দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচরে গেল ৪২৮ পরিবারের এক হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে চড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৯টায় পতেঙ্গা বোট ক্লাব ঘাট ও কোস্টগার্ড ঘাটে নৌবাহিনীর জাহাজে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটি হচ্ছে ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্বিতীয় দল গত সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর ঘাঁটির অদূরে বেইজ ক্যাম্পে এসে পৌঁছায়। সেখানে তাদের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ধাপে ধাপে কঙবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে বাসে চড়ে চট্টগ্রামে আসে তারা।
এ সময় বাসের সামনে-পেছনে পুলিশের গাড়ি ও এম্বুলেন্স ছিল। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হওয়ায় এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মসিউদ্দৌলা রেজা।
তিনি জানান, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ক্যাম্প থেকেও ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। উখিয়ার কুতুপালং-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকে যাচ্ছে অনেকগুলো রোহিঙ্গা পরিবার। উখিয়ার কুতুপালং-৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে ২৭ পরিবার যাচ্ছে। কুতুপালং-২ ডব্লিউ থেকে যাচ্ছে ২৪ পরিবার। সবমিলিয়ে এবার ৪২৮ পরিবারের এক হাজার ৮০৫ শরণার্থী ভাসানচরে গেল।
চট্টগ্রামে পৌঁছার পর সোমবার বিকালে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। শরণার্থীদের ভাষ্য, গত ৪ঠা ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা শরণার্থী ভাসানচরে গেছেন। তারও আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে সমুদ্র উপকূলে আটক আরো তিন শতাধিক রোহিঙ্গা সেখানে রয়েছে। যাদের অনেকেই আত্মীয়স্বজন। তাদের কাছে ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধার খবর শুনেই সেখানে যেতে রাজি হয়েছেন তারা।
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (ইস্ট) মাঝি বলেন, আমার ব্লক থেকে কয়েকটি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে। তাদের কাউকে জোর করা হয়নি। একই ক্যাম্পের সাবেক মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, এ ক্যাম্প থেকে আবদুস সালাম ও আবুল হাশেম মাঝির পরিবারসহ বেশকিছু পরিবার নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে। প্রথম দফায় যারা গেছেন, তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধার খবর জেনেই নতুন করে অনেকেই যেতে আগ্রহী হয়েছেন।
মাঝিদের মতে, আগে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে অনেক বোঝাতে হয়েছে। কিন্তু ২০ দিনের মধ্যে চিত্র পাল্টেছে। এবার রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ফলে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে রোববার বিকাল থেকে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে জমা হতে থাকে। গত সোমবার সকালেও অনেকে এসে যোগ দিয়েছেন। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় তারা বাসে চড়ে চট্টগ্রামে আসেন।