লেখাটি যখন লিখছি ঠিক এর পনের বছর আগে আমার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে যাত্রা শুরু। তখন থেকেই আমি প্রতিদিনই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি কোনো না কোনোভাবে। আমি দু’বার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এবং দু’বার অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে কাজ করেছি এবং ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস রিফর্ম লেজিসলেশান’ পদ্ধতিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে কাজ শুরুর ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। ২০০৪ সালে যাত্রার শুরুতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুগুলো। আমার কখনো মনে হয়নি এই ইস্যুগুলোই আমাকে সান ফ্রান্সিসকো থেকে স্যাক্রামেন্টা এবং পরে ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়ে যাবে।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে আমার যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিকতা হয়েছিল হার্বস থিয়েটারে। যা সান ফ্রান্সিসকোর স্মৃতিসৌধের পারফরমিং আর্ট সেন্টারে অবস্থিত। একই মঞ্চে ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
আমরা এখন নতুন এক ইতিহাসের সূচনা করেছি একই স্থান থেকে। কিন্তু ঐক্যই ছিল আমাদের সেদিনেরও মূল সুর। আমার মা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়া সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রোনাল্ড জর্জ আমাকে শপথ পড়ান। আমিই তাকে বেছে নিয়েছিলাম আমাকে শপথ পড়ানোর জন্য। আমার স্মরণে আছে মায়ের চোখে-মুখে সেদিন সত্যিকারের গৌরবের চিহ্ন দেখেছিলাম।
শপথ নেয়ার হলঘরটি ছিল উপচে পড়া ভিড়। হলঘরটির কানায় কানায় শহরের শত শত মানুষ দাঁড়িয়েছিল। বাদকদল ড্রাম বাজাচ্ছিল। তরুণ গায়ক দল সমস্বরে কোরাস গাইছিল। যাজক আমার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। চাইনিজ ড্রাগন নাচের তালে তালে হলটিতে ঘুরছিল। এটা ছিল জাতিগত এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং যত সুন্দর হওয়া সম্ভব ততটাই।
প্রথম সারিতেই বসা ছিলেন ওকল্যান্ডের মেয়র জেরি ব্রাউন। তিনি আমাকে বললেন, ঠিক ষাট বছর আগে একইদিনে এই মঞ্চে তার পিতা একইভাবে শপথ নিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে একইদিনে মেয়র হিসেবে শপথ নেন গ্যাবিন নিউ সম। ফলে ধারণা করা হচ্ছিল যে, স্যান ফ্রান্সিসকো রাজনীতিতে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।
আমি জনতার ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাই, তাদের সঙ্গে হাত মিলাই, জড়িয়ে ধরি এবং আনন্দে মেতে উঠি। উৎসব যখন শেষ পর্যায়ে এক ভদ্রলোক তার দু’কন্যাকে নিয়ে আমার কাছে আসেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের আজ এখানে নিয়ে এসেছি দেখাতে যে, তাদের মতো দেখতে একজন মানুষ কত বড় কিছু হতে পারে।
শপথ নিয়ে আমি আমার নতুন কর্মস্থলে যাই। আমি চেয়ারে বসে অনুভব করতে চাই কেমন লাগে। আমার কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ডেবি মেসলো এবং আমি হল অব জাস্টিসে যাই। ‘৮৫০’ নামের একটি ফ্রি ওয়েতে দাঁড়াই। ‘৮৫০’ ছিল একটি ধূসর, একা দাঁড়িয়ে থাকা অসম্পূর্ণ একটি ভবন। আমি কৌতুক করে বলি- আরে এতো কাজ করার জন্য ভয়ঙ্কর রকমের সুন্দর জায়গা। ঐ একই ভবনে শুধু ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসই ছিল না সেখানে আরো ছিল পুলিশ বিভাগের কার্যালয়, অপরাধ আদালত, নগর কার্যালয়, কাউন্টি কারাগার এবং শহরটির করোনারের কার্যালয়। কোনো সন্দেহ নেই এমন একটি স্থানে মানুষের জীবন বদলে যায়। কখনো কখনো সারা জীবনের জন্য।
‘ও, হো’ আমি আমার অফিসটি ঘুরে দেখেছি। আরো ভালো করে বলতে গেলে আমি অফিসের প্রতিটি খালি কক্ষ পর্যবেক্ষণ করি। পরিবর্তনকালীন সময়ের জন্য সবগুলো রুম খালি করে ফেলা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি দেয়ালের উপরে মেটাল ক্যাবিনেট ঠেকানো ছিল। যাতে ছিল আশির দশকের একটি কম্পিউটার। আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই এটি ২০০৪ সাল। অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, আমার অফিসে ই-মেইল পাঠাবার ব্যবস্থা নেই। রুমের এক কোনায় প্লাস্টিকের একটি ময়লার ঝুড়ি ছিল আর মেঝেতে অনেকগুলো তার ছড়িয়েছিল। আমার অফিসের জানালা দিয়ে জামিননামা তৈরির ব্যবসা দেখতে পেতাম। প্রতিদিন এটি দেখে আমার মনে পড়তো এ দেশের বিচার প্রক্রিয়া দরিদ্রের জন্যই বেশি কঠিন। আমার অফিসে কোনো ডেস্ক ছিল না। তবে ডেস্ক রাখার স্থানে কিছু চেয়ার ছিল। যদিও তা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ, আমি জীবনে এতোদূর এসেছি শুধু চেয়ারটির জন্য। প্রথম দিকে আমি কাজ শুরু করি আমার চিন্তাগুলো নিয়ে আমি একাই ছিলাম। পরাবাস্তব সব ভাবনায় আমার সময় চলে যাচ্ছিলো।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে