বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) আশংকা বৃটেন ও ইউরোপে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। বিশ্ব জুড়ে দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হতে না হতেই এই আশংকা দেখা দিয়েছে। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব গতকাল একই আশংকা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, লকডাউন বিধি-নিষেধ সঠিক ভাবে মেনে না চললে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকিতে পড়তে হবে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেই সম্ভাব্য ‘তৃতীয় ঢেউ’ এর আশঙ্কার রয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাব বলেন, আমরা যদি সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারি তবে এই ঝুঁকি আছে।
অপরদিকে ভ্যাকসিন বিষয়ক নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিম জাহাওয়ী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, করোনার টিকা প্রদান শুরু হলে উৎকন্ঠার অবসান হবে। শিঘ্রই মানুষ স্বাভাবিকতায় ফিরে আসবে। তবে কবে নাগাদ টিকা দেওয়া শুরু হবে তা তিনি নিশ্চিত করেননি। ৭ ডিসেম্বর বায়োএনটেক ও ফাইজারের টিকা হাতে পাওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
এখন জনমনে প্রশ্ন জেগেছে কোনটি আগে, ভ্যাকসিন না করোনার তৃতীয় ঢেউ?
করোনা সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে সাত নম্বরে আছে যুক্তরাজ্য। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৫৭ জন। ইতোমধ্যে মারা গেছেন ৬৬ হাজার ৭১৩ জন। বিশ্বে মোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৪ জনে। তবে সুস্থ হয়েছেন ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ৯৭ জন।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্ত ১ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৩৮ জন। ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৩২ জন এখন পর্যন্ত মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্থানে ভারত, ৩য় ব্রাজিল, ৪র্থ রাশিয়া, ৫ম ফ্রান্স, ৬ষ্ঠ স্পেন ও ৭ম ইউকে। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৪ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৯ জনের। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ জনের।
ডাব্লিউএইচও‘র করোনা সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান ডেভিড নাবারো সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গরম কালে করোনার নিয়ম না মানার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। ঠান্ডা পড়তেই ফের সংক্রমন শুরু হচ্ছে। ২০২১ সালের গোড়ায় ইউরোপ জুড়ে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। তাতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশী হবার আশংকা রয়েছে।
করোনা সংক্রমনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে ডেভিড নাবারো বলেন, পাটিগণিতের হিসেবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় না। বরং তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণের হার আট গুণ হলে দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বাড়বে ৪০ গুণ। তৃতীয় সপ্তাহে ৩০০ গুণ এবং চতুর্থ সপ্তাহে হাজার গুণ। ইউরোপ এই বিষয়টি বুঝতে না পারলে আগামী কয়েক মাসে সমস্যা বিপদজনক হয়ে দাড়াবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওষুধ অনুমোদন সংক্রান্ত ইউরোপীয় মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) জানিয়েছে, ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি কোভিড-১৯ টিকার সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে কি না তা ২৯ ডিসেম্বর বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংস্থাটি আরো জানায়, মডার্নার তৈরি কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন করা হবে কি না সে বিষয়ে তারা ১২ জানুয়ারির মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জার্মান ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়োএনটেক এবং তাদের মার্কিন অংশীদার ফাইজার আজ করোনাভাইরাস টিকার শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন দ্রুত দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের বিএনটি১৬২বি২ নামে পরিচিত টিকাটি অনুমোদিত হলে ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ চলতি মাসে ইউরোপে এর ব্যবহার শুরু হতে পারে বলে তারা আশা করছে।