× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তাজরীনে আগুনের ৮ বছর /১০৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য হয়েছে মাত্র ৮ জনের

শেষের পাতা

রাশিম মোল্লা
২৯ নভেম্বর ২০২০, রবিবার

২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তছনছ হয়ে যায় তাজরীন ফ্যাশন। নিমেষেই দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় ১১২ গার্মেন্টস শ্রমিক। এতে আহত হন অন্তত ২০০ শ্রমিক। নিহত শ্রমিকদের অনেকেরই পরিচয় নিশ্চিত হতে না পেরে তাদের মরদেহ অজ্ঞাতনামা হিসেবেই জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কারো কারো মরদেহ শনাক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নির্মম ওই ঘটনার ৮ বছরেও শেষ হয়নি সাক্ষীর শুনানি। মামলার বিচারকাজ চলছে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে।
২০১৫ সালের ৩রা সেপ্টেম্বরে আদালতে মামলার চার্জ গঠন হয়েছে। বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর পাঁচ বছর শেষ হয়েছে। এই পাঁচ বছরে ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য হয়েছে মাত্র ৮ জনের। এই মামলায় জামিনে আছেন ৮ আসামি। পলাতক রয়েছে ৫ জন।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, সাক্ষীদের বর্তমান ঠিকানায় অধিকাংশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হয়েছে তারা সঠিকভাবে আদালতের সমন পাচ্ছেন না। তবে অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকরা বলছেন, মামলার বিষয়ে তাদের কেউ কিছু জানায় না। সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয় না। ডাকলে অবশ্যই সাক্ষ্য দিতে যেতাম। ইতিমধ্যে এই মামলায় যে ৮ জন সাক্ষী দিয়েছেন- মামলার এজাহারকারী এস আই মো. খায়রুল ইসলাম, সাক্ষী রেকর্ডিং অফিসার মো. শাহ জালাল, জব্দ তালিকা (পার্শ্ববর্তী মালিক) মো. সোনা মিয়া মণ্ডল, পাবলিক (সুইং অপারেটর) মাহে আলম, পাবলিক (অপারেটর) মোসা লাইলী বেগম, রাকিব হাসান, সুবল মণ্ডল এবং এস আই আবিদ হোসেন। এখনো বাকি আছে ৯৬ জন সাক্ষী।

চার্জশিটে দেখা যায়, এই মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাক্ষীই সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ কর্মকর্তার এখনো সাক্ষী নেয়া হয়নি। আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম বদরুল আলম (পিপিএম), পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তফা কামাল, সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী এস আই রবিউল আলম, এস আই মালেক খসরু খান, এস আই মো. আবিদ হোসেন, এস আই মো. শফিকুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম, এস আই  মো. মনিরুজ্জামান, এস আই মমিনুল হক, এস আই আরাফাত হোসেন, এস আই মনিরুজ্জামান এবং এস আই আবিদ হোসেনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি কর্মকর্তা।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মান্নান খান বলেন, সাক্ষীদেরকে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার চার্জশিটে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী অধিকাংশ সাক্ষী বসবাস করেন না। যে কারণে সাক্ষীর ঠিকানায় সমন পাঠানো হলেও তারা সমন পাচ্ছেন না। আদালতও সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিতে সমস্যা হচ্ছে। এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে অনেক সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের এখনো সাক্ষী নেয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সাধারণত পাবলিক সাক্ষীগুলো আগে নেই। আগামী ধার্য্য তারিখেও ৫-৬ জন পাবলিক সাক্ষীকে সাক্ষী দেয়ার জন্য সমন পাঠানো হয়েছে। যেহেতু এই মামলাটি অনেকদিন হয়ে গেছে, তাই মামলাটি শেষ করার লক্ষ্যে দ্রুত চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষী নেয়ার জন্য সমন পাঠানো হবে।

নথি থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন মারা যান। আহত ও দগ্ধ হন দুই শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, তাজরীনের ঘটনা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। পোশাকশিল্পে এ রকম অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ঘটনার পর মামলা হয়, তদন্ত হয়, কিন্তু কোনো ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয় না। যতদিন পর্যন্ত ন্যায়বিচার সম্পন্ন না হবে, দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা না হবে, শ্রমিকের পক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন বলা যাবে না এ শিল্পের অগ্রগতি হয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, তাজরীনে আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর