দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা দুবার কলকাতায় এসেছিলেন। একবার দুহাজার আট, আরেকবার দুহাজার সতেরোর ডিসেম্বরে। তার আগেই বিদেশের স্টেডিয়ামে বসে আমি ম্যারাডোনার খেলা দেখেছি। ২০০৮ সালে যখন কলকাতায় এলেন তার দীর্ঘ আগে তিনি খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। তবু তাঁর আসার লগ্নে কলকাতা বিমানবন্দরে সে কি উন্মাদনা! কিন্তু, সেই ম্যারাডোনাকে দেখে একটু চমকে উঠেছিলাম। কোথায় গেল সেই ছিপ্ছিপে চাবুকের মতো চেহারা? খেলা ছাড়ার পর ম্যারাডোনাকে আমি দেখেছি প্যারিস, টোকিও কিংবা সিওল এ। কিন্তু, তখন তো এই পৃথুল ম্যারাডোনাকে দেখিনি। কিন্তু হোন মেদবহুল, সল্ট লেক স্টেডিয়ামে তাঁর বল জাগলারি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। যেমন মুগ্ধ হয়েছিলাম ইতালিয়া - ৯০তে। ২০০৮ এ বাংলায় বাম শাসন। ওই সফরে ম্যারাডোনার ছায়াসঙ্গী ছিলেন তদানীন্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। সুভাষ দা মাথায় সবসময় পরে থাকতেন একটি সাদা টুপি। ম্যারাডোনা তাঁকে হ্যাট বলে ডাকা শুরু করলেন। সেই সময় ম্যারাডোনার পায়ের ছাপ দিয়ে একটা ফুটবল আকাদেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। কোথায় কি, ম্যারাডোনাও চলে গেলেন, সেই প্রকল্পেরও দফা রফা। এর ঠিক ন বছর পরে দুহাজার সতেরোর ডিসেম্বরে ম্যারাডোনা দ্বিতীয়বারের জন্যে কলকাতায় এসেছিলেন। চেহারায় মেদের আধিক্য প্রবল। অসংযমী জীবনযাপনের ছবি চোখে মুখে।
বয়েস তখন সাতান্ন। কিন্তু, মোহনবাগান মাঠে সেই ড্রিবলিংয়ের কসরৎ প্রদর্শন। বল জাগলারি। কোথায় যেন সুক্ষœভাবে এক ঝলকের জন্যে জেগে উঠেছিলেন সেই পুরানো ম্যারাডোনা। কলকাতা ছাড়ার আগে ম্যারাডোনা বলেছিলেন- আই লাভ কালকুত্তা। উইল রিটার্ন। কলকাতায় সেই ফিরে আসা হলোনা। ম্যারাডোনা চলে গেলেন চির ঘুমের দেশে।