একটি দুর্ঘটনা ঝরনা রানীর সারা জীবনে কান্না হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামী, একমাত্র ছেলে, ছেলের বৌ, ছোট্ট নাতিন, শাশুড়ি এবং দেবরসহ পরিবারের ৬ জনকে হারিয়ে নির্বাক। আপন বলতে আর কেউ রইলো না। স্বামী, সন্তানসহ স্বজন হারানোর শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি। শুক্রবার বিকালে সড়ক দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে তার সাজানো গোছানো সংসার। একাকী জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে ঝরনা রানীর। দৌলতপুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালের আঙ্গিনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬টি লাশের সারি শুক্রবার রাত পর্যন্ত রাখা হয়। লাশের এই মিছিলের পাশেই বসে থাকতে দেখা যায় ঝরনা রানীকে। কখনো বুক চাপড়ানো কান্না আবার কখনো নির্বাক হয়ে প্রিয়জনদের নিথর দেহের দিকে স্বজনদের শুধু তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে।
অভাবের সংসারে একমাত্র স্বামী হরেকৃষ্ণ এবং ছেলে গোবিন্দর আয় রোজগারেই দু’বেলা দু’মুঠো ভাত পেটে পড়তো ঝরনা রানীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। কিন্তু এখন কি হবে, কে তার মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেবেন? দুর্ঘটনায় ছেলের বৌ ববিতা, তিন বছরের নাতিন রাধে, শাশুড়ি খুকিবালা ও দেবর রাম প্রসাদও একই সঙ্গে না ফেরার দেশে চলে গেছে। স্বজন হারানোর শোকে ঝরনা রানীকে দেখা যায় কখনো নির্বাক আবার কখনো চিৎকার করে কাঁদতে। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাটুকু কারো ছিল না। বিকাল থেকে রাত অবধি দৌলতপুর সরকারি হাসপাতালে কান্নার রোল পড়ে যায়। এক সঙ্গে একই পরিবারের এতোগুলো প্রাণ চলে যাওয়ায় পাড়া-প্রতিবেশীরা হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঝরনা রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচুম। কে আমাকে দেখবে। ভগবান তুমি আমাকে নিয়্যা গেলা ক্যান। এমন আর্তনাদ আর আহাজারিতে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভারি হয়ে উঠে হাসপাতাল চত্বর। শুধু কান্না নয় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঝরনা রানীর সারা জীবনের কান্না হয়ে রইলো। প্রতিবেশী আতাউর মণ্ডল বলেন, পরিবারের ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমাদের গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একমাত্র ঝরনা রানী ছাড়া কেউ আর জীবিত রইলো না। নিঃস্ব হয়ে গেল ঝরনা রানী। তাকে দেখভাল করার মতো কেউ নেই। কীভাবে চলবে এই অসহায় নারীর সংসার তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।
উল্লেখ্য, ঝরনা রানীর একমাত্র ছেলের ঘরের ৩ বছরের নাতিন রাধে গেল কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার বিকালে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল পরিবারের ৬ সদস্য। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চাষা ভাদ্রা থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে দৌলতপুর উপজেলার মুলকান্দি এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা চলন্ত বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে পরিবারের ৬ জন ও চালকসহ ৭ জন মারা যান।