× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কাস্টমস গেটে স্ক্যানার স্থাপন /প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ২০ ভাগ, বিলম্বের নেপথ্যে-

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার

দুর্নীতিগ্রস্ত কাস্টমস কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের  যোগসাজশে প্রতি বছরই আমদানি  থেকে প্রচুর অঙ্কের শুল্ক ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সরকার কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর সহ দেশের সকল কাস্টমস গেটে স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রীর     নির্দেশনায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সময় থেকেই ১৩টি স্ক্যানার ও ওয়েব্রিজ স্থাপন এবং ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে  কেন্দ্রীয় মনিটরিং স্টেশন স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। মাত্র ১৫ মাসের মধ্যেই ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। আবেদন প্রাপ্তির পর যাচাই বাছাই শেষে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানও নির্ধারিত হয়ে যায়। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হিসেবে আবু হেনা মো. রাহমাতুল মুনিম দায়িত্বে আসার পর রহস্যজনক কারণে পুরো দরপত্রই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রগুলো বলছে, মূলত দুর্নীতিগ্রস্ত শুল্ক কর্মকর্তাদের চাপেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
পূর্বের দরপত্র অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করা হলেই স্ক্যানার স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে যেতো। কিন্তু তা না করে, আহ্বান করা হয়েছে নতুন একটি দরপত্র।
নতুন এই দরপত্রে একই স্ক্যানার স্থাপনের কথা বলা হলেও, প্রকল্প ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাস্তবায়নের সময়কাল ১৫ মাস থেকে বাড়িয়ে ৩ বছরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সরাসরি স্ক্যানার স্থাপনের বিরোধিতা করতে না পেরে, প্রকল্পে বিলম্ব ঘটিয়ে সময়ক্ষেপণের কৌশল হাতে নিয়েছে কাস্টমস কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের একটি দুষ্টচক্র।
এর আগে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী সারা দেশের কাস্টমস গেটে স্ক্যানার স্থাপনের জন্য একটি পাবলিক প্রাইভেট অংশীদারিত্ব বা পিপিপি প্রকল্পের প্রস্তাব উঠে। ওই প্রকল্পে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রাথমিক অনুমোদন ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললেও অজ্ঞাত কারণে থমকে যায় প্রকল্পের অগ্রগতি।
১২ বছর আগে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪টি স্ক্যানার স্থাপন করা হয়। এই স্ক্যানারগুলোর মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। সফটওয়্যারও মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু হার্ডওয়্যার ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করাও দুরূহ। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বছরের শুরুর দিকে সরকার দু’টি আধুনিক স্ক্যানার স্থাপন করে। এ ছাড়া চীন সরকার একটি  মোবাইল স্ক্যানার প্রদান করেছে। কিন্তু সকল কাস্টমস গেটে এখনো স্ক্যানার  নেই, কয়েকটি আবার বিকল হয়ে আছে। সব মিলিয়ে এখনো আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তারাই সর্বেসর্বা। ফলে রাজস্ব ফাঁকি, দুর্নীতির সুযোগ রয়েই গেছে।
শুধুমাত্র রাজস্ব ফাঁকিই নয়, স্ক্যানার না থাকার সুযোগে বিভিন্ন অবৈধ ও নিষিদ্ধ পণ্যও ঢুকতে পারছে দেশে। গত বছর র?্যাবের অভিযানে উঠে আসে যে, নিষিদ্ধ ক্যাসিনো ও জুয়াসামগ্রী দেশে প্রবেশ করেছিল কাস্টমস কর্মকর্তাদের নাকের ডগা দিয়ে। সমপ্রতি উজি সাব-মেশিনগানের মতো সামরিক অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকেছে। এ ছাড়াও ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন ও জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল ম্যারিটাইম অর্গানাইজেশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সরকারের প্রতি এক্স-রে স্ক্যানার স্থাপনের সুপারিশ জানিয়েছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দাহ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ প্রবেশের ক্ষেত্রে তারা উদ্বেগ জানিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের জিডিপি, অর্থনীতির আকার ও সরকারি বাজেটের আকার বছরে বছরে বেড়েছে। গত ১০ বছরে সরকারের বাজেটের কলেবর প্রায় ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাজেট বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরকারকে সব সময়ই হিমশিম খেতে হয়েছে। সরকার ভিশন-২০৪১ এর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার  যেই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তাতে রাজস্ব যথাযথভাবে আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু গুটিকয়েক কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে এখনই বিপুল পরিমাণ শুল্ক ও রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। এখনই রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে না পারলে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা সহ ভিশন-২০৪১ এর বাস্তবায়ন নিদারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর