× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আসকের প্রতিবেদন / এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যা ১৮৮

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
১ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার

আগের বছরগুলোর মতোই ২০২০ সালেও মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এক বছরে দেশে ১৮৮টি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২০-এর পর্যালোচনায় এ তথ্য জানায় আসক। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিষয়ে আসকের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। করোনা মহামারির মধ্যেও নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র ছিল ২০২০-এর অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। বছরজুড়ে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যাসহ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতন, মৃত্যু নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটির প্রশ্ন ও উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশ সরকার কখনো এগুলো অস্বীকার করেছে আবার কখনো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
ক্রসফায়ার ও মাদকবিরোধী অভিযানে ১৮৮ জন নিহতের ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে (গ্রেপ্তারের পর) নিহত হয়েছেন ১১ জন। গ্রেপ্তারের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে মারা যান ৫ জন এবং গুলিতে নিহত হয়েছেন ৮ জন। ২০২০ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও নিখোঁজের শিকার হন ৬ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ২ জন। তাদের মধ্যে গত ১০ই মার্চ ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সরকারদলীয় এমপি সাইফুজ্জামান শেখর। পরদিন ১১ই মার্চ ঢাকার হাতিরপুল এলাকা থেকে ‘নিখোঁজ’ হন শফিকুল ইসলাম কাজল। ‘নিখোঁজের’ ৫৩ দিন পর ৩রা মে গভীর রাতে যশোরের বেনাপোল সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ সংলগ্ন এলাকা থেকে কাজলকে উদ্ধারের দাবি করে বিজিবি। পরবর্তী সময়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫শে ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান কাজল। করোনা মহামারির সময়ও থেমে থাকেনি নারীর প্রতি সহিংসতা। এ সময়কালে নারী নির্যাতন, বিশেষ করে ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে। ২০২০ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬২৭ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১৪১৩ নারী এবং ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২। ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ১৬০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় আসক। এছাড়াও ২০২০ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ২০১ নারী। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী ও ১১ পুরুষসহ খুন হয়েছেন ১৪ জন। ২০২০ সালে পারিবারিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন ৩৬৭ নারী। নির্যাতনের শিকার ৯০ জন আত্মহত্যা করেছেন। যেখানে গত বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৪২৩ নারী। এছাড়াও যৌতুকের জন্য, সালিশের মাধ্যমে নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। ২০২০ সালে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে ৫৮৯ শিশু নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৮৮। ২০২০ সালে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ১৭১৮ শিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ১০১৮ শিশু, ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ২৭৯ শিশু। ২০২০ সালে বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৫২ ছেলে শিশু, বলাৎকারের পর ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় আসক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্রে আসক জানায়, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১২৯টি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় ২৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসক জানিয়েছে, করোনাকালেও স্বাধীনভাবে খবর সংগ্রহ এবং তা প্রকাশের কারণে নির্যাতন, মামলা ও গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা শারীরিক নির্যাতন, হামলা, মামলা, হুমকি ও হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৪৭ সাংবাদিক। তার মধ্যে ২ জন হত্যার শিকার হয়েছেন।
করোনা সংকটকালীন সময়ে শ্রমিকদের চাকরি হারানো, বেতন না পাওয়াসহ নানা বঞ্চনার ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ের মধ্যে গার্মেন্টশিল্পের ৬০ থেকে ৬৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন এবং ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত হত্যা, করোনাকালে দেশে ফেরা অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানি, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, নির্যাতন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও উদ্বেগ জানায় সংস্থাটি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর