× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ম্যারাডোনার আত্মজীবনী

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
৭ ডিসেম্বর ২০২০, সোমবার

লাতিন আমেরিকার স্পেনিশভাষী দেশ আর্জেন্টিনার ম্যারাডু নামের ছেলেটি যে একদিন বিশ্বফুটবলের সমার্থক হবেন এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার পেলে-এর সমানে সমানে টক্কর দেবেন, তা কেউ ভাবতে পারেনি। কেউ অনুমানও করেনি, জনপ্রিয়তার পাহাড় থেকে এই তারকা নিপতিত হবেন বিতর্কের খাদে।

তার মৃত্যুতে পৃথিবীময় শোকের আবহ ছিল অবিস্মরণীয়। শুধু ফুটবল প্রেমিক মানুষই নন, পুরো বিশ্ববাসীকে শোকের চাদরে ঢেকে দিয়েছিল ডিয়াগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার মৃত্যু।

নিজের আত্মজীবনীতে এক তরুণ ফুটবলারের বিশ্বতারকা হওয়ার ইতিবৃত্ত বর্ণিত হয়েছে। 'বর্ষা দুপুর' প্রকাশনী থেকে শেখ রানার অনুবাদে প্রকাশ পেয়েছে সেসব চাঞ্চল্যকর কাহিনী। করোনাকালে অনলাইন বুকমার্কেট 'রকমারি'র মাধ্যমে হাতে পাওয়া বইটি পড়ে এক ফুটবল অন্তঃপ্রাণের সংগ্রামশীল জীবনের রোমাঞ্চকর আখ্যান আর ম্যারাডোনায় পরিণত হওয়ার বৃত্তান্ত জানা যায়।

পড়তে পড়তে স্মৃতি চলে যায় বহু বছর পেছনে।  ম্যারাডু...ম্যারাডু... চিৎকার ভেসে আসছে গ্যালারি থেকে। বল নিয়ে কিপি-আপি করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট ছেলেটি।
আর্জেন্টিনায় ফুটবল নিয়ে যারা খোঁজ-খবর রাখেন, সবার চোখ তখন ফাইওরিটোর এক চিলতে বাসার সেই ম্যারাডুর উপর। সে ছেলেটির একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান ফুটবল। আর কিছুই তার চাই না, শুধু খেলতে পারলেই তার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।

অনেক পরিশ্রম, ত্যাগ-তিতিক্ষা-উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে সেই ম্যারাডু হয়ে ওঠেন বিশ্ব ফুটবলের এক নম্বর তারকা ডিয়াগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। তারপর ১৯৮৬ এর ফিফা ট্রফি হাতে হাসিমুখের ম্যারাডোনার ছবি তো বিশ্ববাসীর চিরচেনা।

এভাবেই বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে আর্বিভূত হয়  এক বর্ণিল ফুটবল নায়কের। সেবোলিতোস, বোকা জুনিয়র্স হয়ে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের অধিনায়কত্বে কিংবা বার্সিলোনার সেই ঝড়-ঝঞ্ঝার দিন অথবা খেটে খাওয়া মানুষের দল ইটালির নেপোলিতে গিয়ে গড়া ইতিহাস তখন তার হাতের মুঠোয়।

ম্যারাডোনার জীবনের গল্প একইসাথে আনন্দের, বেদনার। উত্থান-পতনের সমার্থক পথ তাকে নিয়ে চলেছে সারাটা জীবন। অথবা এভাবেও বলা যায়, ম্যারাডোনার নিজের জীবনের গল্প মানে শুধুই ফুটবল। আর কিছু না!

নিজের আত্মজীবনীর বিভিন্ন ভাগ ম্যারাডোনার জীবন উঠে এসেছে সময় আর ক্যালেন্ডার ধরে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, আর্জেন্টিনার একটা প্রীতি ম্যাচে অংশ নিলেও ম্যারাডোনা তা ডায়েরিতে টুকে রাখতেন। এ কারণেই আত্মজীবনীতে একদম তারিখ, সন ধরে উঠে এসেছে বিভিন্ন ঘটনার সমাহার।

বর্ণিত হয়েছে কোচ কার্লোস বিলার্দোর সাথে বন্ধুত্ব বা শেষদিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া অথবা ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেই অনাকাঙ্খিত ড্রাগ কেলেঙ্কারি। ফিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আর নির্বাসনের বিষাদ।

এক কথায় ম্যারাডোনা হলেন ফুটবল বিশ্বের সেই ক্ষ্যাপাটে চরিত্র, যার পুরো জীবনটাই একটা ফিকশন, গল্প। পরী, বৃষ্টি পড়ে, মার ঘুরিয়ে ইত্যাদি অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার, লেখক শেখ রানা প্রথমবারের মত বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন ফুটবল ইতিহাসের বিতর্কিত এক মহানায়কের আত্মজীবনীর অনুবাদ, যাতে ম্যারাডোনার নিজের ভাষ্যে উপস্থাপিত হয়েছে বহু স্মরণীয় কিংবা বিতর্কিত ঘটনার আদ্যোপান্ত।

ম্যারাডোনা জানাচ্ছেন, 'চাতক পাখির মত আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। একদৃষ্টিতে। সেই পরম কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের জন্য। হ্যা, ছোটখাট গড়নের ব্রাজিলিয়ান রেফারি আরপি ফিলহোর কথাই বলছি। হাত উপরে তুলে হুইসেল বাজিয়ে খেলা শেষ হবার সংকেত দেয়ার সাথে সাথে আমি পাগল হয়ে গেলাম, স্রেফ পাগল হয়ে গেলাম। এদিক-ওদিক দৌঁড়াতে শুরু করলাম। যাকে পাচ্ছিলাম তাকেই জড়িয়ে ধরছিলাম। শরীরে, মনে, আত্মায় ক্যারিয়ারের এই শ্রেষ্ঠতম সময়টাকে আমি অনুভব করছিলাম। ২৯ জুন ১৯৮৬, আজটেক স্টেডিয়াম, মেক্সিকো। এই তারিখ আর স্থান, আমার মনে ও মননে সারাজীবনের জন্য গেঁথে গেছে।'

বিশ্বকাপ হাতে নেয়ার সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তের কথাও আছে, 'আমার এখনও মনে আছে, আমি কাঁপছিলাম কাপ হাতে নিয়ে। একবার উপরে উঠাচ্ছিলাম, আর একবার চুমু খাচ্ছিলাম, ঐ মুহূর্তে কী কী যে করছিলাম! কিছুক্ষণের জন্য আমাদের গোলরক্ষক নেরি পাম্পিদোকে কাপ ধরতে দিয়ে পরক্ষনেই ফেরত দিতে বলেছিলাম ওকে। হা হা হা! আসলে আমি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম- এই মুহূর্তটা সত্য, স্বপ্ন নয়। আমাদের হাতে বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ এখন আর্জেন্টিনার।'

ফুটবল, বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনার সঙ্গে একাকার মিশে আছে ম্যারাডোনার সমস্ত সত্ত্বা। তার জীবনের যত প্রেম, আনন্দ আর প্রাপ্তির মতো যাবতীয় বেদনা, হাহাকার ও যন্ত্রণাও একমাত্র ফুটবলকে ঘিরে। আত্মজীবনীর পাতায় পাতায় যেসব লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন স্বয়ং ম্যারাডোনা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর