অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউপিআর’র আওতায় অন্যান্য প্রতিশ্রুতিগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বুঝতে হবে  যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ব্যবসায়িক সম্পর্ক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণভাবে মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান এবং বিশেষত শ্রম অধিকারের প্রতিপালনও তাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তার মতে, কেবল ইইউ দেশগুলোতে রপ্তানি সুবিধার জন্যই নয় বরং বিশ্ব সমপ্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্যও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাশা গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত সরকারের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর