× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেখ ফজলুল হক মনি যুব রাজনীতির স্বপ্নদ্রষ্টা

অনলাইন

এ্যাডভোকেট শেখ নবীরুজ্জামান বাবু
(৩ বছর আগে) ডিসেম্বর ৪, ২০২০, শুক্রবার, ৪:০৯ অপরাহ্ন

শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাংবাদিক, কলাম লেখক, ছোট গল্পকার, তাত্ত্বিক দার্শনিক ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দ্রষ্টা।

বঙ্গবন্ধুর মেজ বোন শেখ আছিয়া বেগম (শেখ মনির মা) স্বামীর চাকরিসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। বঙ্গবন্ধু কলকাতায় থাকা কালীন সময়ে অধিকাংশ সময় এই বোনের বাড়িতে থাকতেন।
কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর অভিভাবক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই আছিয়া বেগম এবং তাঁর স্বামী।

শেখ মনি’কে বঙ্গবন্ধু বোনের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন। বোনকে তিনি বলেছিলেন – “বুঁজি তোমার মনিকে আমারে দাও, ও রাজনীতি করুক।”

মাত্র ৩৫ বছর বয়সের ক্ষণজন্মা শেখ মনি ছিলেন- মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান, দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, কবি ও ছোট গল্পকার।

১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বোন – শেখ ফজলুল হক মনির মা রাত বারোটা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। গল্প করেছেন ভাই ও ভাই পত্নীর সাথে। একান্তে সময় দিয়েছেন নিষ্পাপ রাসেলসহ সবার সাথে।

শেখ আছিয়া বেগম জানতেন না সেই রাতে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, ছোট ভাই শেখ নাসের, ছেলে, ছেলের বউ, ভাতিজাদের হারাবেন।

শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি ও শহীদ আরজু মনির দুই ছেলে অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস হৃদয়বিদারক ১৫ আগস্টের কালো রাত স্বচক্ষে দেখেছেন।
বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো প্রতিদিন মৃত্যুর কবলে পড়ে আবার বেঁচেছেন।
ইতিহাসের জঘন্য সেই হত্যাকাণ্ড গা শিউরে উঠা ঘটনা শেখ পরশের জবানীতে –
“খুব ভোরে প্রচণ্ড ভাঙচুরের আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি মা নেই পাশে। বিছানায় শুধু আমরা দুই ভাই। জানালা দিয়ে ঝড়ের মতো গোলাগুলি হচ্ছে।
গুলিগুলো দেয়াল ফুটো করে মেঝেতে আছড়ে পড়ছে। সিঁড়িঘরে অনেক কান্নাকাটির আওয়াজ, হৈচৈ।
আমরা দুই ভাই ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়িঘরের দিকে গিয়ে দেখি বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়া। মা’র পা দুটো বাবার বুকের ওপর আড়াআড়ি রাখা। দাদির শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটোপুটি যাছে, আর দাদি পাগলের মতো প্রলাপ বকছেন; দেয়ালে কপাল ঠুকছেন।"

উল্লেখ্য, শেখ মনির বেঁচে যাওয়া দুই ছেলে, শেখ ফজলে শামস পরশ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর চেয়ারম্যান ও শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।

শোকাবহ ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, “অন্যদের বাবা-মায়ের কত স্মৃতি। আমারও তো ইচ্ছে করে অন্যদের মতো বাবা-মায়ের স্মৃতিচারণ করতে।”

শেখ তাপস আরো বলেন – ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫
তখনও আমার বয়স চার বছর পূর্ণ হয়নি’!

সারাদিন মা-এর সাথে লেগে থাকতাম। তাঁর পিছনে পিছনে। একটু চোখের আড়াল হতে দিতাম না। মা বাথরুমে গেলেও বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম, আর দরজা ধাক্কাতাম কখন মা বেরিয়ে আসবে.."

শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সব থেকে প্রিয় রাজনৈতিক শিষ্য। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিলো সরাসরি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় পরিচালিত। বঙ্গবন্ধু তাঁকে ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ও শেখ মনির সম্পর্ক শুধু রক্তের বন্ধন দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। সেই সম্পর্ক ছিল অন্তরাত্মার।
ঘাতকরা জানত বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করতে হলে শেখ মনিকে আগে আঘাত করতে হবে।

বাংলাদেশের পললভূমিতে 'ম্যাকিয়াভেলিয়ান প্রিন্স' শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৩৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ নূরুল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নীপতি, মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর মেজ বোন।

ছাত্র অবস্থাতেই শেখ মনি মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তিনি ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৬০ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে ড. আলীম আল রাজী কলেজ থেকে তিনি আইনের উপর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাশ করেন।

মামা বঙ্গবন্ধু ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা, যুবনেতা ও আওয়ামী লীগ নেতা। তাই ছোটবেলা থেকেই শেখ মনির আদর্শ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। শেখ মনি বঙ্গবন্ধুকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাঁর চোখের ভাষা সহজেই বুঝতে পারতেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই শেখ মনি রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এ কারণেই ভাগ্নেকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন।

৬০ এর দশকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি শুরু করেন শেখ মনি। তখন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের কারণে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। আইয়ুব - মোনায়েম খান তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে অন্যতম বড় শত্রু বিবেচনা করতেন।

শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন মেধাবী ও সাহসী। সেই সময়ের বক্র রাজনীতির মধ্যেও তিনি আইয়ুব খানের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ভাগ্নে হিসাবে নয়, ষাটের দশকের গোড়া থেকেই শেখ ফজলুল হক মনি নিজের মেধা ও অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে দেশের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাভোগ করেন।

উত্তাল সেই আন্দোলন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্মৃতি কথায় বলেন, "মনে পড়ে ১৯৬২ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। মনি ভাই এই বাড়ি থেকে নির্দেশ নিয়ে যেতেন, পরামর্শ নিতেন। ১৯৬২ সালে আব্বা গ্রেফতার হন। তখনকার কথা মনে পড়ে খুব।"

ষাটের দশকের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি আন্দোলনে শেখ মনি ভূমিকা রেখেছেন। মোনায়েম খানের হাত থেকে সার্টিফিকেট না নেয়ার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের নিকট থেকে সনদপত্র গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং সরকারের গণবিরোধী শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সমাবর্তন বর্জন আন্দোলন শুরু করেন।
যারা মোনায়েমের হাত থেকে উপাধিপত্র নেয়ার জন্য সভাস্থলে হাজির হয়েছিলেন, তারা উল্টো শেখ মনির নেতৃত্বে সভাস্থল বয়কট করেন এবং মোনায়েম খানকে  প্রকাশ্যে বর্জন করেন; উপাধিপত্র না নিয়েই তারা ফিরে যান। এই আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারণ করে। প্রবল ছাত্র বিক্ষোভে সমাবর্তন পণ্ড হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ সরকার প্রতিশোধ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্রকে গ্রেফতার করে। প্রায় দেড়শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে মোনায়েম খান ক্ষমতার দম্ভ দেখান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি মামলায় সুপ্রীম কোর্টের রায়ে জয়লাভ করে ডিগ্রি ফিরে পান।

১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং দেড় বছর কারাভোগ করেন।

শেখ মনির রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় কৃতিত্ব ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফার পক্ষে হরতাল সফল করে তোলা।
১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং মোনায়েম খান শেখ মনিকে কারারুদ্ধ করেন। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আটটি মামলা দায়ের করা হয়।
 তিনি মুক্তি পান ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শেখ ফজলুল হক মনির উদ্যোগে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়। মুজিব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত একটি মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়। প্রায় পাঁচ হাজার সদস্যের এ বাহিনীকে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং এর নেতৃত্বে ছিল ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমান্ড। শেখ ফজলুল হক মনি মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুজিব বাহিনী গঠনের পাশাপাশি শেখ মনি প্রকাশ করেন 'বাংলার বাণী' পত্রিকা। এ পত্রিকায় তিনি নিজে লিখতেন। থাকত রণাঙ্গণের খবর।

 বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মনি চেয়েছিলেন স্বতন্ত্র একটি জগৎ গড়ে তুলতে। মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল যেন নিজস্বতা হারিয়ে না বসে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক বাংলার বাণী, বাংলাদেশ টাইমস এবং বিনোদন পত্রিকা সাপ্তাহিক সিনেমার সম্পাদক ছিলেন তিনি। বাংলার বাণী যেমন মুক্তিযুদ্ধের মুখপাত্র হয়ে উঠেছিল। আবার তাঁর প্রতিষ্ঠিত সুস্থ বিনোদন ধর্মী সাপ্তাহিক 'সিনেমা' পত্রিকা বাঙালি সংস্কৃতির পরিশীলিত বুনিয়াদ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছিল।

শেখ মনি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠন করতে চেয়েছিলেন। শিশু কিশোরদের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে গড়ে তুলেন শাপলা কুঁড়ির আসরের মত প্রতিষ্ঠান।

শেখ মনি রচিত বেশ কিছু রাজনৈতিক উপন্যাস পাঠক সমাজে-সমৃদত হয়েছে। একটি উপন্যাস অবলম্বনে ‘অবাঞ্ছিতা’ নামে একটি জনপ্রিয় টেলিফিল্মও তৈরী হয়েছে। এছাড়া "গীতারায়" নামে গল্পগ্রন্থ বেশ জনপ্রিয় ছিল ।

শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অস্থির যুবসমাজকে সৃজনশীল খাতে প্রবাহিত করতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শােষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমােচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তােলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুশৃংখল সংগঠন গড়ে তােলাই ছিল যুবলীগের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য।
একাত্তর পূর্ববর্তী আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর এক নম্বর সিপাহসালার। তেমনি একাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শোষণহীন সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে 'বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ'ও ফ্রন্ট ফাইটারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী যুব সমাজকে সৃজনশীল ও আদর্শ দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে।

বঙ্গবন্ধুকে, তাঁর দলকে দুর্বল করে ফেলতে হলে শেখ ফজলুল হক মনিকে দুর্বল করে ফেলতে হবে, এটি চক্রান্তকারীদের বুঝতে সমস্যা হয় নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিনেই শেখ ফজলুল হক মনিকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তার কারণ সহজেই বোধগম্য। খুনি চক্র জানত - প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপযুক্ত ব্যক্তি কে কে হতে পারে। শেখ ফজলুল হক মনির নামটি ছিল তাদের তালিকার একাবারে উপরের দিকে।

শেখ ফজলুল হক মনির শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা শেষে বাস্তবে রূপ নিল। কোনো নিরাপত্তা দিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ মনিকে ধরে রাখতে পারিনি।  ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর স্ত্রী বেগম আরজু মণি (বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নি) শাহাদাৎ বরণ করেন।

শেখ ফজলুল হক মনির রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন ছিল দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বারবারা বিডলার খ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, "সেই একটা সময় ছিল, ত্যাগ-ব্রতের রাজনীতি তাদের ঘিরে যারা জড়ো হতেন তাদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেম ছিল। রাজনীতি চর্চার জন্য শিক্ষা ও আদর্শ ছিল, চরিত্রে সংহতি ছিল। তারা দেশের মানুষকে ভোটার বা রাজনীতিকে ক্ষমতার সিঁড়িই শুধু ভাবতেন না, বড় করে দেখতেন। আমাদের মনি সাহেব ছিলেন এই দলের মানুষ। মনি ভাইকে আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।" শেখ মনির রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তার দূরদর্শিতা যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলেই তাকে স্মরণ করা সার্থক হবে।

লেখকঃ এ্যাডভোকেট শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর