× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যে কারণে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে ওআইসি

প্রথম পাতা

মিজানুর রহমান
১ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসায় ইসরাইলের অগ্নিসংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)। অগ্নিকাণ্ডের পর জেরুজালেমের প্রধান মুফতির ভবিষ্যতে ‘ইহুদিবাদী অপরাধ’ রোধের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধের প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ্‌ উদ্যোগী হয়েছিলেন কিছু একটা করার। সেই থেকে সিরিজ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ওআইসি। কেবল মুসলিম বিশ্ব নয়, সংস্থাটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন সংকটে কাজ করছে। বলা হয় জাতিসংঘের পরেই ওআইসি’র অবস্থান। বিশ্বরাজনীতিতে ওআইসি’র সম্পৃক্ততা বাড়লেও সমালোচকরা সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়ই শঙ্কিত! তাদের মতে, ‘রিজন অব এক্সিসটিং’ বা ওআইসি গঠনের কার্যকারণ যে ‘জেরুজালেম’ তা থেকে সংস্থাটি তথা সৌদি আরবসহ প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলো আজ অনেক দূরে চলে গেছে! সৌদি আরবসহ ধনী ও নেতৃস্থানীয় আরব দেশগুলো ইসরাইলের সখ্য বা ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। তারা ইসরাইলের স্বীকৃতি দিতে চলেছে। যা নিয়ে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষত: প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতা যতো গভীর হচ্ছে ওআইসি’র প্রাসঙ্গিকতা ততই কমছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। তাছাড়া ওআইসি’র অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা তো আছেই। যেমন সৌদি আরব এবং ইরানের পরস্পর বিরোধী অবস্থানও সংস্থা হিসেবে ওআইসিকে দুর্বল করেছে। ইরান-সৌদি আরব সংকটে আঞ্চলিক রাজনৈতিক আধিপত্য ও তেলের বাজার দখল মুখ্য হলেও নিজস্ব ও আঞ্চলিক স্বার্থের সংঘাতকে ওআইসি’র ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। যাকে মারাত্মক বিপজ্জনক মনে করছেন অনেকেই। বিশ্লেষকদের মতে, এ বিরোধ যত বাড়বে সংগঠনের ঐক্য ও সংহতি সংকটে পড়বে। কারণ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কোনো এক পক্ষকে সমর্থন করে সদস্য দেশগুলো বিপাকে পড়বে। ওআইসি’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং বিশ্লেষকদের মতে, ওআইসি’র কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে অনেক বছর ধরে কথা হচ্ছে। ২০০৫ সালে সারা দুনিয়ার ১০০ জন ওয়াইজম্যান মক্কার শীর্ষ সম্মেলনে কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু এটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তারও আগে ১৯৯০ সালের ৫ই আগস্ট কায়রোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে ইসলামে মানবাধিকার বিষয়ক ঘোষণা এসেছিল। এতে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ও সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু ২০ বছরেও সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোতে। মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বেশির ভাগ সদস্য দেশে রাজনৈতিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত। এসব ঘটনার উল্লেখ করে সমালোকরা বলছেন, ওআইসি দিনে দিনে সম্মেলন ও অঙ্গীকার ঘোষণাসর্বস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মানবিক সংকট মোকাবিলায়ও ওআইসি’র ভূমিকা হতাশাজনক। তাদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলামের প্রথম কিবলা ও রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর স্মৃতিবাহী আল-আকসা মসজিদ এবং ফিলিস্তিন ইস্যু মুসলিম উম্মাহ্‌কে দারুণভাবে হতাশ ও মর্মাহত করেছিল। সেই পরিস্থিতিতে ওআইসি’র প্রতিষ্ঠা মুসলিম দেশের জনগণকে আশাবাদী করে তুলেছিল। খেলাফতব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বশূন্যতা ওআইসি কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারবে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জনমনে। ওআইসিও আশাব্যঞ্জক কিছু কর্মসূচি নিয়েছিল। যেমন-সদস্য দেশগুলো সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে পরস্পরের সহযোগিতা; বিশেষত: শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অগ্রগতি নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করা। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, বিশ্বে প্রায় ১৮০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী ওআইসি তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। শীর্ষ সম্মেলন থেকে শুরু করে নির্ধারিত, অনির্ধারিত, জরুরি সব ধরনের সম্মেলন করছে ওআইসি, কিন্তু সংস্থাটির বাস্তব অবদান টের পাওয়া যাচ্ছে সামান্যই। জানুয়ারিতে ইরানের প্রধান সমরবিদ জেনারেল কাশেম সোলাইমানি এবং শুক্রবার রাতে ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিজ্ঞানী ফাকরিজাদেহ হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যের অনেকে প্রতিক্রিয়া দেখালেও ওআইসি নীরব। সমালোচকরা এ-ও বলছেন, মুসলিম বিশ্বের ন্যায্য স্বার্থ দেখা এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো ওআইসি’র প্রধান এক গঠনতান্ত্রিক লক্ষ্য। কিন্তু সংস্থাটি কাঙ্ক্ষিত ভূমিকায় নেই। একদিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ব্যর্থ, অন্যদিকে সমপ্রদায়ের ভেতরে শিয়া-সুন্নি দূরত্ব বাড়াতেও ভূমিকা রেখেছে। সোলাইমানির মৃত্যুর পর যা চূড়ান্ত এক উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় কৃত্রিম ‘ইসলাম-ভীতি’র প্রকোপ কমাতেও ওআইসি কিছু করতে পারেনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর