× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পুরুষশূন্য ৪ গ্রাম / বন ভিলেজারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে
৩ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার

দীর্ঘদিন থেকে এভাবে কৌশলেই চলছে তাদের দখলদারিত্ব। সরকারি বনভূমি দখলে আনতে অভিযানে গেলে সংঘবদ্ধভাবে চালানো হয় হামলা মামলা। মামলায় অধিক সুবিধা নিতে তারা নিজেরাই নিজেদের বাসস্থান, পান ও জুমচাষের ক্ষতি করে মামলা দেয় তাদের প্রতিপক্ষের ওপর। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সহযোগিতাকারী স্থানীয়দের বিরুদ্ধেও দেয়া হয় একাধিক মামলা। আর এভাবে মামলা ও হামলার গ্লানি টানতে টানতে পিছু হটেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সহযোগিতায় আসা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ওই মামলা চলমান থাকায় অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বদলি হন অন্যত্র। তখন বিপাকে পড়েন সরকারি কাজে সহযোগিতাকারী স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান খাসিয়ারা তাদের পক্ষে প্রভাবশালী স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের ঠিক রাখতে দেন নানা উপঢৌকন।
এভাবেই পরিকল্পিত কৌশলে জেলার পাহাড়ি টিলা বেষ্টিত সবক’টি উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে সরকারি ভূমি দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খাসিয়াদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য মতে জেলায় ছোট বড় প্রায় ৯১টি খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। এরমধ্যে কুলাউড়ায় ৩৯টি পুঞ্জি, শ্রীমঙ্গলে ২০, কমলগঞ্জে ১৪, বড়লেখায় ১৩, জুড়ী ৩ ও রাজনগরে ২টি। যেখানে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক খাসিয়া ও গারো। আর তাদের দখলে রেখেছেন বিশাল সরকারি বনভূমি। স্থানীয়দের তথ্যমতে একেকজন দখল করে রেখেছে কমবেশি শ’বিঘা পাহাড়ি জমি। ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী এই দুর্বল পরিচয়ের সুযোগে খাসিয়ারা রাজার হালে তাদের জীবন ও জীবিকা চালালেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বলতে গেলে পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারী খাসিয়াদের অবাধে ঘরবাড়ি আর পান ও জুমচাষের নামে নির্বিচারে গাছপালা নিধন করার কারণে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য। বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অভিযোগ রয়েছে বছরজুড়ে প্রায়ই সীমানাঘেঁষা চা-বাগান মালিক পক্ষ, স্থানীয় বাসিন্দা ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের হামলা মামলার ঘটনা ঘটে। কারণ প্রতিবছরই খাসিয়ারা দখলে নেন নতুন নতুন পাহাড়ি বন এলাকা। এতে বাধা পেয়ে স্থানীয় চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ও সরকারি বনবিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তারা হামলা মামলায় জড়ায়। মামলায় বিজয়ী হতে আশ্রয় নেয় নানা কূটকৌশলের। খাসিয়াদের এমন অভিনব বয়ে চলা কূটকৌশলের নানা বিষয় তুলে ধরে অভিযোগ করেন। তাদের অত্যাচারে চরম দুর্ভোগে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নসহ ওই উপজেলার পাহাড়ি এলাকার অধিকাংশ বনাঞ্চল দখল করে খাসিয়ারা পান চাষের নামে দেশীয় বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির নানা জাতের গাছের জীবনচক্র ধ্বংস করছেন। এমনকি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও তার আশেপাশে পান ও জুমচাষের নামে নির্বিচারে গাছের জীবনচক্র নষ্ট করায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বন্যপ্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল। সম্প্রতি বনবিভাগের সরকারি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে খাসিয়াদের পান কাটার অভিযোগে ১৪ জন বন ভিলেজারসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে মামলার আসামি হতে হয়েছে। আসামি ধরতে র‌্যাব পুলিশ চালাচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানের ভয়ে সন্ধ্যা হলেই ইউনিয়নের ৪ গ্রাম পূরুষশূন্য হয়ে পড়ে। অথচ একই ঘটনায় বনবিভাগের করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ কিংবা র‌্যাবের কোনো ভূমিকা না থাকায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বনবিভাগ ও কর্মধা ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজন জানান ফটিগুলি, নলডরি, কর্মধা ও হোসনাবাদ এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা যারা বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী বা বন ভিলেজার। এসব গ্রামের লোকজন জানান বন বিভাগের সরকারি কাজে তাদের সহযোগিতা করতে হয় বাধ্যতামূলক। সহযোগিতা না করলে উপকারভোগী হিসেবে অনেক সময় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হতে হয়। এসব বন ভিলেজাররা জানান, বন বিভাগকে সহযোগিতা করতে গেলেই খাসিয়াদের করা মিথ্যা মামলায় আসামি হতে হয়। এসব গ্রামের বাসিন্দা বন ভিলেজারদের বিরুদ্ধে ৫-৭টি করে খাসিয়াদের করা মামলা রয়েছে। তাই ওখানে সন্ধ্যা নামে র‌্যাব পুলিশের আতঙ্ক নিয়ে। অজ্ঞাতনামার তালিকায় নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে এই ভয়ে কোনো পুরুষ রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমান না। বন বিভাগ জানায় ২১শে নভেম্বর সহকারী বন সংরক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ বন বিভাগের লোকজন ও উপকারভোগীসহ নুনছড়া মৌজায় তাদের একটি সামাজিক বনায়নের চারা বাগানের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে যেতে চাইলে খাসিয়ারা বাধা দেয়। বন বিভাগের লোকজন খাসিয়াদের বাধা উপেক্ষা করে অগ্রসর হতে চাইলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একনালা বন্দুক, তীর ধনুক, গুলতি ও ধারালো দাসহ বন বিভাগের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে বনপ্রহরী মো. আব্দুল হালীম ও বন ভিলেজার আমির আলী আহত হন। খাসিয়াদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে বন বিভাগের লোকজন ফিরে আসেন। আহতদের কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এ ঘটনায় নলডরি বিটের বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার কুলাউড়া থানায় ৬ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান খাসিয়াদের হামলার ঘটনায় রাতে তিনি মামলা করেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু খাসিয়ারা ঘটনার দু’দিন পর ২৩শে নভেম্বর থানায় গিয়ে পান কাটার অভিযোগে নিরীহ বন ভিলেজারদের বিরুদ্ধে মামলা (নং ২৫৪, তারিখ ২৩/১১/২০) করে। পুলিশ সেই মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করেছে। যেখানে ১৭ জনের নাম এবং আরো অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করেছে। খাসিয়াদের হামলার শিকার হয়ে আমরা ফিরে আসলাম। এ সময় পান গাছ কাটার কোনো ঘটনা ঘটেনি। খাসিয়ারা নিজেরা পান গাছ কেটে মিথ্যা মামলা করেছে।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল হক গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এভাবে খাসিয়ারা মামলা দিলে পাহাড় রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বন ভিাগের মামলায় তো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয় না রহস্যজনক কারণে। অথচ খাসিয়াদের মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় নিরীহ বন ভিলেজাররা এমনকি সাধারণ মানুষও নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারে না। রাষ্ট্রীয় কাজে গিয়ে যদি মানুষ মামলা হামলার শিকার হয় তাহলে কেউ আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসবে না। তাছাড়া বন বিভাগের দায়িত্ব পালনে যারাই কুলাউড়া আসে তারা বেশিদিন এখানে টিকতে পারে না। কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভুষণ রায় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি আলোচনা করে একটা শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবো। এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতাকারীদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাছাড়া উভয়পক্ষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর