× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার , ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হ্যারি বলে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মানে রাজা

প্রথম পাতা

তারিক চয়ন
২০ ডিসেম্বর ২০২০, রবিবার

জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের বছরখানেক হয়েছে। এমন এক সময়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস (২০০৬ সালের ১৩ই এপ্রিল)। মাত্র ১৪ মাস বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর মধ্যেই ঘটে যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে দেয়া ঘটনা ওয়ান ইলেভেন (২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি)। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সে সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বিউটেনিস। ২০১৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি নিজ কর্মজীবনে প্রত্যক্ষ করা নানা ঘটনা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন যুক্তরাষ্ট্রের এসোসিয়েশন ফর ডিপ্লোম্যাটিক স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের ফরেন অ্যাফেয়ার্স ওরাল হিস্টরি প্রোগ্রামকে। চার্লস স্টুয়ার্ট  কেনেডিকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারটি সমপ্রতি প্রকাশিত হয়েছে। মানবজমিনের পাঠকদের জন্য দীর্ঘ ওই সাক্ষাৎকারে উঠে আসা বাংলাদেশের অংশগুলো ধারাবাহিকভাবে ছাপানো হবে।
আজ থাকছে প্রথম কিস্তি-

‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের খবর  পেয়ে ওয়াশিংটন গেলে হ্যারি টমাসের (বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) সঙ্গে আমার কথা হয়। আমার ঠিক মনে আছে হ্যারি আমাকে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তার ভালো লাগছে না। হ্যারির ভাষায় ‘বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মানে রাজা।’ আমি বুঝতে পারলাম হ্যারি কি  বোঝাতে চাইছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো প্রভাব রয়েছে অথবা অন্তত বেশির ভাগ বাংলাদেশিই সেটা মনে করে। সেখানে রাজনীতিবিদরাও সর্বদা তর্ক করার সময় যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পক্ষে দেখানোর চেষ্টা করেন। এটা খানিকটা বিব্রতকরই বটে।
আমাকেও প্রায়ই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে বলা হতো, ‘দয়া করে প্রধানমন্ত্রীকে এটা  বলেন’ বা ‘দয়া করে বিরোধী দলকে ওটা জানান’।

তাই আমি সেখানে একটা তৃতীয় শক্তির অভাব অনুভব করি, নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সংলাপকে সহজ করতে। তবে আমি মনে করতাম সরাসরি দু’পক্ষের মাঝে সংলাপটাই সবচেয়ে ভালো।
বাংলাদেশে আমার সংক্ষিপ্ত সফরের (মাত্র ১৪ মাস) শেষের দিকে যখন আমি হ্যারির ভাষায় রানীর মতো জীবনযাপন করছিলাম- একটি পত্রিকা “বাংলাদেশের চার রানী’’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই চার রানী হলেন- প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা, ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এবং আমি। যেনো বাংলাদেশে যা কিছু ঘটে সে সবকিছুই আমরা ঘটাই! যদিও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এসব রিপোর্ট খুব পাকা রাজনীতিবিদের মতো, উল্টাপাল্টা ছাপায়। সঠিক খবর পাওয়া মুশকিল। সম্ভবত কেউই এসব খবরের উপর আস্থা রাখেনি। কখনও কখনও অনেকে ‘এটার উপর বিশ্বাস রাখুন’ বলে আশা করে আপনি  সেটা প্রচার করবেন।

একথা আমাকে বলতেই হবে যে, বাংলাদেশে কাটানো সময়টা ছিল বেশ মজার। আমি বাংলাদেশের জনগণের খুব প্রশংসা করি, যদিও রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে সেটা করতে পারি না। আমার মতো সম্ভবত সেখানে কাজ করা অন্য অনেক রাষ্ট্রদূতও মনে করেন যে, আমরা বাংলাদেশের ততোটা প্রশংসা করি না, যতোটা করা উচিত ছিল। সে সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি। তাদের আমি ১৫ কোটি মুসলমান বলতাম যারা মূলত আমাদের পছন্দ করতো, আমাদের মিত্র হতে চেয়েছিল;  যদিও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং বিশ্বাস নিয়ে ন্যায়সঙ্গতভাবেই তারা গর্বিত ছিল। একই সঙ্গে আমরা সেখানে ইসলামী চরমপন্থার লক্ষণ দেখতে পেলাম।

আমি যখন বাংলাদেশে যাচ্ছি তখন সেখানে শান্তি রক্ষায় কর্মরত ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে সরে আসছিল। কারণ তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের কমপক্ষে একজনকে চরমপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কেউ হুমকি দিয়েছিল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ভারত থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য লড়াইরত জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করে আসছিল। জায়গাটা বাংলাদেশ ঘিরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। সুতরাং উগ্রবাদী তৎপরতা বাংলাদেশে ছিল তবে আমার সময়টায় সেটা মাথাচাড়া দেয়নি। ভারত যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কিন্তু বাংলাদেশেও আমাদের আগ্রহ ছিল। আমাদের সেখানে ব্যাপক সহায়তা কার্যক্রম ছিল এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই আমরা ঢাকার দিকেও মনোযোগ রাখছিলাম।

আমার শুনানিটা খুব সোজাসাপ্টা ছিল। আমরা তখন বাংলাদেশকে এমন একটি দেশ হিসেবে ভাবতাম যা সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষত নারী স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যু ইত্যাদিতে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছিল। সত্যিকার অর্থে বিতর্কিত কিছুই সেখানে ছিল না। বাংলাদেশের চিরন্তন ইস্যু একটাই যা অদ্যাবধি বিরাজমান, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান দুই নারী আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) খালেদা জিয়ার মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর এবং খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যার পর রাজনীতিতে আসেন। তারা একজনের পর আরেকজন প্রধানমন্ত্রী হন, উভয় প্রশাসনেই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা খুব কম ছিল। তারা ‘লড়াইরত  বেগম’ হিসেবে পরিচিত, উচ্চ সামাজিক মর্যাদার নারীদের জন্য  ‘বেগম’ দক্ষিণ এশিয়ায় উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আমার সময়ে আমাদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ছিল- নির্বাচনী প্রচারণা এবং ভোটদানের সময় বাড়তে থাকা সহিংসতা। প্রত্যেক দলেরই নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল যাদের তারা ‘পেশী শক্তি’ বলে সম্বোধন করতো। নিজ দলের বিরোধীদের আক্রমণ করা লোকজনকে ভয়  দেখানো, জোর করে সমর্থন আদায় করা এসবই ছিল তাদের কাজ। সুতরাং আমার যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার পেছনেই উদ্দেশ্য থাকতো উভয় পক্ষকে এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ  থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো এবং ২০০৭ সালে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথাই বলেছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর