× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে অপরাধের মূলে ‘পুলিশের সোর্স’

প্রথম পাতা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
৩০ নভেম্বর ২০২০, সোমবার

অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহে সোর্স হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবহার করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। লিখিত কোনো নিয়োগ না থাকলেও অপরাধী গ্রেপ্তারে এসব সোর্সই মূল ভরসা পুলিশ কর্মকর্তাদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে সোর্সরা। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে এমন কয়েকটা অপরাধ প্রকাশ্যে আসলেও বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে আড়ালে। মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটনের ভাষ্য, সুনির্দিষ্ট বিধান না থাকায় পুলিশের সোর্স বিষয়টি জবাবদিহিতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ সুযোগে সোর্সরা অনেক সময় পুলিশকে ব্যবহার করে ফেলে। পুলিশও সোর্সদের দেয়া তথ্য যাচাই না করেই অভিযান চালায়। যাতে অনেক নিরীহ মানুষ বড় ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
তবে সোর্স সমপর্কে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘গোপন সংবাদ বের করাই সোর্স ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষও সোর্স হতে পারে। আবার কোনো বিজ্ঞজনও হতে পারেন সোর্স। মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, যে কেউ সোর্স হতে পারে। আবার কখনো কখনো কোনো ঘটনা বা চক্রে জড়িত কাউকেও সোর্স করা যেতে পারে। তবে এটি পুরোটাই নির্ভর করে কর্মকর্তার দক্ষতা বা কৌশলের ওপর।’ তিনি আরো বলেন, কাগজে কলমে স্বীকৃত কোনো সোর্স রাখার নিয়ম নেই। তাই কেউ সুনির্দিষ্ট সোর্স বলা যাবে না বা সোর্স বলেও কেউ দাবি করতে পারবে না। সিএমপিতে ক্রাইম জোনের ডিসিদের সপষ্টতই বলেছি, কেউ যেন সোর্স না পালে। এরকম হলে যদি কোনো সোর্স অপরাধ করে তার দায় দায়িত্ব ওই কর্মকর্তাকে নিতে হবে। সোর্স পরিচয় দিলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সেই সঙ্গে তার শেল্টারদাতাকেও জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে।’ সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনি বলতে পারেন সিএমপিতে কোনো সোর্স নেই। কেননা আমাদের গোয়েন্দা বিভাগকে আমরা আরো তৎপর করেছি। পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করেছি। যাতে জনগণই আমাদের সোর্স হয়ে উঠে। আমরা মনে করতে চাই পুরো নগরবাসীই আমাদের সোর্স।’  পুলিশের তথ্যমতে, গত ৯ই অক্টোবর শুক্রবার রাঙ্গুনিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে চান্দগাঁও থানার মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ আটজনকে  গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা জাহাঙ্গীর ও রিপন পুলিশের সোর্স।  একইভাবে ২৭শে সেপ্টেম্বর নিজের ফুপাতো বোনের বান্ধবীর সহযোগিতায় ডবলমুরিং থানার সুপারিওয়ালাপাড়ার একটি বাসায় ধর্ষণের শিকার হন স্বর্ণা নামের এক কিশোরী। ধর্ষণের মূল হোতা পুলিশের সোর্স চান্দু মিয়া। তার বিরুদ্ধে পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ রয়েছে। ২৯শে আগস্ট রাতে নগরীর রৌফাবাদের বাসায় ফেরার পথে বায়েজিদ থানার অক্সিজেন মোড়ে শফি নামের এক ব্যক্তি বাদশা মিয়া আর রবিনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের পথ আটকান স্বামী-স্ত্রী দুজনকে। তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী নয়, এমন দাবি করে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। পরে সেখান থেকে সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে করে তুলে নিয়ে অদূরে ছালমা কলোনিতে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ৫ জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে স্ত্রীকে। এই ঘটনার মূলহোতা শফি পুলিশের সোর্স। ঘটনার পর অন্য আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও পুলিশের সোর্স শফি এখনো পলাতক। ১৬ই জুলাই মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিংয়ের আগ্রাবাদে একটি বাসায় পুলিশ চুরির আসামি ধরতে গিয়ে মারধর করেন এক কিশোরকে এবং অপদস্থ করেন তার মা-বোনকে। এই অপমানে নিজ ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেন ওই কিশোর। এরজন্য দায়ী করা হয় ডবলমুরিং থানার এস আই হেলাল ছাড়াও পুলিশের দুই সোর্সকে। পরে অবশ্য হেলালকে বরখাস্ত করা হলেও অধরাই থেকে যায় সেই সোর্সরা। সোর্সদের বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে ফাঁসানো এবং হয়রানিসহ মামলা দেয়ার অভিযোগ কম নয়। এমনকি নিজেও সোর্সের আড়ালে মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে। গত বছরের ১৫ই মে জহিরুল ইসলাম নামে একজনকে বাকলিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সে নিজেকে সোর্স হিসেবে পরিচয় দিতো। এর আড়ালেই মূলত বিক্রি করতো ইয়াবা।

সোর্সের বিষয়টি সিএমপিতে আলোচনার জন্ম দেয় চট্টগ্রামের আলোচিত পুলিশ সুপার (অব.) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায়। ২০১৬ সালের ৫ই জুন নগরীর জিইসি মোড়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার নির্দেশদাতা ছিল তারই সোর্স আবু মুছা। অস্ত্র সরবরাহ করে অপর সোর্স এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা। যেই অস্ত্রে খুন হন মিতু। সিএমপিতে এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশের সোর্সরা। কয়েকটি প্রকাশ্যে আসলেও অনেক ঘটনা থেকে গেছে আড়ালে।  সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, পুলিশ রাজনৈতিক দলের কর্মী, বিভিন্ন ছোট অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, জেল থেকে ছাড়া পাওয়া দাগী আসামি, স্থানীয় বাসিন্দা, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে। বিশেষ করে সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তারাই এসব সোর্সকে কাজে লাগান। এমনকি অনেক সোর্সের কাছে থানা পুলিশের দেয়া বিশেষ চিহ্নযুক্ত সোর্সের পরিচয়পত্রও আছে!
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর